ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজের চার দিন পর দুই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি ‘জিন-ভূতের কাণ্ড’ হিসেবে চালিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে পরে ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামে রাস্তার পাশে প্লাবিত জমি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত নাঈমা বেগম (১৩) সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের বিল্লাল মিয়ার মেয়ে এবং মায়মুনা বেগম (১৫) পার্শ্ববর্তী সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর উত্তরপাড়ার আবদুল বারেক মিয়ার মেয়ে। তার দু’জনই নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের পয়াগ ময়না বেগম ইসলামিয়া হাফিজিয়া মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর (জেনারেল) হাসপাতালের চিকিৎসক অনিক দেব বলেন, হাসপাতালে তাদের মৃত অবস্থায় আনা হয়। দু’জনকেই ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। নিহত ছাত্রীদের স্বজন ও পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রীরা মাদ্রাসায় যায়। শনিবার সকালে মাদ্রাসা থেকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়, তারা সেখানে নেই। সেই সময় পরিবারের সদস্যরা জানতে চাইলে মাদ্রাসার শিক্ষক জানান, রাতে দুষ্টুমি করলে তাদের শাসন করা হয়। এর পর থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাইলে শিক্ষকরা তা দেখাতে গড়িমসি করেন।
নিহত ছাত্রী মায়মুনার চাচা কাউছার মিয়া জানান, মঙ্গলবার ভোরে উত্তরপাড়ার বায়তুল করিম মসজিদের মুয়াজ্জিন আজান দিতে যাওয়ার সময় টর্চের আলোতে রাস্তার পাশের জমিতে কাউকে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি ডাকাডাকি করলে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহত অপর ছাত্রী নাঈমার ভাই আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমার বোন শুক্রবার বিকেলে মাদ্রায় গেলে শনিবার জানানো হয়, তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাইলেও তারা আমাদের ফুটেজ না দেখিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। মেয়ে বলে থানা পুলিশকে না জানিয়ে নিজেরাই খোঁজাখুঁজি করেছিলাম। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাদের মা-চাচিদের ঘটনাটি জিন-ভূতের কাণ্ড বলে বিষয়টি নিয়ে জানাজানি না করতে প্রভাবিত করেন। মঙ্গলবার বিকেলে বোনের দাফন সম্পন্ন করে রাতে এ ঘটনায় থানায় মামলা করবেন বলে জানান তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। মাদ্রাসার সিসি ফুটেজসহ যাবতীয় বিষয় তদন্তের আওতায় নিয়ে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তারা কাজ করছেন।