এম আব্দুর রাজ্জাক উত্তরবঙ্গ থেকে :
বিশ্বের দরবারে প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের লীলাভূমি সুন্দরবন। শুধু দেশে নয় বিশ্বের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সৌন্দার্যময় বন সুন্দরবন। যার সৌন্দযের লিলাভুমী দেখতে প্রতি বছরই লাখো পর্যটক ভিড় করেন সন্দরবনের অভ্যান্তরে। কিন্ত করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে দীর্ঘ ১ বছর সাত মাস বন্ধ থাকার পর আবারও সরকারী ভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় বনে টর্যটকদের প্রবেশ। এতে বন বিভাগের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
তবে বহু প্রতিক্ষার পর ১ সেপ্টেম্বর ভ্রমন পিপাশুদের জন্য উম্মুক্ত হলো সুন্দরবন পর্যটক কেন্দ্রগুলো। অনুকুল আবহাওয়া ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে এবার দেশী-বিদেশী পর্যটকের সংঙ্খ্যা বাড়বে কয়েকগুন বলে অভিমত বন বিভাগের।
রোমাঞ্চকর ভয় আর শিহরন, সাথে দর্শনার্থীদের প্রাকৃতির সৌন্দর্যের হাতছানি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। রয়েলবেঙ্গল টাইগার, মায়াবি ও চিত্রা হরিন, বানর আর বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ নানা স্থল ও জলজ প্রাণীর আশ্রয়াস্থল এই বন। প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দার্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। কিন্ত করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বহুদিন বনের অভ্যান্তরে প্রবেশ বন্ধ ছিল দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমনে।
প্রথমে গত বছরের ১৯ মার্চ দর্শনার্থীদের বনে প্রবেশ বন্ধ ঘোষনা করে সরকার। যা পহেলা নভেম্বার কিছু দিনের জন্য এক বার খুলে দিলেও তা আবার চলতি বছরের ৩ এপ্রিল বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ। এছাড়াও ইলিশ মৌশুম আবার মৎস্য প্রজনন মৌশুম হওয়ায় প্রায় ৩ মাস বনের অভ্যান্তরে পর্যটকসহ সকল ধরনের জেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল পুর্ব সুন্দরবন ঝুড়ে। সকল কিছু বিবেচনা করে মন্ত্রনালয়ের এক সভায় বনের অভান্তরে দর্শনার্থীদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বন বিভাগ। বন ভিাগের এই সিদ্ধান্তের ট্যুরিস্ট বোর্ড কম্পানির মালিকরা তাদের লঞ্চ, জালীবোর্ড, ট্রলার ও জলযানগুলো নতুন সাজে সজ্জিত করে প্রস্তুত করে রেখেছেন দর্শনার্থীদের ভ্রমনের জন্য। দীর্ঘদিন পর্যটক কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় ট্যুর-অপারেটর মালিক ও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে। আর পর্যটক কেন্দ্র বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের পর্যটক ষ্পটগুলো থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে বন বিভাগ। করোনার আগে শুধু মাত্র করমজলে করোনার পুর্বের মৌশুমে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা, আর সেখানে ১ বছর সাত মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ৯ লক্ষ টাকা বলে জানায় বন বিভাগ। তবে এবছর পরিপুর্নভাবে মৌশুম শুরু হবে নভেম্বরের প্রথম থেকে, পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলেও জানায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
দীর্ঘদিন পর হলেও পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত হলো সুন্দরবন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা সহ অন্যান্য বিভাগ ও জেলাগুলে থেকে মাত্র জ্জ ঘন্টার মধ্যে মোংরার সুন্দরবনে পৌচাতে পারবে। তাই চলতি মৌশুমে পর্যটকের আগামন আগের তুলনায় দুই থেকে তিনগুন বাড়বে বনের করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, নিলকমল, পক্ষির চর, দুবলার চর, আলোরকোল হিরোন পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্পটে। এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের আনন্দর ও নিরাপত্তা দিতে সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছে বোর্ড মালিক-কর্মূচারী এবং ট্যুরিষ্ট পুলিশের সদস্যরা।
সাউদার্ন ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস’র পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান ও লঞ্চ মালিক কাজী মাজফুজ জানান, বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ট্যুর কম্পানিগুলোর অনেক তি হয়েছে। এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল মোংলায় প্রায় দুই থেকে তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সময়টাতে চরম দুর্দিন চলছিল। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় এখন কিছুটা হলেও তি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানায় তিনি।
মোংলা ট্যুরিষ্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিলাল উদ্দিন বলেন, সরকার পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য সুন্দরবনকে উম্মুক্ত করায় দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের দীর্ঘদিনের আশা পুরন হলো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর্যটক আগের তুলনায় বারবে বলেই সুন্দরবনের দর্শনার্থীদের ভ্রমনের তিন স্তারের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করেছে বন বিভাগ ও ট্যুরিষ্ট পুলিশের সদস্যরা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বন মন্ত্রনালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি লঞ্চে সর্বোচ্চ ৭৫জনের বেশি ট্যুরিস্ট পরিবহন করা যাবে না। এছাড়া বনবিভাগের নিয়োমানুযায়ী পর্যটকদের সামাজিক দুরত্ব ও বনের কিনারায় না উঠে সরকারের বিধিনিষেধ মেনেই চলতে হবে সুন্দরবনের সৌনাদার্য উপভোগ করার জন্য আসা দর্শনার্থীদের।
দীর্ঘদিন মানুষ ঘরবন্ধি থাকার পরে যারা সুন্দরবন ভ্রমনে আসবে তাদের নিরাপত্তা সুন্দবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে। সুন্দরবনে বিভিন্ন পর্যটন ষ্পটগুলোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখেরও বেশী পর্যটক ভ্রমন করেন। সরকারী ভাবে তিন মাস বনে প্রবেশ বন্ধ থাকার পর তা খুলে দেয়ায় খুশী বনরক্ষীসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই। তাই দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে নানা কার্য্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে,এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত হলো সুন্দরবন
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৩৫ এএম

সারাবাংলা রিলেটেড নিউজ

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে নওগাঁয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা

আদমদীঘির, শাঁওইল হাটবাজারে শীতবস্ত্র বেচাকেনা জমতে শুরু করেছে

বগুড়ার 'আমরা ক'জন' শিল্পী গোষ্ঠীর বছরব্যাপী অনুষ্ঠান মালার উদ্বোধন

২৩ তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী-২০২২ সমাপ্ত

তুলনাহীন বীভৎসতা -জাকিয়া রহমান

বগুড়ায় টিএমএসএস ও পিএইচপি গ্রুপের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত

।। পুরনো পালে নতুন হাওয়া……………।। কাওসার চৌধুরী

ভারত থেকে শেখ হাসিনার বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার