এম আব্দুর রাজ্জাক 


হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার হাজার বছরের প্রাচীন লোকজ ঐতিহ্য ‘ঘাইল ছিয়া’ ও গ্রামের কৃষকের কৃষি কাজের ঐতিহ্য ‘লাঙ্গল’।মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার অনেক মানুষ ঘাইল ছিয়া ও লাঙ্গল তৈরির কাজ করতেন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প হারিয়ে গেলেও পূর্বপুরুষদের পেশা হিসেবে অনেকেই এটা ধরে রেখেছেন। কারুশিল্পীরা কাঠ দিয়ে নানান জাতের ঘাইল ও ছিয়া ও লাঙ্গল তৈরি করে থাকেন। নকশাখচিত এ ঘাইল ছিয়ায় থাকে হরেক রকম কারুকাজ।

শ্রীমঙ্গল শহরে হবিগঞ্জ সড়কে গদার বাজার নামে পরিচিত স্হানে আগে প্রতি শনি- মঙ্গলবার কারুশিল্পীরা

পূর্বপুরুষদের পেশা হিসেবে এই সব ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলো কে নিয়ে আসতেন বাজারে বিক্রি করার জন্য। আর এখানে বিক্রি হয় বলে আজও এই জায়গার নাম গদার বাজার হিসেবে পরিচিত কিন্তু কালের পরিবর্তনে এখন আর তাদের দেখা যায় না।

এ পেশায় জড়িতরা জানান,আগে শীতের ছোঁয়া লাগলেই পিঠাপুলি তৈরির প্রধান উপকরণ চালের গুঁড়ি প্রস্তুত করার জন্য ঘাইল ছিয়াই ছিল একমাত্র ভরসা। আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে ও কালের বিবর্তনে এ শিল্প হারিয়ে গেলেও গ্রামীণ জনপদে এখনো এর কদর রয়েছে। অঞ্চলভেদে এর নামের ভিন্নতা থাকলেও সিলেট অঞ্চলে একে ‘ঘাইল-ছিয়া’ বলা হয়। নিচের গুঁড়িটাকে ‘ঘাইল’ আর আঘাত করার দণ্ডকে ‘ছিয়া’ বলা হয়। শীতের পিঠা তৈরির ধুম পড়লে ঘাইল ছিয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়।

বাঙ্গালির চির চেনা ঐতিহ্য কাঠের লাঙল আধুনিক প্রযুক্তর আবির্ভাবে বিলুপ্তির পথে। এক সময় লাঙল ছাড়া গ্রাম-বাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তায় করা যেত না। দেখা যেত খুব ভোর বেলা প্রান্তিক কৃষক তার ঘাড়ে লাঙল জোয়াল আর মই রেখে এক হাতে গরু শাসনের পাচুনি লাঠি আর অন্য হাতে চাষাবাদের উপযুক্ত দুই বলদের দড়ি ধরে রেখেছে। বিশ শতকে ১৯৮০’র দশক থেকে কলের লাঙল সেই স্থান দখল করায় দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙল। ফলে মাত্র দিন যুগের ব্যবধানে হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য চাষাবাদের কাঠের হাতল ও লোহার ফাল বিশিষ্ট লাঙলের প্রয়োজনিয়তা লুপ্ত হয়ে গেছে।