বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সমান জনপ্রিয় বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার আজ সোমবার বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬শে ফাল্গুন, ১০ মার্চ ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ। তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গোয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে। তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডএর সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারএর প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তার প্রথম গল্প “অন্যমাত্রা” লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে। সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস 'দৌড়' ছাপা হয়েছিলো ১৯৭৫ সালে গৌচপ্রম ছদ্মনামে দেশ পত্রিকায়। তিনি শুধু গল্প বা উপন্যাসের মধ্যেই তাঁর লেখনী সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাসেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের বিষয় ভিন্ন, রচনার গতি এবং গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকদের আন্দলিত করে।প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে চলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে জিততে পারলেন না ‘কালপুরুষ’।

হিন্দুস্থান টাইমসের সংবাদ অনুযায়ী ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই ভুগছিলেন তিনি। ২৫ এপ্রিল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তবু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন কখনও কখনও। রবিবার পরিবারের সূত্রে জানানোও হয়, কিছুটা ভালো আছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও শেষরক্ষা হল না।

গত দশ বছরের বেশি সময় ধরেই নাকি ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) সমস্যা ছিল তাঁর। সেই সমস্যার চিকিৎসাও হত। কখনও কখনও বাড়াবাড়িও হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সমরেশ মজুমদারের মেয়ে দোয়েল সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার আগের দু’দিন কেবিনে রাখা হয়েছিল প্রখ্যাত সাহিত্যিককে। কিন্তু শনিবারই বিকেলে তাঁকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা পরের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখবেন বলেছিলেন। তার মধ্যেই ঘটে গেল অঘটন। না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্র থেকে হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি স্ট্রোক (multiple right-sided embolic infarcts) হয়েছিল তাঁর। এছাড়াও বালবার পালসি (speech and swallowing impairment)-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এর কারণেই ফুসফুস বিকল হয়ে যায় তাঁর। এছাড়া দীর্ঘ দিন সিওপিডি, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং myasthenia gravis-এর মতো সমস্যাও ছিল তাঁর। সব ক’টি সমস্যা একসঙ্গে এই কঠিন পরিস্থিতি ডেকে আনে। সোমবার বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়।

প্রয়াত সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরাম মনে করে, সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের যে ক্ষতি হলো, তা কখনো পূরণ হবার নয়।

বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরাম বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সমান জনপ্রিয় প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।