এম আব্দুর রাজ্জাক উত্তরবঙ্গ থেকে :


মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীর আলমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার সকালে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ পৌঁছানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। তাঁদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।

৪ অক্টোবর রাতে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নীলফামারীতে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালনের সময় বিস্ফোরণে নিহত শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীর আলমের স্বজনদের আহাজারি। বুধবার সকালে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে
 বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে জাহাঙ্গীর আলমের লাশ ডিমলার রানী বৃন্দারানী (আরবিআর) সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এসে পৌঁছায়। লাশ আসার খবরে সেখানে কয়েক হাজার মানুষ হাজির হয়েছিলেন। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে মানুষের ভিড় ঠেলে চার কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে লাশ পৌঁছায় দুপুর ১২টার দিকে।

শেষ বারের মতো জাহাঙ্গীরের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা

বাড়িতে তখনো চলছিল মাতম। শোকে মুহ্যমান জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শিমু আক্তার (২০) শুধু ফ্যালফ্যাল করে প্রিয় মানুষটির মুখ খুঁজছিলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন স্বজনেরা। শেষবারের মতো স্বামীর মুখ দেখেই মূর্ছা যান শিমু আক্তার।
জাহাঙ্গীর আলমের মা গোলেনুর বেগম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘মোর জাদু মোক কেনে মা মা করি ডাকে না। তুই কি আর মোক ডাকবি না বাবা?’ বাক্‌রুদ্ধ হয়েছিলেন বাবা লতিফুর রহমান।’

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন চতুর্থ। বড় ভাই সেনাসদস্য মো. আবুজার রহমান বলেন, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। এক বছর আগে বাড়িতে এসে বিয়ে করেন। ১০ মাস আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে যান তিনি।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সেখানে পার্বতীপুর শহীদ মাহমুদ সেনানিবাস থেকে আসা ক্যাপ্টেন তানজিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৫ জন সেনাসদস্যের একটি দল সশস্ত্র সালাম প্রদান করে।

দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী-১ (ডোমার ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন, ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লাইছুর রহমান প্রমুখ।