মুন্সীগঞ্জ, ২৭ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : দেশবরেণ্য প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব ও বাসসের সাবেক প্রধান বার্তা স¤পাদক এবং মুন্সীগঞ্জের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম শাহজাহান মিয়াকে নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার বাদ আসর মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কাজিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে বিকেল সোয়া ৬টায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কাজিরগাঁও সামাজিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে তার নিজ বাড়ি কাজিরগাঁওয়ে লৌহজং উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ইলিয়াস আহমেদের নেতৃত্বে গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়।  তার জানাজায় অংশ নেন- মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের লৌহজং উপজেলার সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম মৃধা, অবসর প্রাপ্ত উপ সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মজিবুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উর্ধ¦তন সরকারি কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম, লৌহজং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বাবুল মুন্সী, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মরহুমের অনুজ লৌহজং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার মো. শাহানুর ইসলাম, বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান, ছোট ছেলে সাফিন হাসান সজিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলী, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি জুলহাস ব্যাপারি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুল ইসলাম মিন্টুসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসী। এর আগে বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাবে শাহজাহান মিয়ার প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যরা এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তাঁর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এবং অন্যান্য সহকর্মীরা শাহজাহান মিয়ার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে স্মৃতিচারণ করেন- জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও যুগ্ম-সম্পাদক আইযুব ভূঁইয়া।  এম শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৭০ সালে অধুনাবিলুপ্ত ইংরেজি দৈনিক দি পিপলস দিয়ে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে প্রধান বার্তা স¤পাদক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে এম শাহজাহান মিয়া অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন শাহজাহান মিয়া। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন। মরহুমের অনুজ মো. শাহানুর ইসলাম জানান, শাহজাহান মিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাসায় বাথরুমে পড়ে গেলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল। বুধবার রাত ১০টায় রাজধানীর রামপুরায় নিজ বাসায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

 

 জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক শাহজাহান মিয়ার প্রতি বাসস পরিবারসহ বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা  

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক বার্তা সম্পাদক, প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার  প্রতি বাসস পরিবারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এম. শাহজাহান মিয়ার নামাজে জানাজায় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করীম, বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও সাইফুল আলম, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা অংশ নেন। জানাজা শেষে জনপ্রিয় এই সাংবাদিক নেতার প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি, প্রেস সচিব ইহসানুল করীমের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষে পরিচালক জনসংযোগ মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ, শাহজাহান মিয়ার শেষ কর্মস্থল বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বাসস পরিবার, সভাপতি ওমর ফারুক ও সহসভাপতি মধুসুদন মন্ডলের নেতৃত্বে বিএফইউজে, সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), এম. আব্দুল্লাহ, শহিদুল ইসলাম ও খুরশীদ আলমের নেতৃত্বে বিএফইউজে এবং ডিইউজে’র অপর অংশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের নেতৃত্বে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এবং মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ড, ঢাকাস্থ মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর সাংবাদিক ফোরামসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।   জানাজার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন শাহজাহান মিয়াকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।  বক্তব্যে প্রেস ক্লাব সভাপতি বলেন, সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া ও রুটি-রুজির সংগ্রামে শাহজাহান মিয়া সব সময় ছিলেন আপোষহীন। তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মৃত্যুতে আমরা সৎ, যোগ্য ও নির্ভীক একজন সহকর্মী হারালাম। এদিকে, বিকেলে তার মরদেহ মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের কাজিরগাঁওয়ের খিদিরপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বুধবার রাতে রাজধানীর রামপুরায় নিজ বাসায় মারা যান প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান মিয়া। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন।  এম. শাহজাহান মিয়া ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় যোগ দেন। অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ৫ বার সভাপতি এবং ২ দফা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার পদেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।