বাংলাদেশে একটি সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রস্তাব। 

প্যামেলিয়া  রিভিয়ের 

 

বাংলাদেশের শিক্ষাগত উন্নয়ন নীতিতে একটি সমন্বিত প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য নীচের দিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

বিষয়টি নিয়ে এই প্রবন্ধে আমি খুব সংক্ষেপে আলোচনা করবো!

 

বাংলাদেশের প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা

 

2017 সালে, আমি মাদ্রাসার ছাত্র এবং শিক্ষকদের সাথে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলাম। আমি দেখেছি যে মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রান্তিক বোধ করেছে এবং তাদের আত্মপরিচয় নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। 

2024 সালে, আমি এই সমস্যাটি পুনর্বিবেচনা করেছি এবং আবিষ্কার করেছি যে ছাত্ররা এখনও তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, যেমন লম্বা পোশাক, পা থেকে গলা পর্যন্ত পাঞ্জাবি, মাথা ঢেকে রাখা পাগড়ি বা টুপি দিয়ে এবং সুন্নাহ অনুসারী হিসেবে বাধ্যতামূলক দাড়ির কারণে মূলধারার সমাজ থেকে তারা যেন অজান্তেই বাদ পড়ে গেছে। 

তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধর্মীয় জীবনযাত্রা, একটি পরিচয় সংকটের দিকে পরিচালিত করেছে, কারণ তারা তাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে এবং কেন তাদের বাংলাদেশের অংশ হিসাবে গ্রহণ করা হয় না তা বোঝার জন্য নিরন্তর তারা মনের সাথে সংগ্রাম করে।

 

 অনগ্রসর অর্থনৈতিক জনগোষ্ঠীর ব্যাকগ্রাউন্ডের মাদ্রাসা ছাত্রদের বৈচিত্র্যময় সমাজে(diverse society) অন্তর্ভুক্ত এবং গৃহীত বোধ করতে সহায়তা করার জন্য একটি সঠিক, উপযুক্ত নীতি তৈরি করা উচিত।

 

আমি সম্প্রতি একটি ভিডিও দেখেছি যেখানে একজন মাদ্রাসা ছাত্র বাংলাদেশী সমাজে তার জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তার কথাগুলো আমাকে অগণিত মাদ্রাসার ছাত্রদের আত্মপরিচয় নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব অভ্যন্তরীণ বা মানসিক সংগ্রামের প্রতি চিন্তাভাবনা করতে প্ররোচিত করেছিল।

 বাংলাদেশের প্রতি তাদের গভীর অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও, এই নিম্ন আর্থ-সামাজিক পটভূমির শিক্ষার্থীরা চিন্তাহীনভাবে বাঁধাধরা সামাজিক কুসংস্কারের (stereotype and prejudice) কারণে নিজেদের সঠিকভাবে প্রকাশ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, যা তাদের সমাজে, অনেক সময় চরমপন্থী হিসাবে অন্যায়ভাবে চিহ্নিত করে। 

 

সঠিক শিক্ষা বাস্তবায়নের সুযোগ

 

এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে মাদ্রাসার ছাত্ররা সাম্প্রতিক, জুলাই ২০২৪ ছাত্র আন্দোলনেও আওয়ামী সরকার কে উৎখাত করতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে, এমনকি তাদের বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র বা কর্মী জীবন উৎসর্গ করেছে।

 

গত এক দশক ধরে আইসিস এর বিশ্বব্যপি সন্ত্রাসী তৎপরতার ফলে, সমাজে মাদ্রাসার ছাত্ররা সম্ভাব্য সহিংস এবং চরমপন্থার সাথে জড়িত বলে বিবেচিত হওয়ার কারণে হতাশ বোধ করে। তারা নিজেদেরকে মূল্যবান এবং সমাজে সাদরে গৃহীত বোধ করার জন্য এই নেতিবাচক পরিচয়/ লেবেলগুলি ঝেড়ে ফেলতে আগ্রহী।

 

