নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! আরও পড়ুন পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প ও বাইডেন মাস্ক কি নর্টনের মতো নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন? গোপন সামরিক তথ্য শেয়ার, ফের বিতর্কের মুখে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রাম্পের ঘটনাবহুল ১০০ দিন, আলোচিত যত মন্তব্য ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী, আলোচনা যা নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসার পরই বিশ্বকে কাঁপিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্কযুদ্ধ, নানা রকমের নির্বাহী আদেশ, কানাডাকে ৫১তম রাজ্য বানানো— সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটাবিশ্ব। ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে সেটা এবার আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব হয়নি, হবেও না। তিনি কি কোনো বিদেশি নেতাকে ভর্ৎসনা করবেন? বিশ্ববাজারে ঝাঁকি দেবেন, নাকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবেন— তা অনুমান করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউরোপ তুষ্টি’ পররাষ্ট্রনীতিতে অসন্তোষ বাড়িয়েছেন। একেবারেই খেয়াল খুশিমতো শাসন করছেন। মোট কথা ক্ষমতার ১০০ দিন আগেই নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার এপির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এ তথ্য। এএফপি।  চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল প্রেসিডেন্সি ক্ষমতার ১০০ দিন পূরণ করবেন ট্রাম্প। কিন্তু এরই মধ্যে তাকে ঘিরে চলছে নানা সমালোচনা ও বিতর্কিত মন্তব্য। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ ম্যাট ডালেক এএফপিকে বলেন, ‘ট্রাম্প ২.০ (প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ) তার প্রথম মেয়াদের চেয়ে অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী মনোভাব দেখাচ্ছেন এবং কাজের ক্ষেত্রেও তিনি কর্তৃত্ববাদী।’   ট্রাম্প যেন একটি অন্তহীন রিয়েলিটি শোর অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছেন, যেখানে তিনি নিজেই তারকা। কেননা, ট্রাম্প প্রায় প্রতিদিনই ওভাল অফিসে বিভিন্ন নির্বাহী আদেশে সই করছেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। তার এসব আদেশ মার্কিন গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং বিশ্বব্যবস্থার ওপর অভূতপূর্ব আঘাত হেনেছে।

ম্যাট ডালেক বলেন, ‘সাংবিধানিক সুরক্ষা ভেঙে দেওয়ার জন্য আমরা আধুনিক সময়ে এমন ধারাবাহিক আঘাত আগে কখনোই দেখিনি।’    বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের বিতর্কিত সহায়তায় ট্রাম্প ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে বিশেষ এক অভিযান শুরু করেছেন। এটাকে তিনি উদার ‘ডিপ স্টেট’ বলে মনে করছেন। তিনি অভিবাসীদের এল সালভাদরের একটি বিশাল কারাগারে নির্বাসিত করার জন্য শতাব্দীপ্রাচীন যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ করেছেন। সতর্ক করেছেন, পরবর্তী পদক্ষেপ মার্কিন নাগরিকদের ওপর হতে পারে। ট্রাম্প বিচারকদের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে আগে যেসব আইনি সংস্থা ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলায় সম্পৃক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও সংবাদমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন ট্রাম্প। তিনি এখনো সংবাদমাধ্যমকে ‘মানুষের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।  

হোয়াইট হাউজে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ সীমিত করেছেন। আইওয়ার গ্রিনেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বারবারা ট্রিশ বলেন, প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার ওপর আনুষ্ঠানিক, এমনকি সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে উদাসীন বলেই মনে হচ্ছে। বৈশ্বিক মঞ্চেও একাধিক বিষয়ে সাড়া ফেলেছেন ট্রাম্প। যেমন গ্রিনল্যান্ডের ওপর যেকোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপের আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা। পানামা খাল ও কানাডার নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছেন ট্রাম্প।  রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্প্রসারণবাদী প্রবণতার মতো করে একটি প্রভাববলয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন ট্রাম্পও। ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ও রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও হতাশা বাড়িয়ে তুলেছে। এরপর ট্রাম্প চীনসহ বিভিন্ন দেশের ওপর বাড়তি আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন।

এ ঘটনা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ছড়িয়েছে। ক্ষমতার ওপর তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ জোরদারের প্রমাণ দিয়েছে।   এদিকে ক্ষমতার আসার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে আসছেন ট্রাম্প। এমনকি নিজের মন্তব্য অস্বীকারও করতে দেখা গেছে তাকে। ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অভাবিত মন্তব্যটি যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।   জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন, রুশদের ‘ভুয়া তথ্যের’ শিকার হয়েছেন ট্রাম্প। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এই মন্তব্য থেকে সরে আসেন এবং এক সাংবাদিককে উল্টো প্রশ্ন করে বসেন, ‘আমি কি এটা বলেছিলাম?’ আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এসব দেশ আমাদের ফোন করছে, আমাকে তেল দিচ্ছে।’  ডোনাল্ড ট্রাম্প