ষাটের দশকের অন্যতম কবি ও গীতিকার জাহিদুল হক আর নেই। সোমবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।  জাহিদুল হক ১৯৪৯ সালের ১১ আগস্ট পিতার কর্মস্থল ভারতের আসামের বদরপুর রেলওয়ে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের ভূঞা বাড়ি। পিতা মোহাম্মদ নূরুল হক ভূঞা ছিলেন সরকারি চাকুরে ও চিকিৎসক।   জাহিদুল হক চট্টগ্রামের নগেন্দ্র্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।   স্কুলজীবন থেকে লেখালেখি শুরু করা জাহিদুল হকের প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় ১৯৬৫ সালে দৈনিক সংবাদের ঈদ সংখায়। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো। চাকরি করেছেন বাংলাদেশ বেতারে। বাংলাদেশ বেতারে তিনি উপমহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া রেডিও ডয়েচে-ভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। ছিলেন দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক। ছিলেন ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্প বাড়ি নামে একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন।  ১৯৭৮ সালে রেডিওতে রেকর্ডকৃত তার প্রথম গানটি পরে ‘মহানায়ক’ ছবিতে যুক্ত হয়। গানটির সুর করেছেন শেখ সাদী খান। সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানটি এই কবির লেখা। জাহিদুল হকের কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প গান মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি। তার প্রথম কবিতার বই ‘পকেট ভর্তি মেঘ’ প্রকাশ হয় ১৯৮২ সালে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- পকেট ভর্তি মেঘ (১৯৮১), তোমার হোমার (১৯৮৪), নীল দূতাবাস (১৯৮৫), সেই নিঃশ্বাসগুচ্ছ (১৯৮৯), পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা (১৯৯৪), এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা (১৯৯৬), এ উৎসবে আমি একা (১৯৯৭)।  কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য জাহিদুল হক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০২), বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার-২০১৭ (সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০০) লাভ করেন।