 দুৰ্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন শিক্ষা উন্নয়ন নীতি (seggregated education policy) মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে এমন সামাজিক সমস্যাগুলির মূল কারণগুলিকে পর্যাপ্তভাবে সমাধান করেনি। তদুপরি, একটি ইসলামী দলের সাথে পূর্ববর্তী আওয়ামী সরকারের জোট মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে ব্যর্থ হয়! উপরন্তু গত সরকার একটি পৃথক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমর্থন করে। যা কিনা বাংলাদেশের প্রাথমিক উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো জটিল করে তোলে! লক্ষ লক্ষ কওমি মাদ্রাসা ছাত্র সমাজেশিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মজীবনে পিছনের সারিতে অবস্থান গ্রহণ করে!

 

শিক্ষার রাজনীতিকরণ প্রান্তিক মাদ্রাসা ছাত্রদের সমাজ থেকে বঞ্চিত বোধ করতে সহায়তা করেছে। বিষয়টি স্পষ্ট যে, এই মাদ্রাসা ছাত্রদের সমাজে তারা অন্তর্ভুক্ত, এটি তাদের বোধ করতে সুযোগ করে দিতে হবে।

 

 কিন্তু কিভাবে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানো সম্ভব

 

প্রশ্নের উত্তর হলো, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে একীভূত মডেলে রূপান্তর করার ফলে বাংলাদেশে প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশাল মাদ্রাসা যুব জনগোষ্ঠী এবং জাতি উভয়কেই উপকৃত করবে। 

 

২০১৭ সালে একটি মাদ্রাসায় গবেষণা (শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি অধ্যয়নের) অভিজ্ঞতা থেকে, আমি বলতে পারি যে প্রগতিশীল মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষা পরিকল্পনাকারীরা এই রূপান্তরমূলক সংস্কারের সম্ভাব্যতা স্বীকার করেছেন।

 

প্রস্তাবের প্রথম ধাপ

এই পরিবর্তনের জন্য তাদের প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা হল নতুন প্রজন্মের উপকার করার জন্য একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরী করার জন্য সংলাপ এবং চুক্তির আলোচনা করার পরিবেশ তৈরী করা!

 

এইসামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার” (Holistic Education) প্রস্তাব গ্রহণ করা বাংলাদেশের প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার শান্তি বিনির্মাণ এবং উন্নতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।

 

 বাংলাদেশের শিক্ষাগত উন্নয়ন নীতিতে, নিচে পতিত মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থাকে, অবিলম্বেউল্টো অবস্থা পদ্ধতিকে(Bottom up apprpach) অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত! এবং মাদ্রাসা সহ সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বিবেচনা করা উচিত।

 

এই সামগ্রিক শিক্ষা(holistic education)প্রস্তাবে, আমি সার্বজনীন পাঠ্যক্রম (Universal curriculum), সামগ্রিক পাঠ্যক্রম (Holsitic), সমন্বিত পাঠ্যক্রম(integrated curriculum) এবং শিক্ষাবিদ্যা (pedagogy) ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করার জন্য উপরোক্ত বাক্যাংশ গুলু(phrases) ব্যবহার করব। যাতে করে, পাঠকরা ধারণা (concepts) এবং তত্ত্বগুলি(theories) স্পষ্টভাবে বোঝেন।

 

ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে, সবার জন্য, সামগ্রিক শিক্ষার(Holistic education) পরিপ্রেক্ষিতে, যা পাঠ্যক্রমকে একীভূত করে, আমি ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ উভয় শিক্ষার জন্য সমন্বিত পাঠ্যক্রম(Integrated curriculum)বা একই শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রস্তাব করছি, বাংলাদেশের সব শিশুদের জন্য

 

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আদি ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কিভাবে ইসলামিক বিজ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখায় প্রসার লাভ করেছিল

মাদ্রাসা একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সামগ্রিক এবং বিজ্ঞান-ভিত্তিক পাঠ্যক্রম অনুসরণ করেছে, যা গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, শরীরবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, চিকিৎসা এবং জ্যোতির্বিদ্যার মতো বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পূর্বেরসামগ্রিক শিক্ষা” (Holsitic education) ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া আজ বিশেষ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে! কারণ লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা ছাত্র তাদের আত্মপরিচয় নিয়ে দ্বিধা দন্ধে  রয়েছে, এবং শিক্ষা ওর কর্ম ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়েছে! এতে তাদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে!

সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে, প্রস্তাব করা হচ্ছে যে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয় পাঠ্যক্রম শিক্ষা ব্যবস্থার অধীনে (সমন্বিত পাঠ্যক্রম) একটি ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যক্রম গ্রহণে রূপান্তর করা উচিত! এবং এটি ধর্মনিরপেক্ষ বা জাতীয় সেক্যুলার বোর্ড প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিবেচনা করে।

আমরা জানি বাংলাদেশে দুই ধরণের মাদ্রাসা রয়েছে, কওমি এবং আলিয়া মাদ্রাসা! আলিয়া মাদ্রাসা বাংলাদেশ জাতীয় পাঠ্যক্রম(Bangladesh National curriculum or secualr curriculum) অনুসরণ করে, কিন্তু কওমি মাদ্রাসা করেনা! তারা শুধু মাত্র আংশিক শিক্ষা, বা ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে!

 

সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার(Holistic education system) লক্ষ্য হলো, বর্তমান কওমি (সাম্প্রদায়িক) এবং আলিয়া (ধর্মনিরপেক্ষ) মাদ্রাসাগুলিকে একীভূত ধর্মনিরপেক্ষ/বাংলাদেশ জাতীয় পাঠ্যক্রম বোর্ডের অধীনে একীভূত করা, পৃথক প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা দূর করা এবং আরও মানসম্মত শিক্ষা কাঠামো প্রদান সুনিশ্চিত করা।

 

নতুনসামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ব্যাপক পাঠ্যক্রম থাকবে যার মধ্যে ইসলামিক বিষয় অধ্যয়ন (Islamic studies related all subjects), প্রধান বিশ্ব ধর্ম (World religion)এবং বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় কারিকুলাম/ পাঠ্যক্রম (National curriculum and pedagogy), যা কিনা পুনঃপর্যালোচনা এবং সংস্কার করা হয়েছে, শুধুমাত্র সেটি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 

সকল ইসলামিক কারিকুলাম ঐচ্ছিক (elective) বিষয় হিসেবে থাকবে! তাই আলাদা মাদ্রাসা বোর্ড এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়।

 

সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায়  মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রাথমিক মাধ্যমিক উভয় শিক্ষার সময় (Holistic education) ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় কারিকুলাম বোর্ডের অধীনে একই কারিকুলাম শিক্ষার অধ্যয়ন করার সুযোগ পাবে

 

 মাদ্রাসা ছাত্ররাসামগ্রিক শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ইসলামী বিষয়গুলি অধ্যয়ন করতে পাবে, তাই আমি মনে করি, আলাদা মাদ্রাসা কারিকুলাম বা আলাদা মাদ্রাসা বোর্ডের প্রয়োজন নেই। 

 

যদি তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একই ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তাদের থাকছে!

 

সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার অধীনে প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষা নেবার ফলে সমাজে আত্মপরিচয় অন্তর্দ্বন্দ্ব শিক্ষা ক্ষেত্রে  সকল বাধা অপসারিত হয়ে যাবে

 

প্রস্তাবিত নতুনসামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি বিস্তৃত পাঠ্যক্রম প্রবর্তন করতে চায় যা বিভিন্ন বিষয়গুলিকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে। 

 

এই পাঠ্যক্রমে ইসলামিক বিষয় সমূহ অধ্যয়ন (ঐচ্ছিক) প্রধান বিশ্ব ধর্মের (World Religion) একটি সিলেবাস (বাধ্যতামূলক ) এবং বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সকল পাঠ্যক্রম (Secular curriculum) অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 

 

এই নতুন ব্যবস্থার একটি মূল বৈশিষ্ট্য হল যে সমস্ত ইসলামিক বিষয়গুলি ঐচ্ছিক/নির্বাচনী হবে, এইভাবে পৃথক বোর্ডগুলির আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকবেনা!

 

তদ্ব্যতীত, “সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য, সকল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষার সময় একটি বোর্ডের অধীনে একই ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যক্রম অনুসরণ করার বিকল্প সুযোগ প্রদান করা।

 

 এটি এই নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে মাদ্রাসা ছাত্রদের ঐতিহ্যগত বিদ্যালয়ে (traditional madrassa) তাদের সমকক্ষদের মতো একই শিক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। এই বিকল্প ব্যবস্থাটি মাদ্রাসা বোর্ড গ্রহণ করলে, আলাদা মাদ্রাসা পাঠ্যক্রম বা আলাদা মাদ্রাসা বোর্ডের প্রয়োজন হবে না।

 

অতিরিক্তভাবে, মাদ্রাসার ছাত্ররা যদি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পছন্দ করে, তবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একই ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প রয়ে গেলো! কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের যে সীমাবদ্ধতা ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে, তা আর থাকলোনা! “সামগ্রিক শিক্ষাএটি নিশ্চিত করে যে, তাদের উচ্চ শিক্ষায় একটি নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে এবং কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই তাদের তাদের পছন্দনীয় একাডেমিক বিষয় গুলু অধ্যয়নের সুযোগ থাকছে!

 

কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার নজির রয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসায় আমার পর্যবেক্ষণ থেকে, ছাত্ররা জাতীয় পতাকা উত্তোলন জাতীয় সঙ্গীত সমাবেশে যোগ দেয় এবং হামদ, নাত এবং দেশাত্মবোধক গানের মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। 

 

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য জাতীয় সঙ্গীত বাধ্যতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। 

সাঁতার প্রশিক্ষণ, সঙ্গীত (হামদ, নাত, দেশাত্মবোধক, আধুনিক শাস্ত্রীয়), নৃত্য বাদ্যযন্ত্র শিক্ষা বিষয়গুলু ঐচ্ছিক হিসেবে থাকবে

 

প্রচণ্ড গরম, ঠাণ্ডা, ঝড়ো হাওয়া বা বৃষ্টির আবহাওয়ায় তারা শ্রেণীকক্ষে বসে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারবে!  

 

কওমি মাদ্রাসা, বাংলাদেশের অন্য ধরনের ধর্মীয় বিদ্যালয়, যেটি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ভিন্নকওমি মাদ্রাসা, ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যক্রম, বিশেষ করে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করে। 

 

ফলে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা শিক্ষার্থীরা আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের চাইতে সম্পূর্ণভাবে পিছিয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে ভবিষ্যতে ব্যর্থ হয়। 

 

তাছাড়া অনেক কওমি এবং আলিয়া মাদ্রাসায় নিম্নমানের পাঠদানের জন্য দায়ী করা যেতে পারে

 

 প্রায়ই সঠিক অবকাঠামো এবং বিজ্ঞান গবেষণাগারের অভাবের কারণে মাদ্রাসায় শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়! এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য এবং সমস্ত বাংলাদেশী ছাত্রদের মানসম্পন্ন শিক্ষার সমান সুযোগ/ প্রবেশ (access) নিশ্চিত করার জন্য, মাদ্রাসা এবং ধর্মনিরপেক্ষ স্কুল বা শিক্ষালয়গুলু, উভয়ের তত্ত্বাবধানের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে যা হচ্ছেসামগ্রিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করবে! এটি বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগত সেবা এবং শিক্ষার মানকে মানসম্মত করতে সক্ষম করবে।

 

প্রস্তাবের দ্বিতীয় ধাপ

পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করার সময়, এটি শিক্ষার্থীদের মেধার উপযোগী করা উচিত। এটি স্বীকার করা অপরিহার্য যে প্রতিটি শিশু অনন্য এবং একটি পাঠ্যক্রম প্রয়োজন যা তাদের চাহিদা পূরণ করে। গড় বা A-শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যক্রম অপরিবর্তিত থাকা উচিত। 2 এবং 6 গ্রেডে প্রতিভাধর ছাত্রদের তাদের শিক্ষকদের দ্বারা চিহ্নিত করা উচিত। যদি তারা জেলা পাঠ্যক্রম বোর্ডে শিক্ষক এবং মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রতিভাধর হিসাবে স্বীকৃত হয়, তবে তাদের প্রতিভাধর প্রোগ্রামে (gifted programme) রাখা উচিত।

 

উচ্চ বিদ্যালয়ের (গ্রেড 9-12) প্রতিভাধর শিশুদের জন্য উন্নত গণিত এবং বিজ্ঞান-কেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম প্রদান করা উচিত যাতে তারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে

প্রতিটি শিশুর অনন্য ক্ষমতা রয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট, উন্নত পাঠ্যক্রম সহ প্রাথমিক থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রতিভাধর শিশুদের শিক্ষায় সমর্থন করা গুরুত্বপূর্ণ।

 বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি বৈচিত্র্যময় পাঠ্যক্রম দরকার যা সাধারণ ছাত্র এবং প্রতিভাধর বা সমৃদ্ধ শিশু উভয়ের জন্যই পূরণ করে যারা এক ধরণের পাঠ্যক্রম থেকে উপকৃত হতে পারে না।

 প্রমিত পাঠ্যক্রম (standardized curriculum) এক মাপ সবার জন্য উপযুক্ত (One size fit for all) পদ্ধতি কাজ করে না। প্রতিটি শিশুর প্রতিভার উপর ভিত্তি করে আমাদের উপযোগী পাঠ্যক্রম প্রয়োজন। 

 

একটি সার্বজনীন পাঠ্যক্রম, সামগ্রিকভাবে পরিকল্পিত, মানে ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ উভয় বিদ্যালয়েরই একই বৈচিত্র্যপূর্ণ পাঠ্যক্রম, যেমন সাধারণ, সমৃদ্ধ, প্রতিভাধর(general, enriched,  gifted) বজায় রাখা উচিত।

বিশেষ শিশুদের (special need children)জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

 

ভাষার মাধ্যম: শিক্ষার্থীদের বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে বেছে নেওয়ার বিকল্প থাকা উচিত

আমাদের সময়ে কি ব্যবস্থা ছিল তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমাদের একাদশ শ্রেণীতে, বাংলা থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুযোগ ছিল। 

 

আন্তর্জাতিক মানের মানুষ/ ব্যক্তিত্ব তৈরী করার জন্য বৈশ্বিক শিক্ষার বিবেচনা করে, আমি একটি নতুন প্রস্তাব রেখেছি, যেটি পাকিস্তান পরবর্তী সময়েও ছিল!

 

আমি প্রস্তাব করছি যে, শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ গ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জনের জন্য, এবং আরও ভালভাবে প্রস্তুত করার জন্য গ্রেড 9 থেকে 12 পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজি বেছে নেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে!

শিক্ষার্থীরা যারা বাংলা মাধ্যমে পড়তে চায় তারা বাংলা পড়তে পারবে, আর যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে চায় তাদেরকে নয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ থাকবে।

 

আমি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত অধ্যাপকের একটি মন্তব্য শুনতে পেয়েছি যিনি দুঃখের সাথে মন্তব্য করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রেড 4-এর ইংরেজি দক্ষতা নিয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয় এবং এদের মধ্যে ষাট শতাংশ শিক্ষার্থী মাদ্রাসা থেকে আসে। যদি সত্যিই এটি আসল চিত্র হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের, তবে এটি উদ্বেগের বিষয়

 

 কারণ শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কঠিন বাধার সম্মুখীন হয় যখন বাংলা মাধ্যম শিক্ষা থেকে অকস্মাৎ ইংরেজি মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে (দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়ার পর)! 

