লাগেজ বলতে মওলানা ভাসানীর আজীবনের সাথী একটি মাত্র স্যুটকেস। দৈর্ঘ্য ষোল ইঞ্চি। সম্পদ বলতে তার মধ্যে থাকে একটি গামছা, একটি লুঙ্গি, একটি খদ্দরের পাঞ্জাবি, মাথার একটা টুপি, কিছু তামাক পাতা ও চুনের একটি ডিব্বা। এসব নিয়েই পূর্ব বাংলার শহরে-গ্রামে সফর করেন এবং এসব নিয়েই তিনি গেছেন ইউরোপ সফরে। চিরসাথী স্যুটকেসটিতে তার তালা নেই। সে বস্তু বিদায় নিয়েছে বহুদিন আগেই। ফলে চির উন্মুক্ত স্যুটকেসটি দড়ি বা শাড়ির পাড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে এখানে সেখানে যেতে হয়। ঢাকা থেকে যে দড়ি দিয়ে তার একমাত্র লাগেজ বেঁধে আনা হয়েছিলো লন্ডনে, একদিন সেটা হারিয়ে গেলো। অনেক খোঁজাখুজির পর দেখা গেলো সেটা ডাস্টবিনে শোভা পাচ্ছে। বাসার ঝাডুদার রাবিশ মনে করে সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলো। একদিন তার ইউরোপ সফর সঙ্গিরা বললো, 'হুজুর, এটা ফেলে দিয়ে একটা নতুন স্যুটকেস কিনে নেন না কেনো? উত্তরে তিনি বললেন, 'জীবনের বহুদিনের সঙ্গী আমার এই স্যুটকেসটি। বিদেশবিভুঁইয়ে ওকে না ফেলে দিয়ে দেশে গিয়েই না হয় বদলানো যাবে।' লন্ডন থেকে স্টকহোমে যাওয়ার পথেও ছেঁড়া লুঙ্গির একাংশ দিয়ে বেঁধে স্যুটকেসটি নিয়ে যাওয়া হলো। স্টকহোম থেকে পুনরায় লন্ডনে ফিরার পথেও সেই ছেড়া লুঙ্গির বাঁধন।
কিন্তু লন্ডন এয়ারপোর্টে এসে রহস্যজনক ভাবে স্যুটকেসটি হারিয়ে যায়। স্যুটকেসটি হারানোর ফলে সফর সঙ্গিরা খুব খুশি হয়। সিদ্ধান্ত হলো একটা নতুন ক্রয় করা হবে। যেদিন স্যুটকেস কেনার জন্য বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন ঠিক তখনি মওলানার সাথে কয়েকবার জেলখাটা সেই স্যুটকেসটি নিয়ে হাজির বৃটিশ এয়ারওয়েজ এর লোক। বললো, 'মনে কিছু করবেন না স্যার, স্যুটকেসটি ভুলক্রমে ব্রাসেলসে চলে গিয়েছিলো। আমরা দুঃখিত।' মওলানার তখনও বেলজিয়াম দেখার সুযোগ হয়নি অথচ তার জেলখাটা স্যুটকেসটি সে দেশটা এক চক্কর ঘুরে এসেছে। পুরোনো সাথী পেয়ে হুজুরের আনন্দ আর ধরে না। তিনি আরো খুশি হলেন দেখে যে, বিমান কোম্পানী তার ভাঙা স্যুটকেসটি মেরামত করে তাতে একটা তালা লাগিয়ে একজোড়া ঝুলিয়ে দিয়েছে।
ভাসানী যখন ইউরোপে খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস