একটি দেশের জাতীয় সংগীত সেই দেশ ও জাতির কাছে মর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক। একটি জাতিকে স্বদেশের মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করে তো বটেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ও রাষ্ট্রীয় আচারে সংগীতের পরিবেশনা সেই দেশ ও জাতির প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। তাই জাতীয় সংগীতে রয়েছে আলাদা একটি গুরুত্ব। সম্প্রতি আয়না ঘর ফেরত সাবেক এক সেনাকর্তা তার বন্দী জীবনের বর্ননা দেয়ার সময় সংবিধানের সাথে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানান। তার এই পরিবর্তনের কথা শোনার পর তখন গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলাম না। এখন ভাবছি কোনো কিছুকেই ছোট করে দেখা চলবে না। শৈশবে সিনেমা দেখতে গিয়ে যখন অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করতাম কখন সিনেমা শুরু হবে? যখনই জাতীয় সংগীতের সাথে বাতাসে পতপত করে পতাকা উদ্ভাসিত তখন একজন বদমাশকেও দেখিনি বসে থাকতে। সকলকেই দাঁড়িয়ে সম্মান দেখাতে দেখেছি। "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি "- স্রষ্টা পৃথিবীকে তার মহিমায় অপরূপ রূপে সাজিয়েছেন। বাংলার এই রূপ সোনার সাথে তুলনা করা হয়েছে কারণ এই মাটিতে কোনো প্রকার বীজ পড়লেই গাছ জন্মায় আর সেই গাছ ফল ফসলে ভরে উঠে। সেই বাংলাকেই ভালবাসি। "চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি" - এই বাংলা ষড়ঋতুর দেশ। ঋতুর বৈচিত্র্যের কারণে প্রকৃতি বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য রূপ ধারণ করে।
বিভিন্ন মৌসুমে বাতাসের গতি-প্রকৃতি, ধ্বনি আমাদের কানে বাঁশির সুর তোলে। তাই বাংলার আকাশে বাতাসে এই মধুর মিলনকে বাঁশির সুরের সাথে তুলনা করে বাংলাকে ভালবাসার কথা বলা হয়েছে। "ও মা,ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,মরি হায়,হায় রে"- পৃথিবীতে স্রষ্টার পরে যদি কাউকে ভালবাসে সে হচ্ছে মা। নিজের দেশ এতোটাই আপন প্রতিটি মানুষের কাছে। তাই দেশকে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে।দেশপ্রেম এবং মাতৃভক্তির প্রকাশ পেয়েছে।দেশপ্রেম ঈমানের অন্যতম অংশ। তাই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে আবেগতাড়িত হয়ে দেশকে মা বলে সম্মোধন করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন, গানটি ভিন্ন দেশের এবং বিধর্মী একজন গীতিকারের লেখা বলে জাতীয় সংগীত হিসাবে মেনে নিতে অসুবিধা?তাহলে, "ধন ধান্যে পুস্পে ভরা" কী মুসলমান কারোর লেখা? এই গানের গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল। তিনি কোন ধর্মের? আবার নজরুল নিজেও অনেক শ্যামা সংগীত লিখে গিয়েছেন। তাই কবিদের জাতপাত বিচার করতে হয় না। দেশের গন্ডি পেরিয়ে কবিরা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেন। ধর্ম দিয়ে কবিদের আবদ্ধ করা যায় না। কবিরা কোনো ধর্ম বিশেষের জন্য লেখেন না। তারা মানুষের জন্য লেখেন। তাই সবার আগে মানুষ হওয়াটা জরুরি। এই দেশটাকে ভাঙতে প্রতিদিন কেউ না কেউ চক্রান্ত করছেই।
এই সোনার বাংলাকে আজকে ভালবাসবেন না তো কবে ভালবাসবেন? তাই আসুন দৃপ্তকণ্ঠে একবার নিজেকে নিজে বলি, "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি" তা যাই হোক, আবহমানকাল থেকেই কখনো কখনো পরিবর্তন, আবর্তন, বিবর্তন ঘটে। জাতীয় সংগীত কোনো ধর্মগ্রন্থের বিষয় নয় যে ধরে রাখতে হবে। তবে চুড়ান্ত কথা এই জাতীয় সংগীত থেকে কেউ যদি আরো ভালো কিছু সৃষ্টি করতে পারে সেই জাতীয় সংগীত আপনা আপনি মানুষের মনের জায়গা করে নিবে। জোরজবরদস্তি করার কিছু নাই। সকলের শুভবোধ জাগ্রত হোক। সেই অপেক্ষায়...।