কবি ওয়াহিদুজ্জামান বকুলের 'বরফের বাড়ি' তাঁর প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ। এই বইটি কবির সাহিত্যচর্চার জগতে একটি বিশেষ মাইলফলক এবং এতে তার অনুভূতি, অভিজ্ঞতা এবং চেতনার প্রতিফলন পাওয়া যায়। মানুষের অনুভূতি, প্রেম-বিরহের টানাপোড়েন ও জীবনের বহুরূপতা কবিতায় ফুটে উঠেছে অপূর্ব মমতায়। কবি ওয়াহিদুজ্জামান বকুল ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি হাই স্কুল থেকে এসএসসি, হাজী মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম (মার্কেটিং) ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কবি ওয়াহিদুজ্জামান বকুল দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মূলত প্রবাসজীবনেই সাহিত্যজগতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন। প্রবন্ধ ও কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও সাহিত্য সাময়িকীতে। তবে পেশাগত ব্যস্ততার কারণে এখনো তাঁর কোনো গ্রন্থ প্রকাশের সুযোগ হয়নি। পাঠকের মনে ‘বরফের বাড়ি’ বইটি বিশেষ আকর্ষণ ও আগ্রহের সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কথাসাহিত্যিক বাদল সৈয়দ বরফের বাড়ি কবিতার বই সম্পর্কে বলেন – কবি ওয়াহিদুজ্জামান বকুল এবারই প্রথম প্রকাশ্যভাবে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, তাঁর কবিতা স্পষ্টই জানিয়ে দেয়—তিনি কোনোভাবেই ‘নতুন’ নন। বরং কবিতার প্রতি এক দীর্ঘ, নিবিড় প্রেম ও আত্মমগ্ন সাধনার পথ পেরিয়ে তিনি এসেছেন।
প্রকাশের আগে ছিলেন নিঃশব্দে সৃষ্টিশীল; নিজের ভেতরেই গড়ে তুলেছেন কবিতার ভুবন। যেদিন উপলব্ধি হয়েছে—এই কবিতাগুলো তাঁর আঙুলের ছোঁয়ায় সত্যি হয়ে ওঠে, সেদিনই খুলেছেন সৃষ্টির দরজা। হাতে এসেছে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ—‘বরফের বাড়ি’। তাঁর কবিতা পাঠ করে আমার ধারণা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—এতটা পরিশুদ্ধ, ছন্দময় ও মেদহীন কাব্যভাষা কেবল গভীর অনুশীলন, আত্মমগ্ন সাধনা এবং দীর্ঘকালীন সাহিত্যচর্চার মাধ্যমেই সম্ভব। পাঠক নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে পারেন—‘বরফের বাড়ি’ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। একটি ছোট্ট পরামর্শ—এই কবিতাগুলো একাকী, নির্জনে পড়ুন। দেখবেন, কোথা থেকে যেন এক ঘোর এসে আপনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। দূর থেকে ভেসে আসছে অপূর্ব এক শব্দ-মূর্ছনা। তবে সাবধান, কোথাও কোথাও মন খানিকটা ভারী হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু যে কবিতা মনকে নরম করে, ভাবনার রেশ রেখে যায়—সেই তো সত্যিকারের কবিতা। আর এটাই কবির প্রকৃত সার্থকতা। অভিনন্দন, কবি ওয়াহিদুজ্জামান বকুল। এখন সময় আপনার—কারণ কবিরা যখন কলম ধরেন, গদ্যের লেখকদের উচিত এক পাশে সরে দাঁড়িয়ে সে আলোর পথকে উন্মুক্ত করে দেওয়া। কবি ওয়াহিদুজ্জামান বকুলের বরফের বাড়ি কবিতার বইটি থেকে মা ও বৃদ্ধাশ্রম কবিতার কিছু অংশ: ১) তোমার শরীরের মায়াবী ঘ্রাণ বা তোমার স্পর্শ আর কখনো ফিরে পাবো না জেনেও খুঁজে ফেরি কল্পনায় তোমার স্বর্গীয় অস্তিত্বের সন্ধান। আমার নির্ঘুম রাত্রিগুলো কাটে অসহ্য যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত হতে হতে, তোমাকে দেইনি প্রাপ্য সন্মান। ব্যর্থতা বুকে, বহু অভিযোগ একে একে জেগে ওঠে দু:সহ বেদনার পাহাড়। হ্নদয় জ্বলেছে আমার অনুশোচনার অঙ্গারে, ক্ষমা করে দিও আমায়।
২) নিঃসঙ্গ রাতের নীরব প্রান্তরে, এক বৃদ্ধ বসে একা, স্মৃতি তার অন্তরে। ছোট্ট ঘর, চারপাশে নীরবতা, বয়সের ভারে নত, চোখে অবিরাম অশ্রুর ধারা। একদিন সে ছিল পরিবারের আলো, আজ সে একা, খুঁজে চলে আপন মনের ভালো। ছেলেমেয়ে দূরে, ব্যস্ত জীবনের পথে, বৃদ্ধাশ্রমই আজ তার শেষ ঠিকানা। বৃদ্ধাশ্রমের এই নীরব সন্ধ্যায়, সে হয়তো খুঁজে পায় কোনো এক আশার আলো। কেউ না কেউ হয়তো আসবে, ধরবে তার হাত, নিয়ে যাবে তাকে তার প্রিয় স্বপ্নের ঠিকানায়। কবি ওয়াহিদুজ্জামান বকুল বরফের বাড়ি কবিতার বইটি নিয়ে বলেন, একজন ক্ষুদ্র লেখক ও কবির সম্মুখভাগের আড়ালে জীবনের গভীর ক্ষত থেকে জন্ম নেওয়া এক নিঃসঙ্গতা, বিষণ্ণতা, অবিরাম ছায়ার মতো আমার অস্তিত্বের কোণে স্থির হয়ে ছিল। প্রতিটি কবিতা আমি গভীর- ভাবে অনুভব করেছি এবং সেই অনুভূতিগুলোকে কাগজে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।” ‘বরফের বাড়ি’ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা, কবির জীবনকথা, বিশেষ মন্তব্য এবং নির্বাচিত কিছু কাব্যাংশের মাধ্যমে বইটির পূর্ণাঙ্গ রূপায়ণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, পাঠকরা এর মাঝে কবির অন্তরঙ্গ অনুভূতি ও বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার অনন্য মেলবন্ধন খুঁজে পাবেন।