নন্দিনী লুইজা
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসব, আর ঈদ মানেই বাড়ি ফেরা। কর্মব্যস্ত জীবনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তির মাঝে ঈদ নিয়ে আসে এক অন্যরকম প্রশান্তি। বছরের পর বছর শহরের ব্যস্ততায় কাটানোর পর ঈদে বাড়ি ফেরা যেন হৃদয়ের এক অমোঘ ডাক। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতিই বাড়ি ফেরার পথে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। শহরের ব্যস্ততায় প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপের মাঝে পরিবারের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। ঈদ সেই সুযোগ এনে দেয়, যখন আমরা ছুটে চলি শেকড়ের টানে- মা, বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন—সবাই অপেক্ষা করে কখন আমরা ঘরে ফিরবো। মায়ের সেই চিরচেনা ডাক, বাবার স্নেহভরা চাহনি, ছোট ভাইবোনের উচ্ছ্বাস—এসবই যেন বাড়ি ফেরার পথকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। স্টেশনে, বাস টার্মিনালে মানুষের ভিড় যতই থাকুক না কেন, হৃদয়ে এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাস কাজ করে, কারণ সামনে অপেক্ষা করছে ভালোবাসায় ভরা এক ঈদ।
ঈদের সময় বাড়ি ফেরার পথে যাত্রাটা সবসময় সহজ হয় না। ট্রেন, বাস, লঞ্চ—সবকিছুতেই থাকে উপচেপড়া ভিড়। টিকিট পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন, যানজটের ধৈর্যধারণ, ফেরিঘাটে অপেক্ষা—এসব কষ্ট হলেও বাড়ির পথে থাকার উত্তেজনা সব ভুলিয়ে দেয়। বাসের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা, গ্রামের পথের পরিচিত গন্ধ পাওয়া, ধীরে ধীরে বাড়ির কাছে পৌঁছানো—এসব অনুভূতিই আলাদা। ঈদে বাড়ি ফেরা কেবল শারীরিক যাত্রা নয়, এটি আত্মারও এক যাত্রা, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ আনন্দে ভরে ওঠে আর প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়। যখন বাড়ির আঙিনায় প্রথম পা রাখি, তখন হৃদয়ে এক শিহরণ বয়ে যায়। মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন অপেক্ষায়, বাবা চেয়ারে বসে চোখে আনন্দের জল নিয়ে তাকিয়ে থাকেন, ছোট ভাইবোন ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে—এমন দৃশ্য মনে হয় সারাজীবন হৃদয়ে গেঁথে রাখার মতো। বাড়ি ফেরা মানে শুধুই শারীরিকভাবে পৌঁছানো নয়, এটি মানসিক প্রশান্তিরও এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মায়ের হাতের রান্না, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে হাসি-আড্ডা, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়া—এসবই ঈদের প্রকৃত আনন্দ এনে দেয়।
ঈদের আগের রাতে যা টুকিটাকি কেনা বাকি তার জন্য মার্কেটে যাওয়া।যেন বাদ পড়া সদাই না হলে ঈদ মাটি। ঘরে ফিরে মেহেদী দেওয়া।মেহেদী এখন সামাজিক ঈদ উৎসব।দিতে হবে। ঈদের সকাল মানেই নতুন সূর্যের আলোয় এক আনন্দময় উদ্ভাস। সকালে উঠে নতুন পোশাক পরে বাড়ির ছেলেরা ঈদের নামাজে যাওয়া, পুরোনো বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি, আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়ানো। মেয়েরা নানান নতুন নতুন রান্না করা নিয়ে ব্যস্ত।—এসবই ঈদের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ঈদের সালামি পাওয়ার উচ্ছ্বাস, ছোটদের মুখের হাসি, মিষ্টির ট্রে হাতে ঘুরে বেড়ানো—এসবই বাড়িতে ঈদ উদযাপনের অনন্য অংশ। শহরের ব্যস্ত জীবনে এসব অনুভূতি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে, কিন্তু বাড়ি ফিরলেই সব আবার ফিরে পাওয়া যায। ঈদের আরেকটি বড় আনন্দ হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া। মায়ের হাতে বানানো সেমাই, পোলাও, গরুর মাংস—এসব খাবারের স্বাদ শহরের কোনো হোটেল-রেস্টুরেন্ট দিতে পারে না। সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া, গল্প করা, পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করা—এসব মুহূর্ত বছরের অন্য কোনো সময়ে খুব কমই হয়। ঈদ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি পরিবারকে একত্রিত করার এক অনন্য উপলক্ষ।যে সব পরিবারে বাবা মা জীবিত নেই তাদের বাড়িতে ফেরা হয় নিজ তাগিদে,ভাই বোন, বাচ্চাদের মধ্যে অনুভূতি আগামী প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে। সারা বছর ব্যস্ততার কারণে অনেক আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ হয় না।
ঈদ সেই সুযোগ এনে দেয়, যখন সবাই একসঙ্গে হয়, পুরোনো বন্ধুরা একত্রিত হয়, হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলো আবার নতুন করে জোড়া লাগে।যারা বাড়িতে ফিরতে পারে না তাদের সাথে ফোন করে কুশল বিনিময় করা হয়। পাড়া-মহল্লায় বেড়ানো, চেনা পথ ধরে হাঁটা, শৈশবের সঙ্গীদের খুঁজে পাওয়া—এসবই ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দের অংশ। তবে ঈদে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তাঘাটে যে যানজট ভিড় থাকে এতে করে অনেক সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যা আমাদের কাম্য নয়। এই অঘটন গুলো হৃদয়কে বিদগ্ধ করে আনন্দে ভাটা পড়ে।তাই আমরা সরকার সবাই সজাগ থাকি। কেননা এই সময় আমরা আবেগকে এত বেশি দাম দেই ফলে শত ভিড়ের মাঝেও সতর্ক থাকতে পারিনা এই ক্ষেত্রে সবার আরো একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ঈদে বাড়ি ফেরা শুধুই একটি যাত্রা নয়, এটি এক আবেগ, এক অনুভূতি। শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যাওয়া, শেকড়ের টানে ছুটে চলা—এসবই ঈদের প্রকৃত অর্থ। ঈদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি পরিবার, ভালোবাসা ও মিলনের এক মহা উৎসব। বাড়ি ফেরার আনন্দ, মায়ের হাতের রান্না, বাবার স্নেহ, আত্মীয়-স্বজনের হাসিমুখ—এসবই ঈদকে সত্যিকারের বিশেষ করে তোলে। তাই, ঈদ মানেই শুধু নতুন পোশাক বা সুস্বাদু খাবার নয়, ঈদ মানে একসঙ্গে থাকা, ঈদ মানে সৌহার্দ্যপূর্ণ পারিবারিক সম্পর্ক।