 

তাই, বিশেষ করে সমৃদ্ধ প্রতিভাধর ছাত্রদের জন্য তাদের উচ্চমাধ্যমিক (Higher secondary school) বছর নয় থেকে দ্বাদশ গ্রেড পর্যন্ত ইংরেজিতে প্রস্তুতি নেওয়া উপকারী হবে। এই ক্রান্তিকাল (9 to 11 grade) ইংরেজিতে বিষয়বস্তু শেখার সুবিধা দেবে।

 

 এই প্রস্তাবটিসমৃদ্ধ প্রতিভাধরশিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক হবে কারণ তারা একটি উন্নত পাঠ্যক্রমে নিযুক্ত থাকবে।সাধারণশিক্ষার্থীরাও সমভাবে সুযোগ পাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চমান সম্মত শিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে!

 

সামগ্রিক শিক্ষা প্রস্তাবনার উপসংহারে বলা যেতে পারে, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা খাতে অনেক উন্নতি করা সম্ভব।পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আদিকাল থেকে  একটি ধর্মনিরপেক্ষ, ব্যাপক, এবং যুক্তিবাদী পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করেছিল। 

অতএব, সময় এসেছে ধর্মনিরপেক্ষ বোর্ড ব্যবস্থায় রূপান্তরের। 

 

আমি মনে করি, সামগ্রিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারলে, আলাদা কওমি ধর্মনিরপেক্ষ মাদ্রাসা বজায় রাখার দরকার নেই। 

নতুন সংবিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক শিশুকে অবশ্যই দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা সমাপ্ত করতে হবে। 

যাতে, বাংলাদেশী ছাত্ররা বিদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতে প্রবেশের সময় বেগ না পায়, এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য তাদের জন্য উপরুক্ত ন্যূনতম শিক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সংবিধান সংশোধন করা উচিত।

 

সব ধরনের মাদ্রাসা একটি বোর্ডের অধীনে আসতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষ বোর্ড, যা বাংলাদেশ জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করবে এবং ঐচ্ছিক কোর্স হিসাবে ইসলামিক বিষয়গুলি শিক্ষার সুযোগ প্রদান করবে। এর অর্থ হল দুটি শিক্ষা ব্যবস্থা (madrassa and secular) একীভূত হবে। 

 

যাইহোক, উপরে আলোচনা করা হয়েছে, পাঠ্যক্রমটি শিশুদের মেধার উপযোগী করা উচিত বা উপযোগী করে তুলতে হবে!

 

আমার মতে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যেন অপ্রস্তুত ব্যক্তি তৈরি না করে সেটি সামগ্রিক ব্যবস্থার মূল লক্ষ হবে!

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এই সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা রূপান্তরের বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দেওয়ার এবং লক্ষ লক্ষ সুবিধাবঞ্চিত মাদ্রাসা ছাত্রদের একটি আধুনিক, উদ্ভাবনী শিক্ষা ব্যবস্থায় একীভূত করার সুযোগ রয়েছে যা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা হবে। 

 

আগামী নির্বাচিত সরকার শিক্ষাধারা অব্যাহত রাখবে। 

 

শিক্ষা খাতে বাজেট: তাছাড়া, শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করতে হবে। যাতে ছাত্ররা শিক্ষার পর্যাপ্ত উপকরণ পায়স্কুলগুলিকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তহবিল দিয়ে সজ্জিত করা যেতে পারে এবং শিক্ষকরা যাতে ভাল বেতন পান। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত শিক্ষক উন্নয়নের শিক্ষা গ্রহন করার সুযোগ দিতে হবে!

 শিক্ষকদের অবশ্যই ক্ষমতাবান, সম্মানিত এবং শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত বোধ করতে হবে। 

এটি একটি বিস্তৃত পাঠ্যক্রম (Universal curriculum), সামগ্রিক পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষাবিদ্যা (Holistic curriculum and pedagogy) দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন যাত্রা শুরু করার দ্বার খুলে দিবে আগামী প্রজন্মের জন্য। দুটি শিক্ষাব্যবস্থাকে একত্রিত করলে একটি শিক্ষিত, শান্তিপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ে উঠবে।