গত ২২ শে আগষ্ট রাত ৯ টার খবর দেখছিলাম। বাংলাদেশের সময় চ্যানেলে, পরের
দিন দুপুর ২ টায়। প্রথমেই “বি, এন, পি” এর নিউজ কভারেজ। পরে আওয়ামী লীগ
নেতৃবৃন্দের। সাবেক বামপন্থী নেতা, মন্ত্রী কাজী জাফর আহম্মেদের ৮ম
মৃত্যুবার্ষিকির স্মরণ সভা। ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যানারের নীচে লেখা “জাতীয়
পার্টি”।
তাতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন বি, এন, পি মহাসচিব মীর্জা
ফকরুল ইসলাম আলমগীর। কি বল্লেন তিনি। তিনি বল্লেন: “জঙ্গি নাই”। জঙ্গি
দেখান। এটা হল “আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক”। কোন জঙ্গি নাই। আওয়ামী
লীগ পশ্চিম বিশ^ ও ভারতকে দেখাচ্ছে দেশে জঙ্গি আছে। এটা হলো আওয়ামী লীগের
তৈরি করা নাটক। আওয়ামী লীগের নেতা ও তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ তিন্নি কি
বললেন, “বি,এন,পি মিথ্যাচার করছে”।
আমাদের বাঙ্গালী সমাজে কেউ বোকা না, সবাই কমবেশি চালাক। একটা
প্রবাদ আছে। “বাঙ্গালীরে হাইকোর্ট দেখাইস না”। সুতরাং বলতে চাচ্ছি, কার
বক্তব্য সত্য, কার বক্তব্য মিথ্যা। এটা দিবালোকের মত সত্য। এটা সবাই বোঝেন
“ফখরুল সাহেব”।
বাংলাদেশ “কৃষি” প্রধান দেশ। যারা কৃষি কাজ করেন তারাই
কৃষিজীবি, অর্থাৎ “কৃষক”। যারা আমাদের মা-বোন, তারা কৃষাণী। আর যারা
রাজধানীতে কাজ করেন, অথবা শাহরাঞ্চলে তারাই “শ্রমিক”। অর্থাৎ শ্রম বিক্রি
করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তারাই “শ্রমিক”।
বাঙালির “শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি” সবই বেশ সমৃদ্ধ এবং তার একটা
ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আমাদের আছে “রবীন্দ্রনাথ”, আছেন “নজরুল” আছেন
“সুকান্ত”। আছেন “খুদিরাম”। আছেন “প্রীতিলতা”। আছেন শিল্পের
আচার্য শিল্পাচার্য “জয়নুল আবেদিন”। আছেন “পটুয়া কামরুল হাসান”।
আছেন “এস এম সুলতান”। আছেন “কাইয়ুম চৌধুরী”। আছেন “রফিকুল
নবী-রনবী”। আছেন শিল্পী “হাসেম খাঁন”। আছেন “হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী”
“শের এ বাংলা ফজলুল হক”। আছেন “মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী”। আমাদের
আছেন আন্তর্জাতিক পরমানু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া। আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা
“শেখ রেহানা”। আছেন তার সন্তানেরা। আছেন “বিদ্যাসাগর”। আছেন
“মধুসূদন”। আছেন “শরৎচন্দ্র”। আছেন আমাদের “সুফিয়া কামাল”। আছেন
“বেগম রোকেয়া”। আছেন “রোকেয়ার পথিকৃত আমাদের শ্রদ্ধেয় ৯ ভাইয়ের
পিতা মো: খোরাজ আলী। যিনি ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “খাতুনিয়া
সার্কুলেটিং লাইব্রেরী”। যে লাইব্রেরী ছিল কেবলমাত্র নারীদের জন্য এবং তা ছিল
ভ্রাম্যমান। খেরাজ আলী তার ব্যাগে করে - বই রংপুর শহরে এবং দুরদুরান্তে
বাইসাইকেলে চেপে বাড়ীতে বাড়ীতে দিয়ে আসতেন। মাসে চাঁদা ছিলো পাঁচ
পয়সা। এবং নারীদের সপ্তাহে দুটি করে বই দিতেন। এটি ১৯৩২ সালের কথা। ৫২
সালে পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে যায়।
যখন মহিলাদের জন্য শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। মেয়েদেরকে পর্দার মধ্যে থাকতে হত। যখন
বেগম রোকেয়া পর্দা প্রথা ভাঙ্গলেন। রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ায় এটি প্রতিষ্ঠা
করেন। এই লাইব্রেরীর জন্য কবিগুরু নিজের হাতে লিখে “শান্তি নিকেতন” থেকে
৭টি বই পাঠান। খেরাজ আলী তাঁর লেখা দুটি বই, “বাইরের ডাক ও ঘরের কথা” ও
“পীরখাঞ্জা” কবিকে পাঠালে উত্তরে কবির পক্ষে তাঁর একান্ত সচীব শ্রী অনীল
কুমার চন্দ্র উত্তর পাঠান। যা আমার ভাই চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের
সাবেক ডীন অধ্যাপক মতলুব আলীর নিকট সংরক্ষিত আছে।
এই পাঠাগারে যে বইগুলি পাঠান ১৯৩২ সালে-কবিগুরু। তার তালিকা নি¤েœ দেওয়া
হল ঃ
১। “কথা ও কাহিনী”; ২। “পাশ্চাত্য ভুবন”; ৩। “শারদোৎসব”; ৪। “ছুটির পড়া”;
৫। “জাপানে পারস্যে”; ৬। “হাস্য-কৌতুক” এবং ৭। “আধুনিক সাহিত্য”।
আমাদের আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। আছেন তার সন্তানেরা। আছেন
বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। যিনি শোকাবহ ১৫ই আগষ্টে
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শহীদ হন। আছেন মনি ভাই এবং তাঁর দুই সন্তান জনাব পরশ এবং
জনাব তাপস। আছেন শেখ সেলিম। আছেন ১৪ দলের মূখপাত্র এবং সিনিয়র নেতা
আমু ভাই। আছেন ওবায়দুল কাদের। আছেন মীর্জা আজম প্রমূখ। বিশে^র চারটি
পরাশক্তি ভারত-চীন-রাশিয়া-আমেরিকা। এর মধ্যে তিন শক্তি-“ভারত-রাশিয়া এবং
চীন”। আগামী নির্বাচনে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র
সাথে।
আছেন ১৫ই আগষ্ট ৭৫- এ একমাত্র প্রতিবাদকারী সেনা অফিসার শহীদ
সাফাত জামিল। আছেন সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফ। আছেন চিটাগাং
সার্কিট হাইজে নিহত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়উর রহমানের হত্যাকারী মঞ্জু। আরো
আছেন মুক্তিযুদ্ধে পা হারান এবং জাসদ নেতা কর্নেল তাহের। যিনি অন্যতম সেক্টর
কমান্ডার। তিনি ৭৫-এবং ৩রা নভেম্বর থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত সিপাহী বিপ্লব
সংগঠিত করেন এবং নেতৃত্ব দেন। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করেই মিথ্যা
মামলায় ফাঁসিতে লটকিয়ে হত্যা করেন। সেই সঙ্গে জাসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি
আব্দুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক আ,খ,ম রব। জাসদের তাত্তি¡ক সিরাজুল আলম খানসহ
কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরির অনেক নেতা কর্মীকে জেলে ভরেন। আছেন
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানি। যিনি ১৯৭৫ সালের ২৫শে
জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টে শাসন জারি করেণ। তখন ইত্তেফাকের সম্পাদক
ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন এবং জেনারেল ওসমানির পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন।
১৫ই আগস্ট সকালে খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ “ রেডিও বাংলাদেশ” পরিদর্শনে
যান। তখন খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ সোফায় বসে আছেন। দাঁড়িয়ে জেনারেল
ওসমানি। এবং জিয়াউর রহমান আর্মির পোশাক পরিহিত টেবিলের কোনায় বসে
আছেন। দুই জন বঙ্গবন্ধুর ঘাতক সৈনিক পাহারা দিচ্ছিলেন। প্রেসিডেন্ট
এরশাদের আমলে বাংলা একাডেমীর থেকে প্রকাশিত ফটো অ্যালবামে উপরোক্ত
ছবিটি ছাপানো আছে। মইনুল হোসেন এখনও বেঁচে আছেন। উনি তার
সাক্ষি। এ কারনেই যখন জিয়াউর রহমানের কফিন নিয়ে যাত্রা করা হয়। লাশের সামনে
দ্রæতবেগে হেঁটে চলছেন-ওসমানি।
আছেন আলী যাকের। সারা যাকের আছেন অধ্যাপক কবির চৌধুরী, আরো
