আখতার ফেরদৌস রানাঃ মাঠটা চোখে পড়তেই আমার আনন্দ দেখে মাহতাব বললো, ঘাসে চল! গরুকে রাখাল যে ভাবে বলে। আমি ছোটবেলা নানীবাড়ি গেলে রাখালদের সাথে গরু চরাতে যেতাম। এ বাড়ি ও বাড়ি মিলিয়ে অনেকগুলো গরু। আর বেশ কজন রাখাল। বেশির ভাগই শিশু। দু একজন কিশোর। ওদের ভেতর একজন গান ধরতো যাত্রা পালার,কোন বনে বসে কালা বাঁশরি বাজায় ... গরুর পাল নিয়ে ওরা চলে যেত দূরদূরান্তে। আমার ভালো লাগতো রেললাইনের ধারটা। পোড়াদহের দিকে রেল লাইনটা যেতে যেতে যেতে মিশে গেছে আকাশে। ডিসট্যান্ট সিগনালের বাতিটা চোখ লাল করে হাত নিচু করলে ট্রেন আসতো,যেতো। তখন কয়লার ইন্জিন ছিল। ডিজেল ইন্জিন কম। আমার ভালো লাগতো কয়লা। রাখালরা ট্রেন আসতে দেখলে গরু রেখে দৌড়ে চলে আসতো লাইনের কাছে। আমি দূরেই থাকতাম। ওরা পল্টনের সিপাহির মতো লাইন ধরে দাঁড়িয়ে স্যালুট করতো। কয়লার গুঁড়োমাখা ভুতের মতো ইন্জিন ড্রাইভার স্যালুট নিতেন কপালে হাত তুলে। তারপর তাঁর মাথার কাছে দড়ির মতো ঝোলানো তার টেনে হুইসেল দিতেন,তারপর ভসভস করে একগাদা বাষ্প ছাড়তেন ইঞ্জিনের তলা দিয়ে। সেই বাষ্পের মেঘে ঢাকা পড়তো রাখালেরা। ট্রেন চলে যাওয়ার পর ওরা বাষ্পের মেঘ ছেড়ে বেরিয়ে আসতো খিলখিল করে হাসতে হাসতে। আমাকে দূরে দাঁড়িয়ে ছুটে চলা ট্রেনের দিকে হাত নাড়তে দেখে সবাই আর একদফা হেসে উঠতো অকারণে। বাতাসে ভেসেআসা কয়লার গুড়ো চোখে পড়ার ভয়ে আমি দূরে থাকতাম। ডিসট্যান্ট সিগনালের বাতি যখন সবুজ হতো, তার লম্বা হাত সোজা করতো, আমি তখন কাছে যেতাম। রেললাইনে কান পেতে হারিয়ে যাওয়া ট্রেনের শব্দ শুনতাম,গুরুগুরু মেঘের মতো... মাহতাব তুই আমাকে কাল মাঠে দাঁড় করিয়ে অতীত ফিরিয়ে দিলি। আমি তোকে কী দিই বলতো বন্ধু? যা তোকে সেই রাখাল গুলোর মতো স্যালুট দিলাম! তুই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এক ট্রেন ভর্তি ভালোবাসা ঢাকায় পৌঁছে দে। এখানে মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে। সঙ্গে কিছু সবুজও আনিস,ওই রঙটা জীবন থেকেও হারিয়ে গেছে। ঢাকা থেকে তোর নবাবগঞ্জকে দেওয়ার কিছু নেই,মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছাড়া,রাজনীতি!