এম আব্দুর রাজ্জাক,বগুড়া থেকে :
বগুড়ার আদমদীঘিতে উপজেলা ভূমি অফিসের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদে জনসাধারণদের সেবা প্রদান করেছেন এসিল্যান্ড। কয়েকমাস আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা সুলতানা আদমদীঘি সদর ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেবা প্রত্যাশীদের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা দিয়ে আসছেন। এতে জনসাধারণদের পড়তে হচ্ছে না কোন রকম ভোগান্তি বা বিড়ম্বনায়। দুই দপ্তরে সমানভাবে এমন কার্যক্রমে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কোনঠাসা হয়ে পড়েন দলীয় মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মামলা হামলার ভয়ে আত্মগোপনে থাকছেন তারা। মামলা থেকে বাদ যায়নি ইউনিয়ন পরিষদের নৌকার চেয়ারম্যানরাও৷ ইতিমধ্যে অনেক ইউপি চেয়ারম্যান জেল হাজতে আটকা পড়েছে। এতে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতি বেড়ে যায়। যার ফলে পরিষদে কার্যক্রমে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। সরকার জনসাধারণের জন্য এ বিষয়ে চিন্তা করে সেবার কার্যক্রম চলমান রাখতে কোথাও প্যানেল চেয়ারম্যান আবার কোথাও প্রশাসকের নিকট দায়িত্বভার দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়ার আদমদীঘির সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা সুলতানা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার মতো করে কর্যক্রম পরিচালনা করছেন৷ নাগরিকত্ব, চারিত্রিক, ওয়ারিশিয়ান সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সহ বিভিন্ন বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেন তিনি। এদিকে একইভাবে ভূমি অফিসে সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি ছাড়াই সুবিধা দিয়ে আসছেন। যার ফলে কাজের অধিক চাপ থাকা সত্বেও দায়িত্বে কোন অবহেলা প্রকাশ করেনি এসিল্যান্ড মাহমুদা সুলতানা। সেবাপ্রত্যাশী আব্দুল আলিম ও সামাদ হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদে প্রত্যয়ন নিতে যাই। তখন উদ্যোক্তা দুইজনকে আবেদন করে দেয়। এরপর স্বাক্ষরের জন্য প্রশাসকের রুমে গেলে তিনি পরিষদে না থাকায় ভূমি অফিসে হেলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বাক্ষর করে দেন। ভেবেছিলাম স্যার কাজে ব্যস্ত থাকবে এজন্য স্বাক্ষর না পেয়ে বাড়িতে ফিরতে হবে। কিন্তু তাঁর বিনয়ী আচরণে অত্যন্ত ভালো লেগেছে। দেখলাম অনেকেই নাগরিকত্ব সনদপত্র, চারিত্রিক সনদসহ বিভিন্ন কাজে এসে স্বাক্ষর নিয়ে যাচ্ছে। বরং চেয়ারম্যানের কাছে স্বাক্ষরের জন্য দুইতিন ঘুরেও ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।
আমইল গ্রামের আকলিমা খাতুন জানান, ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম ২৪ শতকের একটি জমির নামজারি করতে। জমি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিবো। স্যারকে বিষয়টি অবগত করলে দ্রুত নামজারি করে দেন। তাঁর আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা সুলতানা জানান, সেবা প্রত্যাদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন ৩০ শতাংশ থেকে এখন শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে গ্রাম আদালতে ৭ টি মামলার মধ্যে ৫টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া নয়টি ওয়ার্ডে শীতবস্ত্র সঠিকভাবে বন্টন করা হয়। এছাড়াও ভূমি অফিসে কয়েকমাসে নামজারি হয়েছে প্রায় ১৬শ। শুধু তাই নয় বিগত বছরের থেকে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ১৪৩১ বঙ্গাব্দে ১১৩টি খাস পুকুর থেকে ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা যা বিগত বছরের তুলনায় ২১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর ১৪৩১ ও ১৪৩৩ বঙ্গাব্দে ৭৮টি ইজারা পুকুর থেকে ৩২ লাখ ২৭ হাজার টাকা আদায় হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় ৮৫৮ শতাংশ বেশি। আগামী ১৪৩২ থেকে ১২৩৪ বঙ্গাব্দে ৩০৫ পুকুরের ইজারা চলছে। প্রত্যাশা করছি এখান থেকে এবার ভালো রাজস্ব আসবে।