নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশে সাংবাদিকদের জন্য ইস্যু করা সব অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, কোনো ইভেন্ট কাভার করতে সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ‘অস্থায়ী অ্যাক্সেস কার্ড’ পাবেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। ওদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়েছে, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের এ সিদ্ধান্ত সাময়িক এবং দ্রুতই এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত  নেয়া হবে।    শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখ্‌স চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়ে সামপ্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিল ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিকদের অনেকেই এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা বলেন, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করছে। অনেকে ফেসবুকে এটাও লিখেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এভাবে সব অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের ঘটনা ঘটেনি। কেউ কেউ লিখেন, এটা মিডিয়ার ওপর বড় আঘাত। অনেকে এ সিদ্ধান্তের জন্য আমলাদের দায়ী করেন। তারা লিখেন, আগুনের ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যই এ ধরনের কাজ করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো সাংবাদিক এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান। তারা বলেন, বিগত সরকারের সময় সাংবাদিক নন এমন অনেককে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়া হয়েছে। যাছাই-বাছাই করে নতুন করে কার্ড দেয়া উচিত। মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেছেন, সাংবাদিকদের সব কার্ড একসঙ্গে বাতিলের ঘটনার মধ্য দিয়ে জনগণ ও গণমাধ্যম ভুল বার্তা  পেয়েছে, যা অনেকের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। শুক্রবার জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাস (ডিজিটাল অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম) এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাস ব্যতীত সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের জন্য) সচিবালয়ে প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো।’ এতে আরও বলা হয় ‘সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দ্বারা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এতদ্বারা বাতিল করা হলো।’ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, বাতিল করা বিভিন্ন ক্যাটাগরির সচিবালয়ে প্রবেশ পাসধারীরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ, ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল  সেন্টার, ডিএমপি, ১৫ আব্দুল গণি  রোড, ঢাকায় স্থাপনকৃত বিশেষ  সেলের মাধ্যমে নতুন করে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হলো’, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

 সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে বুধবার দিবাগত রাতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি এখন কাজ করছে। এর মধ্যেই আগুন লাগার ঘটনার কথা উল্লেখ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে যেসব বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য অস্থায়ী পাস আছে তাদের সঙ্গে সব সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও বাতিল করা হয়।   প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর বিবৃতি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, সাংবাদিকদের সাময়িক এই অসুবিধার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। যেকোনো ইভেন্টের জন্য সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত অস্থায়ী অ্যাক্সেস কার্ড পাবেন বলেও জানানো হয়েছে।

‘সরকার শিগগিরই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলো পর্যালোচনা করবে এবং নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য তথ্য অধিদপ্তর- পিআইডি’র মাধ্যমে সকল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে নতুন অ্যাক্রিডিটেশনের আবেদন আহ্বান করবে’- জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায়ও একই কথা জানানো হয়েছে।  এর আগে সম্প্রতি ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়। সম্পাদক পরিষদসহ বেশকিছু সংগঠন এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান।