ইরানের পারমাণবিক স্থপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টার পর এ হামলা চালিয়েছে তারা। পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের সদর দপ্তরে ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলার কেতাবি নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তেহরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রচেষ্টা রুখে দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।  

 ইরানি গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, নাতানজের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়েছে, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন এবং বাহিনীর তেহরান সদরদপ্তরে হামলা হয়েছে। রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় হামলায় কয়েকজন শিশু নিহত হয়েছে বলেও জানায় টেলিভিশনটি।  এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, আমরা ইসরাইলের ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি। কয়েক মুহূর্ত আগে ইসরাইল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করেছে। যতদিন না ইরানের হুমকি পুরোপুরি দূর হচ্ছে, এই অভিযান চলবে।

 ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশটি নাতানজসহ ইরানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ডজনের বেশি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের কাছে এমন পরিমাণ ইউরেনিয়াম রয়েছে যা দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।  ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদও এই অভিযানে অংশ নেয়। তারা ইরানের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।  

এদিকে ইরান থেকে সম্ভাব্য পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কায় ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, আমাদের প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে চালানো এই আগাম হামলার প্রতিশোধে খুব শিগগিরই ইসরাইলের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হতে পারে।  এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে ইরান যদি সরাসরি ইসরাইলকে টার্গেট করে প্রতিশোধ নেয়, তাহলে এটি গোটা অঞ্চলে বিস্তৃত যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।

ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি প্রধান ও দুই পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত  ইরানের রাজধানী তেহরানে চালানো ইসরায়েলি হামলায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। হামলায় দেশটির দুই শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি ও ফারেইদুন আব্বাসিও নিহত হয়েছেন।  শুক্রবার ভোররাতের এই হামলা পরিচালনা করে ইসরায়েলি বাহিনী। তেহরানের একাধিক আবাসিক ভবন এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এতে বহু বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।  মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি ছিলেন ইসলামি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট। ফারেইদুন আব্বাসি ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণে এই দুই বিজ্ঞানীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।  হামলার কারণে তেহরানের ইমাম খোমেইনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।  উল্লেখ্য, এই হামলার মাত্র দুই দিন পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ফলে অনেকেই ধারণা করছেন, সেই সময়টিকেই টার্গেট করে এই হামলা চালানো হয়েছে।  আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়, এই হামলায় শুধু আইআরজিসি প্রধান বা বিজ্ঞানীরাই নন, আরও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিশেষজ্ঞদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।  বৃহস্পতিবার (১২ জুন) থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল। অবশেষে শুক্রবার ভোরে তা বাস্তবে রূপ নেয়।