পহেলা বৈশাখ—এটি শুধু একটি দিন নয়, এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই দিনে মিশে থাকে রঙ, গান, কবিতা আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া। দেশ ছাড়িয়ে এই উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে প্রবাসেও, যেখানে হাজার হাজার বাঙালির হৃদয়ে জেগে ওঠে শেকড়ের টান। “বৈশাখী আবাহনে মানবের জয়গান”—বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে কেন্দ্র করে ছয়টি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত এক স্মরণীয় অনুষ্ঠান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে গত ৩রা মে, শনিবার, ২০২৫, নিউ ইয়র্কের ইয়র্ক কলেজের অ্যাকাডেমিক কোর অ্যাট্রিয়াম-এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এই মহোৎসব। এই আয়োজনে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, শের ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনসমূহ।
বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা। মুখোশ, ফুলের মালা, আলপনার নকশা আর রঙিন পতাকা নিয়ে এই শোভাযাত্রা যেন রঙে রঙে ভরে তোলে নিউ ইয়র্কের আকাশ। ‘এসো হে বৈশাখ’গান আর ঢাক-ঢোলের ছন্দে প্রাণ ফিরে পায় বাংলাদেশের গ্রামবাংলা। উদ্বোধনী পর্ব, শুভেচ্ছা বক্তব্য ও নববর্ষ সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে অতিথিরা স্মরণ করেন বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং প্রবাসে সংস্কৃতি ধরে রাখার গুরুত্ব। এরপর একে একে মঞ্চে আসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পরিবেশনা করেন কবিতা, রবীন্দ্রসংগীত, নৃত্য ও নাট্যাংশ—যা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লোকসংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি রথীন্দ্রনাথ রায়-কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ ক্রেস্ট দেওয়ার মাধ্যমে এ বছর নববর্ষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। মুক্তমঞ্চের কনসার্টে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী প্রতীক হাসান তাঁর গান ‘তোমার বাড়ির রঙে রঙ মেশানো দেখেছিলাম বায়স্কোপ’ গেয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। বৈশাখের সন্ধ্যায় তাঁর কণ্ঠে উঠে আসে হারানো যৌবনের আবেগ, শেকড়ের টান আর বুকভরা নস্টালজিয়া। এই উৎসব শুধুই আনন্দ নয়, এটি ছিল আত্মিক সংযোগের এক অনন্য অধ্যায়। পুরোনো বন্ধুরা খুঁজে পেয়েছেন একে অপরকে, গল্পে-হাসিতে ফিরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই সোনালি দিনগুলো। একদিনের এই উৎসব যেন সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে। “বৈশাখী আবাহনে মানবের জয়গান” শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতি চর্চার এক বলিষ্ঠ বার্তা। শেকড়ের প্রতি টান, ঐতিহ্যের গৌরব এবং প্রজন্মকে সম্পৃক্ত রাখার প্রয়াসই এই আয়োজনকে করে তুলেছে সত্যিকারের মহোৎসবে। প্রবাসে থেকেও বাংলা সংস্কৃতির এমন প্রাণবন্ত রূপ তুলে ধরা নিঃসন্দেহে এক গর্বের অধ্যায়। এই দিনটি হয়ে উঠেছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এক অপূর্ব সাংস্কৃতিক মিলনমেলা, যেখানে তারা ফিরে পেয়েছিল নিজেদের হারানো শেকড়।