বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বুক না কেটে, অজ্ঞান না করে প্রথমবারের মতো হার্টের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়োট্্িরক টাভি ভালভ স্থাপিত ৮৪ বছরের বৃদ্ধ এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান।
তিনি বলেন, এখন তিনি নিজ হাতে খাবার খাচ্ছেন এবং উঠে বসছেন। তাকে আগামী ৩-৫ দিনের মধ্যে রোগীকে রিলিজ করে দেয়া হবে। অ্যাওরটিক ভালভ প্রতিস্থাপন সম্পর্কে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান আরো বলেন, অপারেশন মানেই ছুরি-কাচি ব্যবহার।
তিনি বলেন, ছুরি কাচি ছাড়া বা বুক না কেটে ৮০ বছরের বৃদ্ধের হার্টের অ্যাওরটিক ভালভ বা টাভি ভালভ প্রতিস্থাপন করে রোগীর জীবন বাঁচাঁতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের দেশে অনেকের এ চিকিৎসা নেওয়ার সক্ষমতা নেই। বর্হিবিশে^ এই চিকিৎসায় ৫০ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়, যারা ধনীলোক, তাদের অনেকেই দেশের বাইরে গিয়ে এ চিকিৎসা নিয়ে আসেন। আমরা বাংলাদেশে ১০ লাখ টাকায় সফল সার্জারি করেছি। তবে আগামীতে কি করে ৫ লাখ টাকায় করা যায় সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছি।
ডা. জামান বলেন, সরকারসহ বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন আমাদের অসচ্ছল জনগণকে এ চিকিৎসাও করতে পারবো। আমি বিশ্বের অন্যতম আধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতি দেশের প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দেশের অসচ্ছল মানুষেরা যেন এ সেবা নিতে পারেন সে ব্যবস্থা সরকার করে দিলে আমরা এ চিকিৎসা সেবাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারবো বলেও জানিয়েছেন। জটিল এ পদ্ধতিতে ভালভ প্রতিস্থাপনে সফলতা, এর সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং পাশাপাশি ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা সাধারণ জনগণের জন্য সহজলভ্য করতে তিনি সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আহব্বান জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে নতুন চিকিৎসকদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাভির পুরো কথা ট্রান্সক্যাথেটার অ্যাওর্টিক ভালভ ইমপ্ল্যান্টেশন। যে সকল বয়স্কদের হার্ট অকেজো রোগীদের ‘ অ্যাওর্টিক ভালভ টাবি পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।
অ্যাওর্টিক ভালভের কাজ অ্যাওর্টিক ভালভ-এর কাজ সম্পর্কে এবং হৃৎপিন্ডের কাজ সর্ম্পকে অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান বলেন, হার্ট সংকুচিত হলে খুলে যায় অ্যাওর্টিক ভালভ। হার্ট প্রসারিত হলে ভালভ বন্ধ হয়ে যায়। অতএব অ্যাওর্টিক ভালভে গন্ডগোল হলে রক্ত সংবহনেও তৈরি হয় অব্যবস্থা। বয়স্কদের অ্যাওর্টিক ভালভে সমস্যা দেখা দেয় নানাবিধ শারীরিক সমস্যা।
সাধারণত ৬০-৬৫ বছর বয়সের পরে অ্যাওর্টিক ভালভের এই ধরনের সমস্যা শুরু হতে পারে। ডা. জামান টাভি সর্ম্পকে বলেন আগে অ্যাওর্টিক ভালভে সমস্যা হলে, এই ভালভ প্রতিস্থাপন করতে হলে ওপেন হার্ট সার্জারির সাহায্য নিতে হতো। সেক্ষেত্রে রোগীর বুকে প্রায় ৭-৮ ইঞ্চি ক্ষত তৈরি হতো। এমনকী অপারেশনের সময় রোগীকে রাখতে হতো হার্ট-লাং মেশিনের তত্ত্বাবধানে। টাভি পদ্ধতিতে এত কাটাছেঁড়া করার দরকার পড়ে না। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। রোগীর বুকে বড়সড় ক্ষত তৈরি হয় না। দুই থেকে তিনদিনের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয় না।
ভেন্টিলেশনেও রাখতে হয় না। ফলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে অ্যাওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট-এর ক্ষেত্রে টাভি পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী। বিশেষ করে বিভিন্ন বয়স্ক রোগীর একাধিক শারীরিক অসুখ থাকে। এমন রোগীর ক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই সকল ক্ষেত্রে টাভি অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ।