কুড়িগ্রাম শহরে প্রকাশনা শিল্পে প্রবেশ ঘটেছিলো প্রয়াত ঈশান চন্দ্র বকসীর হাত ধরে। তাঁর পরিবারের দুটো প্রেস ছিলো। একটি কাত্যায়াণী অপরটি ঈশান প্রেস। গত শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা সেটি। কাত্যায়াণী প্রেসের প্রদীপ এখনো জ্বালিয়ে রেখেছেন সতীশ চন্দ্র বকসীর নাতী আশিস বকসী। ঈশান প্রেসটি হাত বদল হয়ে চলে আসে কুড়িগ্রাম টাউন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (বর্তমান পৌরসভা),বিশিষ্ট আইনজীবী প্রয়াত ফকর উদ্দিন আহমেদের কাছে। তিনি সমাজকর্ম ও পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ছাপাখানার ব্যবসায় যুক্ত হন।
তিনি ১৯৫০ সালে ছাপাখানাটি কিনে নেন। পরে এটির নাম হয়" ইউর প্রেস"। এই নামে এখনো প্রেস ব্যবসাটি টিকে আছে। তাঁর পুত্ররা এটির দেকভাল করেন। এটির অবস্থান পুরাতন শহরের জাহাজ ঘরের ইদারার পাশেই। সব পেশাতেই প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে যার থেকে ছাপাখানা বাদ যায়নি। ঈশান প্রেসের পুরাতন পা চালিত লেটার প্রেসটি বদলিয়ে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি ঢাকা থেকে আমেরিকায় তৈরি ১৯৩০ সালে প্রস্তুত লেটার প্রেস (ব্যবহৃত) সংগ্রহ করে আনেন তাঁর জেষ্ঠ পুত্র কুড়িগ্রামের সর্বজেষ্ঠ্য আইনজীবী কে এস আলী আহমেদ।
এর ফলে কুড়িগ্রামে ছাপাখানার ব্যবসায় পাকিস্তান যুগে গতি পায় ছাপাখানার ব্যবসা। হাতে কম্পোজ করা সিসা বা এ্যালফাবেট দিয়ে পা চালিত এই মেশিনে চার দশকের মতন প্রকাশনার কাজ হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে পরে নানা রাজনৈতিক প্রচারপত্র এই ট্রেডেল মেশিনে ছাপানো হয়েছে। কুড়িগ্রামের সাহিত্য অঙ্গনের নানা প্রকাশনাও এই মেশিনে মুদ্রিত হয়েছিলো।
কুড়িগ্রামে সদরে সারদা, মর্ডাণ ভূরুঙ্গামারীতে ভাণ্ডারী নামে আরো দুটো প্রেস ট্রেডেল মেশিনে চলেছে। আজ প্রেসে লেটার মেশিন নেই। লেটার মেশিনের জায়গায় কম্পিউটার যুক্ত হয়েছে। যুক্ত হয়েছে লেজার, ফ্লিমসহ নানা পদ্ধতি। এসকল প্রযুক্তি ভিরে লেটার প্রেস হারিয়ে গেছে। এমনকি লেটার প্রেসের যন্ত্রগুলোও নেই। সকলেই বিক্রি করেছেন পুরাতন লোহা লক্কর হিসেবে। এই মেশিনটির খোঁজ পেয়ে বছর দশেক ধরে এটি পেতে সচেষ্ট ছিলাম। কাজ হচ্ছিলো না। পরে প্রয়াত আইনজীবী ফকর উদ্দিন সাহেবের কনিষ্ঠ পুত্র মজিদা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খাজা শরিফ উদ্দিন রিন্টু কয়েক বছরের চেষ্টায় পরিবারের সম্মতিতে আজ সম্মানিত জেলা প্রশাস্স মোহাম্মদ রেজাউল করিম এঁর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে প্রযুক্তিগত স্মারক হিসেবে হস্তান্তর করেন।
আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই খাজা সাঈদ উদ্দিন আলী আহমেদ, কেএস আলী আহমেদ এবং খাজা শরিফ উদ্দিন আলী আহমেদসহ প্রয়াত আইনজীবী ফকর উদ্দিনের সকল সন্তানদেরকে।