আছেন শাহরিয়ার কবির। আছেন অধ্যাপক মুনতাছির মামুন প্রমূখ। আরো
আছেন “কমরেড মনি সিং”। আছেন “কমরেড ফারহাদ” । আছেন অধ্যাপক
মোজাফফর আহম্মেদ। আছেন কমরেড রাশেদ খান মেলন। হাসানুল হক ইনু। কমরেড
দিলীপ বড়–য়া।
আমাদের আছেন আন্তার্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ঠ পরমানুবিঞ্জানী
“ওয়াজেদ মিয়া”। আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিশেষজ্ঞ “সজীব
ওয়াজেদ জয়”। আছেন “সায়মা ওয়াজেদ পুতুল”। আছেন “শহীদ জননী জাহানারা
ঈমাম”। আছেন “শহীদুল্লা কায়সার”। আরো আছেন “জহির রায়হান”। আছেন
“ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লা”। আছেন “আবুল ফজল”। জেলায় জেলায় যে সমস্ত
বুদ্ধিজীবি শহীদ হয়েছেন- যাঁদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের বাংলাদেশ। তাদের
শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করি। আর যারা রাযের বাজারের বধ্য ভ‚মিতে শুয়ে আছেন, সেই সমস্ত
বুদ্ধিজীবিদের এবং নাম জানা-অজানা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আজ শ্রদ্ধা
জানাই। যাদের জীবনের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ
“বঙ্গবন্ধুর” বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ “শেখ হাসিনার” বাংলাদেশ। আজকের
বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ শহীদের বাংলাদেশ। দুই লক্ষ মা-বোন। যাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে
আজকের বাংলাদেশ । তাদের অর্থাৎ এই সকল ধর্ষিতা মা-বোনদের বীরঙ্গনাদের
বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ। আমাদের ইতিহাস। হাজার
বছরের ইতিহাস। বাঙালী বৃটিশের শোষণ ২০০ বছরের। পশ্চীম পাকিস্তান আমাদের
২৩ বছর শোষণ করেছে। বাঙালী যুগ যুগ ধরে শোষিত-নির্যাতিত।
স্বাধীনতা বানাম পাকিস্তানী ধ্যান-ধারনা। রাজাকার বনাম মুক্তিযোদ্ধা।
আলবদর-আলসামছ দেলোয়ার হোসেন সাঈদী- গোলাম আযম বনাম মুক্তিযোদ্ধা ৭১
এ ধর্ষিতা নির্যাতিতা মা-বোনরা। এ যুগ প্রযুক্তির যুগ। এ যুগ
কম্পিউটারের যুগ। আমাদের আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। আছেন বঙ্গমাতা
ফাজিতুলন্নেছা মুহিব। আছেন শেখ কামাল। আছেন সুলতানা কামাল, আছেন
শেখ জামাল। আছেন রোজী জামাল। আছেন শেখ রাসেল। আছেন সেরানিয়াবাদ ১৫
ই আগষ্ট। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সাথে নিহত ওনার পুরো পরিবার। যিনি ছিলেন মাননীয়
প্রধানমন্ত্রির আপন ফুপা। আছেন ৭৫ এর ৩রা নভেম্বর নিহত সৈয়দ নজরুল ইসলাম”।
আছেন “তাজউদ্দিন” আছেন “মনসুর আলী ”। আরো আছেন
“কামরুজ্জামান”। আছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যাক্তিত্ব রামেন্দ মজুমদার।
আছেন ফেরদৌস মজুমদার।
আমাদের আরো আছেন অগ্নি কন্যা মতিয়া চৌধুরী। যিনি বর্তমান
সংসদের উপনেতা।
“বি, এন, পি বনাম আওয়ামী লীগ” “জামাত বনাম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
শক্তি”।“ শিবির বনাম ছাত্রলীগ”। জামাত-শিবির বনাম মুক্তিযুদ্ধের বাম শক্তি।
আগামী নির্বাচন ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি এক হও। জামাত – বি,এন,পি রুখে
দাঁড়াও। মাহন আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী “দীর্ঘজীবি হোন”।
“জয় বাংলা”
“জয় বঙ্গবন্ধু”
“বাংলাদেশ চিরজীবি হোক”
লেখক:
চারুশিল্পী
চারুকলা অনুষদ
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়।
এবং
আর্টিস্ট (অবঃ)
প্রসেস শাখা
বি জি প্রেস
ঢাকা।