সতীর্থ সাংবাদিক মাইন উদ্দিনের তিরোধানে।
দ্রুপদ শেষে আসর ভেঙ্গে দিয়ে জীবনের শেষ রোববার পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় অবগাহন করতে করতে, বিদায়ের নির্মম বাঁশীতে ফুঁ দিয়ে আমার সতীর্থ বন্ধু মাইন উদ্দিন একদলা হিমহিম বাতাসে মিশে গেলো।
চোখেমুখে তাঁর কোন্ তৃষ্ণা লেগে ছিলো কিনা, তখনও যা থাকে মানুষের কাঙ্ক্ষার সীমানায় কেউ জানলো না। দিন শেষে, মনেমনে কার সাথে বসেছিলো পান্থজনের নিবিড় এই সখা! জানা হলো না! একটি কথাও শব্দ তোললোনা! শুধু বাতাসে পাখা ঝাঁপটিয়ে গোঁত্তাখেলো একঝাঁক পাখী ! হিসেবের শেষ অঙ্কটা মিলেছিলো তো! তা’ও আর জানা হলো না !
একজন সত্য-সুন্দর 'মাইনের' তিরোধামে আর কত বেদনায় নীল হতে হবে আমাকে ! সইতে হবে অব্যক্ত দহন ! আমি জানিনে !
আমি শুধুই কেঁদেছি ! যেন হৃদয়ে অব্যাহত রক্তক্ষরণ !
এই ভোরবেলাতেও কি ভীষন মায়া মায়া কান্না পাচ্ছে আমার। দুচোখ ছাপিয়ে সমস্ত জীবনের লুকিয়ে রাখা অভিমানী কান্না শরীর ভেদ করে ভীষনবেগে প্লাবন হয়ে তেড়েফুঁড়ে আসছে !
সময়ের স্রোতে এর পরও বয়ে যাবে দিন-রাত ! কতোবার চাঁদ উঠবে, চাঁদ মিলিয়ে যাবে! কতোবার পূর্ণিমা-অমাবস্যার পালাবদল হবে ! এভাবে একটি, দু’টি করে বছর পার হবে ! কতো ভোরে কত সন্ধ্যায়, কতো দুপুরে কতো মধ্যরাতে যন্ত্রণার কতো স্বপ্ন দেখা হবে --!
প্রতিথযশা এই সাংবাদিক চাঁছাছোলা স্পষ্ট মানুষ ছিলেন। তাঁর লেখায় এবং জীবনাচারণ সর্বক্ষেত্রেই। এ কারণে তাঁর যে খুব আপন লোক খুব বেশি ছিলো, আমার তা মনে হয় না। সাংবাদিকদের তা থাকেও না।তবে আত্মীয়, অনাত্মীয় বন্ধু ও স্বজন সকলের সঙ্গেই কথা বলার স্বভাব ছিলো তাঁর এক ধাঁচে ! কোন রাখঢাক লুকোচুরি নেই। যা বলার তাই বলে গেছেন নির্বিবাদে। কে গোমড়া হলো, কে খুশি হলো তিনি তার ধার ধারতেন না।
জীবনে কখনও কেউ তাঁর জন্যে অস্বস্তিবোধ করুক তিনি কখনোই তা চাননি। কখনো কাউকে বিরক্ত করার চেষ্টা করেননি।
আমি বুঝতে পারছিনে কখন কোথায় কিভাবে আমায় থামতে হবে !
ফুসফুস যে বাতাস আর টেনে নিতে পারছে না বুকের ভেতর ! মুখ গলা শুকিয়ে আসছে !
পানি খেতে ইচ্ছে করছে খুব।ব্লাড সুগার ফল করে হাইপোগ্লাইসেমিক এট্যাক হতে যাচ্ছে না তো ! ব্রেইন সেলগুলো কি অকেজো হয়ে যাচ্ছে ? অন্ধকার হয়ে আসছ কেনো আমার চারপাশ !
প্রিয় মইন, যেখানেই থাকো, ভালথেকো ভাই আমার ! তুমি থাকবে আমাদের প্রার্থনায়।
----তাসের মাহমুদ।