এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে : বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব নবান্নকে কেন্দ্র করে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামে চিশতীয়া পীরের আস্তানায় বসেছে একদিনের নবান্ন মেলা। প্রতিবছর বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এখানে নবান্ন উৎসব পালন করে পীরের ভক্তরা। সকাল থেকে শুরু হয় এ মেলার কার্যক্রম।নবান্ন উৎসবে প্রধান খাবার ক্ষীর। রান্নার প্রধান উপকরণ চাল, গুড়, দুধ আর নারিকেল। ভাণ্ডার খানার তথ্য মতে, এ বছর নতুন ধানের চাল ৮২ মণ, গুড় ১২৫ মণ, নারিকেল ১ হাজার ৮০০টি ও দুধ ৭০ মণ দিয়ে ক্ষীর রান্না চলছে। কাজে সহযোগিতার জন্য প্রায় ৫০০ পীরভক্ত কাজ করছেন। আর স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রয়েছেন ৩০০ জন। জানা গেছে, পীর আব্দুল গফুর চিশতী (র.) কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামে থাকতেন। সে সময় তিনি কুরআনের ওপর মানুষকে শিক্ষা দিতেন। পরবর্তীতে তিনি এখানে প্রতিষ্ঠা করেন মক্তব, চশমায়ে উলুম মাদ্রাসা এবং একটি আস্তানা। এরপর তিনি বাংলা ১৩৮২ সালের শ্রাবণ মাসের ১৬ তারিখে মৃত্যু বরণ করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বেগুনগ্রাম পীরের আস্তানায় ভক্তদের যেন ব্যস্ততার শেষ নেই। দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে তার হাজার হাজার ভক্ত। এক সঙ্গে ২৯টি চুলায় রান্না করা হচ্ছে ক্ষীর। রান্না চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। কেউ গুড় ভাঙছেন, কেউ নারিকেল ভাঙছেন আবার কেউ রান্না করছেন। রান্না হয়ে গেলে ক্ষীর রাখা হচ্ছে হাউসে। ক্ষীর বিতরণ করা হবে হালকায়ে জিকিরের পরে।

নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত ঘটে পীরের আস্তানায়। সঙ্গে বেগুনগ্রামের ঘরে ঘরে জামাই-মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের সমাগম ঘটে। উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে নবান্ন মেলা। ঘরে ঘরে চলছে মাংস, ক্ষীর ও পায়েস রান্না। এই মেলাকে ঘিরে রাস্তার দুই পাশে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বসেছে বিভিন্ন খাবার সামগ্রী ও মিষ্টান্নের দোকান।এছাড়া বসেছে বিভিন্ন সাংসারিক আসবাবপত্রের দোকানও। রয়েছে খৈচালা, চাঙারি, চালুন, কুলা, ডালা, কাঠের টুল, কাঠের পিঁড়ি, হাতপাখা, কাঠের হাতা, শিশুদের খেলনা, কাঠের ঘোড়া, করপা, ঢালিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। মৃৎশিল্পীরা বসেছেন মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে। সেখানে মাটির তৈরি খেলনা পুতুল, তাল, ফলমূল, হরিণ, বাঘ, হাতি, হাঁড়ি-পাতিল, মাটির ব্যাংকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসরা সাঁজানো। বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, চরকি রয়েছে। বসেছে কসমেটিকসের দোকানও।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিনহাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই অনুষ্ঠান অনেক পুরনো। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ৪৫-৫০ হাজার মানুষের জমায়েত ঘটে এখানে। গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে বেগুনগ্রাম পীরের আস্তানা।   আস্তানায়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, এই আস্তানা বাংলা ১৩৭২ সালের ৬ কার্তিক উদ্বোধন করা হয়। আস্তানাটি ৩৭ শতক জায়গার ওপরে অবস্থিত। পীর কেবলার সব মুরিদান, আশেকান ও ভক্তদের অনুদানের অর্থে আস্তানাটি পরিচালিত হয়ে আসছে।   

আস্তানার সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, পূর্ব পুরুষের কাছে থেকে শুনেছি হযরত খাজা শাহ মাওলানা মো. আব্দুল গফুর চিশতী (র.) বাংলা ১৩২৮ সালে বেগুনগ্রামে আসেন। তার আগমনের তিন বছর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই নবান্ন উৎসব চলমান রয়েছে। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, নবান্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র আইনশৃংখলা পরিস্থতি ঠিক রাখার জন্য আস্তানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।