নন্দিনী লুইজা
অলসতা আর অবসাদ বাদ দিয়ে কর্মে দীক্ষিত হই ইদানি একটি বিষয় খেয়াল করছি বাংলাদেশে আনাচে কোনাচে অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা শুরু হয়েছে। এমনকি ফুটকোটের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। রোজার মাসে প্রায়ই দেখা গেছে প্রত্যেক বাড়ির ইফতারি বাহির থেকে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে কেনা হয়েছে। এমনও দেখা গেছে বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের দোকানে বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বেশ বন্ধু-বান্ধবকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছে। এটাও বলতে শোনা গেছে বা অনেক হোটেল রেস্তোরাঁ ধরা পড়েছে বাসি পচা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে বলে। দোকান মালিকদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। সব ঠিকঠাক। তবে প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কি নিজেকে, আপনার দেশকে ভালোবাসেন?
তাহলে কেন পরিবার থেকে এই শিক্ষাটা শেখানো হচ্ছে না বাড়িতে তৈরি করা খাবার বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্যসম্মত। বিগত ১০ বছর আগেও দেখিনি মানুষের এভাবে বাহিরে খাওয়ার প্রবণতা। তাহলে কি দেশের পরিবারগুলো অধিক মাত্রায় ব্যস্ত হয়ে গেছে, নাকি অলসতা, নাকি সিরিয়াল দেখা, অন্যের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় কমে যাচ্ছে। একটু বিষয়টা নিয়ে ভাবুন এ দেশের অর্ধেক নারী অর্ধেক পুরুষ। তাহলে এত কেন বাহিরে খাবার খেতে হচ্ছে, বাড়িতে কি রান্না করা হচ্ছে না। নাকি করতে চাচ্ছেনা। নাকি বাহিরে খাবার খেলে নিজেকে আধুনিক মনে হচ্ছে। আমরা এক মুখে শত কথা বলছি। কোনটা সঠিক।
একবার বলছি সস্তা খাবার খেতে চাই, ভালো খেতে চাই। ভালো খাবার খেতে গেলে পয়সা ব্যয় করতেই হবে। হোটেল রেস্তোরেরা কিন্তু ব্যবসা করতে বসেছে। তাদের একটাই চিন্তা মানুষকে সস্তা দিতে হবে, ব্যবসা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যের বাজারে কি করে মানুষকে ভালো, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার স্বল্প টাকায় তারা সরবরাহ করবে। ফলে তারা বাসি পচা খাবারটাও টাটকা খাবার সঙ্গে মিশিয়ে আপনার সামর্থের মধ্যে উপস্থাপন করছে। এই খাবারগুলো খেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি আর অসুস্থ হওয়ার কারণে ওষুধের দোকানদাররা ওষুধের পসড়া খুলে বসেছে। ধুমছে ওষুধের ব্যবসা চলছে। এমন কোন পরিবার দেখাতে পাই না যে সেই পরিবারে মাসে খাবারের চেয়ে ওষুধের খরচ বেশি। এমনও শুনেছি অনেক পরিবারে তিনবেলা খাবার না থাক ওষুধ খেতে হবে। তাহলে বিষয়টা যদি এমনই হয় আমার দেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে?? বিদেশে দেখেছি তেমন হাসপাতাল বা ওষুধের দোকান খুব একটা নজরে পড়েনি।
তার মানে সে দেশের মানুষগুলো সুস্থ আছে। অথচ বাংলাদেশের মানুষ অসুস্থ। একে তো পরিবেশ দূষণ, তারপর খাবারে ভেজাল। তারপরে আমরা ইদানিং আধুনিকতার যুগে নিজেকে অত্যাধুনিক ভাবার কারণে হোটেল, রেস্তোরায় খাওয়ার প্রবণতা আমাদের অনেক গুণ বেড়ে গেছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। আগে বাবা-মা তার বিশেষ করে মেয়ে সন্তানদেরকে ঘরোয়া কাজ শিখাতো। এখন মেয়েদেরকে লেখাপড়া শেখানো হয়- ভালো অর্থাৎ অর্থ-সম্পদ আছে এমন জামাই ধরার জন্য। কখনও বলা হয় না ভালো মনের মানুষ হও।ভালো করে পড় ফাঁকি দিয়ে নয়। কেননা একজন মেয়ে সন্তানের উপর জাতি দাঁড়িয়ে। তারা ছেলেমেয়েদেরকে পড়াতেও পারেনা। প্লে ক্লাসের বাচ্চাকেও কোচিংয়ে দিয়ে আসে। এই ধরনের শিক্ষা যদি হয়ে থাকে তাহলে দেশের সামষ্টিক অবস্থা কি দাঁড়াবে, তা সহজেই বোধগম্য। নেপোলিয়ন বলেছিলেন-" আমাকে একটু শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে জাতি দেব" এখানে শিক্ষিত মা বলতে এমএ পাস মা বলা হয়নি। আমাদের দেশের মেয়েরা যদিও বলছে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে কতটুকু হয়েছে তা বলতে চাই না।
যেসব নারীরা শিক্ষা অর্জন করে কর্ম ক্ষেত্রে গেল সেখানেও তারা পুরুষের রোশনালে পড়ে ন্যায্য এবং সঠিক কথাটাও সে উপস্থাপন করতে পারে না। আমার দেখা মতে আজ পর্যন্ত কোন নারী চাকরিজীবীকে আমি দেখিনি একজন নারী আর এক নারীকে সহজে সহযোগিতা করেছে। কেন করেনা আজও আমার কাছে প্রশ্ন? নারী যদি নারীকে সহযোগিতা না করে তাহলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ তো সুযোগ নেবেই। তাই নারীদের উচিত পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করা । আর ঘরোয়া কাজগুলো ছেলেমেয়ে উভয়কে শিখতে হবে। এখানেও মায়ের ভূমিকা সবার আগে। যদি আমরা সুস্থ শরীরে বাঁচতে চাই, সবার আগে নিজেদেরকে ভালবাসতে হবে। তাহলেই নারী এবং পুরুষ সমন্বয়ে যে পরিবার গঠিত হয়, সে পরিবার রক্ষা পাবে। কেননা একটা দেশে মূল সম্পদ জনগণ, যা বাংলাদেশের জন্য বড় একটা আশীর্বাদ। এই জনগোষ্ঠীকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তবে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। দেশের বদনাম, দেশের মধ্যে অরাজকতা ইউটিউবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উলঙ্গ করে উপস্থাপন না করে দেশকে ভালোবাসুন।
জেনে রাখুন দেশের বদনাম করলে নিজের বদনাম হয়। বাংলাদেশের বিষয়ে যত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, অন্য দেশের খবর কি এভাবে প্রকাশিত হয়? এতে করে আপনি যদি আপনার দেশকে ভালো না বাসেন তাহলে অন্যরা তো তার সুযোগ নেবেই। কান টানলে মাথা আসে। তাই আমরা নিজেরা নিজেদেরকে সংশোধন করে দেশের উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে যাই। অন্যের পরচর্চা, পর নিন্দা, গীবত বাদ দিয়ে নিজেকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে তৈরি করি। দেশের মেধা যেন পাচার না হয় আমরা নিজেরা সম্মিলিত হয়ে কাজ করব সোনার বাংলাদেশ গড়বো।