এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে :
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাদ্যসম্ভার রয়েছে, যা সেই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। বগুড়ার চালের কটকটি এমনই একটি খাবার , যা শুধু বগুড়ার নয়, বরং পুরো দেশের ঐতিহ্যের এক অনন্য অংশ হিসেবে স্বীকৃত। চালের কটকটির খাস্তা ও মচমচে স্বাদ, ঘ্রাণ, এবং বিশেষ পদ্ধতির জন্য জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি বৃদ্ধি করেছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে বগুড়ার অন্যতম বিখ্যাত খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
উৎপত্তি ও ইতিহাসঃ বগুড়ার চালের কটকটির উৎপত্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না, তবে এটি দীর্ঘদিন ধরেই বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী হিসেবে পরিচিত। এটি প্রাথমিকভাবে বগুড়ার স্থানীয় মানুষদের কাছে জনপ্রিয় ছিল, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বগুড়ার দোকানগুলোতে এই এটি সবার নজর কাড়ে এবং ক্রেতাদের মন জয় করে। চালের কটকটির প্রস্তুতিঃ চালের কটকটি তৈরি করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ হলেও এর সঠিক মান ধরে রাখতে দক্ষতার প্রয়োজন। এর মূল উপাদান হলো চালের গুঁড়া, চিনি এবং ঘি। চালের গুঁড়া প্রথমে ভাজা হয় এবং পরে চিনি ও ঘির মিশ্রণে ভালোভাবে মেশানো হয়। এরপর এটি ছোট ছোট আকারে কেটে আকার দেওয়া হয়। চুলায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ভেজে নিলে এর খাস্তা ও মচমচে টেক্সচার তৈরি হয়। এটি সাধারণত হালকা সোনালী রঙের হয় এবং মিষ্টির ঘ্রাণ ও স্বাদে অতুলনীয়। স্বাদ ও বৈশিষ্ট্যঃ চালের কটকটির খাস্তা, মচমচে টেক্সচার এবং ঘি ও চিনির মিষ্টি মেলবন্ধন এটিকে অন্যান্য খাবার থেকে আলাদা করে। এর হালকা ও মচমচে টেক্সচার মুখে দিলে তৎক্ষণাৎ গলে যায়, এবং এর মিষ্টতা অতিরিক্ত না হয়ে তৃপ্তিকর মনে হয়। এর স্বাদ শুধুমাত্র বগুড়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে সারা দেশে সুনাম অর্জন করেছে।
চালের কটকটির জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক সাফল্যঃ বগুড়ার চালের কটকটি এখন শুধুমাত্র স্থানীয় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে এবং উৎসবের সময় এটি ব্যাপক চাহিদা পায়। এর সহজলভ্যতা এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় চালের কটকটি মানুষের কাছে আরও প্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন উৎসব বা উপহার হিসেবে এই মিষ্টির ব্যবহার বেড়েছে, যা বগুড়ার ব্যবসায়িক সফলতার একটি দিকও।
শেষ কথাঃ বগুড়ার চালের কটকটি শুধু একটি খাবার নয়, এটি বগুড়ার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী পরিচয়ের প্রতীক। এর বিশেষ স্বাদ ও প্রস্তুতি প্রক্রিয়া এটিকে অন্য খাবার থেকে আলাদা করেছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। যারা বগুড়ায় ভ্রমণ করেন, তারা এই চালের কটকটির স্বাদ না নিয়ে ফিরতে চান না।