মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতির গর্বিত কৃতী সন্তান ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম-এর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আজ। এদিন তার প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে বিকাল ৩টার পর বিএএফ বাশার বেইজ প্যারেড গ্রাউন্ডে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ। এর আগে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে। পরে তাকে বিমান বাহিনীর বিএএফ শাহীন কবরস্থানে দাফন করা হবে।  মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকরী বাহিনী গড়ে তোলা এবং দেশ গঠনে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৮-এ ভূষিত করা হয়।   অকুতোভয় এ বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমান বাহিনীর কিলো ফ্লাইটের অধিনায়কত্ব গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। তার চৌকস অধিনায়কত্বে কিলো ফ্লাইট ও বৈমানিক হিসেবে সরাসরি আকাশযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ত্বরান্বিত করেন।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি সেক্টর-২ এ যোগ দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে সেক্টর-১ এর সিভিলিয়ান ফোর্সের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম মাদুনাঘাট পাওয়ার সাব-স্টেশন অপারেশনে তিনি গুলিতে আহত হয়েছিলেন। মূলত, আহত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ ফোর্সেস হেডকোয়ার্টারে এবং কিছুদিনের ভেতর ভারতের ডিমাপুরে ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইটের’ অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হন।    একাত্তরের ৩রা ডিসেম্বর রাতে, ভারতের তেলিয়ামুরা থেকে একটি এ্যালুয়েট হেলিকপ্টার উড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ফুয়েল ডিপোতে গোলা নিক্ষেপ করেছিলেন সফলভাবে। গৌরবময় এই মিশনে তার সঙ্গে ছিলেন ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম।   তাদের হাতেই মূলত জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। মাত্র ৩টি বিমান নিয়ে বাহিনী। সম্ভবত এটাই ছিল বিশ্বের সব থেকে ক্ষুদ্রতম বিমান বাহিনী। বিমানগুলো ছিল বেসামরিক মডিফাই করা বিমান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো প্রায় অচল পদ্ধতি। এই ছোট্ট কিলো ফ্লাইট দিয়েই ১০ দিনে ৪০টির মতো কমব্যাট মিশন সম্পন্ন করেছিলেন তারা।  গত ১৪ই আগস্ট রাত ৮টা ৩০ মিনিটে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন দেশের এই কৃতী সন্তান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ, বীরউত্তম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।