গত সপ্তাহেই উত্তর ২৪ পরগণার মধ্যমগ্রামে  একটি অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গীত পরিবেশনের কথা থাকলেও নাগরিক সমাজের একাংশের আপত্তিতে সেই অনুষ্ঠান থেকে বাদ দিতে হয়েছিল বন্যাকে। তবে এবার মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির (সিপিআইএম) এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন বন্যা। আগামী ১৭ জানুয়ারি বিশিষ্ট মার্কসবাদী নেতা জ্যেতি বসুর প্রয়াণদিবস। ওই দিন নিউটাউনে ‘জ্যোতি বসু সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর অংশবিশেষের উদ্বোধন হবে। ওই অনুষ্ঠানেই ‘বিশেষ অতিথি’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে। জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে বন্যা সঙ্গীতও পরিবেশন করবেন। 

  বন্যাকে আমন্ত্রন জানানো প্রসঙ্গে সিপিআইএম-র  রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দু’পারের বাংলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও বিদ্যমান। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি ঐক্য বজায় থাক।   রেজওয়ানা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাঁর যোগ  দীর্ঘদিনের। বিশ্বভারতীর ছাত্রী ছিলেন তিনি। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্নেহধন্যা’ বলে পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের মত ভারতেও তিনি শিল্পী হিসেবে সমান জনপ্রিয়।  তবে সিপিআইএমের কর্মসূচিতে রেজওয়ানাকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিরোধী বিজেপি। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকেরা ভারতের বিরোধিতা করছে, গালমন্দ করছে। ওখান থেকেই শিল্পীদের আনতে হচ্ছে কেন? এখানে কি শিল্পী নেই? জানি না কমিউনিস্টদের বুদ্ধি কবে সোজা হবে। বাংলাদেশ আবহে রেজওয়ানাকে নিয়ে বিতর্কের আবহে সিপিআইএম রেজওয়ানাকে এনে দলের তরফে ‘রাজনৈতিক বার্তা’ই দিতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।  

অবশ্য বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দলের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন  উঠেছে সিপিআইএমের অঞ্চলিক সম্মেলনগুলিতে। বিজেপি সিপিআইএমকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ বলে সরব হয়েছে। এই  অবস্থায় দলের দুই শীর্ষ নেতা মহম্মদ সেলিম ও সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, সিপিআইএম হিন্দু বা মুসলিম-বিরোধী কোনওটাই নয়। ধর্মের সঙ্গে তাদের কোনও বিরোধও নেই। লড়াই ধর্মকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে। মনে রাখতে হবে, ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতা এক নয়। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিভাজনের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে।  বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও  রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেন, মৌলবাদী শক্তি এখন বাংলাদেশকে শেষ করছে। আর এখানে সেটা দেখিয়ে ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। ইসলামি বাংলাদেশ হলে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ করার কথা বলতে সুবিধা হবে। আমাদের এখানে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, আর ও’পারে ভারত-বিদ্বেষ। তাঁর অভিযোগ, সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা দিতে না-পেরে কেন্দ্র এবং রাজ্যের দুই সরকারই সীমান্ত নিয়ে তরজায় মেতে আছে।