ঘুমন্ত পথ
-জাকিয়া রহমান
তরুছায়া নির্জনতায় ঘুমন্ত এক মেঠো পথ!
সহসা এল ঘোড়া সাওয়ারী,
উড়িয়ে ধূলি, কাঁপিয়ে ধরণী দুরন্ত বেগে।
ঘোড়-দৌড় যেন মনে হয়,
ক্ষিপ্ত উদ্দাম আবেগে।
পথ কি করে আর ঘুমায়?
চেয়ে চেয়ে দেখে আর ভাবে
কিসের তাড়া ওদের আর যাবেই বা কোথায়?
কেন এতো হৈ হুল্লোড়!
কিসের তাড়ায় এ দোড়?
আমি তো ছিলাম ঘুমিয়ে,
ভেবেছিলাম থাকব চিরকাল-
গাছের ছায়ায়, যাবোই বা কোথায়?
আমি আর দুপাশের গাছের সারি চির বাসিন্দা,
শুধু আমি, গাছ-সারি আর ধুলোবালি ঘুমাবে হেথায়।
তারপর এলো যান্ত্রিক গাড়ি,
সারা দিনমান শব্দ কত!
আমার বুক হতে চলল ক্ষত বিক্ষত।
একদিন এলো সুরকি, গুড়ি পাথর-
চলল কাজ সারাদিন খটর খটর!
ভরে গেল পাথরে আমার বুকটি,
অসহ্য শ্বাস রুদ্ধকারী।
তারপর পথের ধারে কত চারাগাছ রোপিত হলো-
ভাবলাম অন্তত ছায়াতো পাব, যাক বাঁচা গেল!
কতদিন গেল কে জানে,
সেকেলে পথ আমি হয়ে গেলাম কত চওড়া।
এপাশ থেকে ওপাশের সাথে কথা বলা দায়!
উচ্চ স্বরে কথা বলতে লাগে বড় বেয়াড়া।
এলো বিটুমিন! আমার বুকটিতে এখন-
কঠিন প্রস্তরের চাপ, শ্বাস ফেলতে মরণ।
মাঝে মাঝে অসহ্য বেদনায় ফুঁড়ে দিই কিছু ছিদ্র!
সব চেয়ে অসহ্য সে পেট্রোল বিষ বাষ্প!
বাতাস ভুগছে আজ দূষিত যন্ত্রণার ফাঁদে।
আর নেই ঘুম আমার দিনরাত্র!
আমি একদার ছায়া ঢাকা পথ আজ আত্যাচারিত-
দিনরাত যন্ত্র দানবের দাবড়ানি খেয়ে।
সেই ছায়া ঢাকা নির্জনতায় শান্তির শাড়ি পরিহিত পথ,
ভোগে ইন্সমনিয়ায়।
গাছ-সারি দুপাশে তেমন বড় হতে দেয় না দূষণ,
ভোগে এনিমিয়ায়।
তাই এ রাজপথ আজ ছায়াহীন!
রৌদ্র তাপে অস্থির পথচারী আমার মতন।
চলমান যন্ত্র বাজায় কর্কশ অরক্রেষ্টার দ্বন্দ,
বিকট শব্দে আছড়ে পরে, উদ্বিগ্ন হয় কর্ণ রন্ধ্র।