আমাদের সময় সম্পাদকরা অনেক সম্মানীয় ছিলেন। সমাজে তাদের স্থান ছিল অনেক মর্যাদার। আমরা যারা মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিক ছিলাম, রিপোর্টার ছিলাম, আমরা সম্পাদকদের অধীনে কাজ করতাম। আমাদেরই দায়িত্ব ছিল সকল পর্যায়ের সব ধরনের সাংবাদিক সম্মেলন কভার করার। সম্পাদকরা কখনই কোন সাংবাদিক সম্মেলনে যেতেন না। প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি সবার সাংবাদিক সম্মেলনে আমরাই যেতাম, সম্পাদকরা নন। যদি কখনও প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সম্পাদকদের সাথে বসতে চাইতেন তখন বিশেষ আমন্ত্রণে তারা যেতেন। তবে সেটা হতো তাদের আলোচনা বৈঠক। সে সব আলোচনার কোন খবর হতো না, যেমন হতো সাংবাদিক সম্মেলনের খবর। সম্পাদকরা কোন অনুষ্ঠান থেকে এসে সাধারণত রিপোর্টারদের মতো রিপোর্ট লিখতেন না।
কথাগুলি বললাম এই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের চেহারা দেখে। অনেক দিন থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে সম্পাদকদের উপস্থিতির হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছেন, জানি না ফিরে এসে তারাই রিপোর্ট লিখছেন কিনা?
সাংবাদিক সম্মেলনে আমরা যেতাম প্রশ্নের মারপ্যাচে খবর বের করার উদ্দেশে। অনেক সময় আমরা অনেক অপ্রীতিকর প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিকে বিব্রতও করেছি। এরশাদকে কবিতা লেখা নিয়ে প্রশ্ন করে জাহাঙ্গীর হোসেন স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকেও আমরা ছাড দিইনি। কিন্ত এখন সম্পাদকরা প্রধানমন্ত্রীকে যে সব প্রশ্ন করেন সেগুলি কি উদ্দেশে করেন বোধগম্য হয় না। এগুলিকে প্রশ্ন না বলে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়া বলা যেতে পারে। এবার তো একজন সম্পাদক একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নালিশ করে বসলেন। মনে হলো প্রধানমন্ত্রী তার এই মন্ত্রী সম্পর্কে কিছু জানেন না, তার কাছেই প্রথম শুনলেন। এই সব সাংবাদিক সম্মেলনে অনেকেই আবার প্রধানমন্ত্রীকে স্তাবকতা করার সুযোগ নেন। এক সাংবাদিক সম্মেলনে দেখেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কথায় পুলকিত হয়ে সাংবাদিকরা হাততালি দিয়ে উঠেছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের এমন চরিত্র আমাদের কালে ছিল না।