৯ জুন ২০২৩, সমকাল পত্রিকার উপ-সম্পাদকীয় কলামে আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধটি আপনাদের জন্য এখানে উপস্থাপন করছি। ভালো-মন্দ জানালে খুশী হবো। -কাওসার চৌধুরী, ১০ জুন ২০২৩, ঢাকা।
মূল লেখাটি নিচে দেয়া হলো।
চলচ্চিত্র পুরষ্কার, প্রামাণ্যচিত্র ও অনুদানের অংকঃ
গত ৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিজয়ীদের উষ্ণ অভিনন্দন, কলাকূশলীদের প্রশংসার পাশাপাশি চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান বিষয়েও কথা বলেন।
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন ‘মাত্র ২০ লক্ষ টাকায় একটা শর্ট ফিল্ম নির্মাণ হয় কীভাবে’! অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্য এবং সম্প্রচারমন্ত্রীকে এই বরাদ্দ বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। ২০২৩- ’২৪ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশনে বিষয়টি নিজেই দেখবেন বলেও কথা দেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সব চলচ্চিত্রকর্মী এবং মিলনায়তন ভর্তি দর্শক প্রধানমন্ত্রীর কথায় উচ্ছাস প্রকাশ করে হাততালি দিয়ে পরিবেশ মূখর করে তুলি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।
দুই.
চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রদানের ক্ষেত্রে প্রামাণ্যচিত্রকে যুক্ত করা হয়েছে খুব বেশীদিন হয় না! তারপরও প্রামাণ্যচিত্রকে কাহিনীচিত্রের পাশাপাশি পুরষ্কার প্রদান করা হচ্ছে বর্তমানে। সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু এই পুরষ্কার প্রদানে একটি ‘ফাঁক’ রয়ে গেছে! প্রামাণ্যচিত্রের ক্ষেত্রে পুরষ্কার প্রদান করা হয় সাকুল্যে একটি! সেটাও আবার প্রযোজককে। অর্থাৎ যিনি সেই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের জন্য অর্থ লগ্নি করছেন। প্রামাণ্যচিত্রের সঙ্গে যুক্ত কোন সৃষ্টিশীল মানুষকে নয়। প্রযোজককে পুরষ্কার অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য; কিন্তু প্রামাণ্যচিত্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের নয় কেন? আমরা জানি- কাহিনীচিত্রে চিত্রনাট্য, পরিচালনা, চিত্রগ্রহন, সম্পাদনা, শব্দ গ্রহন, শব্দ সংযোজন, শিল্প নির্দেশনা, আলোক সম্পাত, আবহ সঙ্গীতসহ আরো অনেকগুলো ক্ষেত্রে জাতীয় পুরষ্কার প্রদান করা হয়ে থাকে।
কাহিনীচিত্রের ক্ষেত্রে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় প্রামাণ্যচিত্রেও কিন্তু বিদ্যমান। শুধু অভিনয়, মেকআপ, কন্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংলাপ রচনা বাদে বাকী সব বিষয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণেও প্রয়োজন। উপরন্তু, প্রামাণ্যচিত্রে বাড়তি প্রয়োজন হয় গবেষণা, রেকি, অধিবক্তার সঙ্গে কথনের প্রিলিউড এবং ক্ষেত্রবিশেষে ‘ঝুঁকি’ মোকাবেলা!
দীর্ঘ ৪১ বছরের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা থেকেই বিনীতভাবে বলছি, বর্তমান ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার নীতিমালা’র সীমাবদ্ধতার কারনে প্রামাণ্যচিত্রের বিভিন্ন শাখায় যে সকল সৃষ্টিশীল মানুষ অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন, তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকছেন বছরের পর বছর। এটা দুঃখজনক! প্রামাণ্যচিত্রের ক্ষেত্রে নিদেনপক্ষে এই ক্ষেত্রগুলোতে জাতীয় পুরষ্কার প্রদান চালু করা যেতে পারে- চিত্রনাট্য, পরিচালনা, চিত্রগ্রহন, সম্পাদনা, শব্দ গ্রহন এবং আবহ সঙ্গীতে।
দুই.
সৌভাগ্যবশত এবারে আমিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার (২০২১) অর্জন করেছি ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রামাণ্যচিত্রের জন্য। কিন্তু সেটা প্রামাণ্যচিত্রের ‘প্রযোজক’ হিসেবে; সৃষ্টিশীল নির্মাতা হিসেবে নয়! অথচ ‘নির্মাতা’ হিসেবেই আমাকে পরিকল্পনা ও কল্পনা করতে হয়েছে বছরের পর বছর। আমার চাইতেও বেশী সৃষ্টিশীল মানুষের সমন্বয়ে গঠিত নির্মাণদল নিয়ে নীলফামারি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১৪৮টি বধ্যভূমিতে কাজ করতে হয়েছে সীমাহীন চ্যালেঞ্জের মুখে! ওসবের মূল্যায়ন কি আসলেই হয়েছে? ধরা যাক, পুরষ্কারপ্রাপ্ত প্রামাণ্যচিত্রটি যদি অন্যকোন ব্যক্তি ‘প্রযোজনা’ করতেন তাহলে- এত শ্রম মেধা আর সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখে যে পরিচালক প্রামাণ্যচিত্রটি সবার কাছে উজ্জ্বল করে তুললেন- তাঁর জন্য কী অবশিষ্ট থাকতো! উল্লেখ্য, কাহিনীচিত্রে কিন্তু নির্মাতা এবং প্রযোজক- উভয়ের জন্য আলাদা পুরষ্কারের ব্যবস্থা চালু আছে!
তবে এটা তো অতিশয় সত্য যে, রাষ্ট্রীয় সকল পুরষ্কারই অমূল্য! এর মর্যাদাই আলাদা! এই পুরষ্কার অর্জন করে আমি অবশ্যই ধন্য এবং সম্মানিত। এই সম্মান, এই স্মৃতি আমাকে আমৃত্যু উজ্জীবীত রাখবে, উদ্দীপ্ত রাখবে।
তিন.
লক্ষ্যনীয়, সরকারি অনুদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে একেকটি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্রে’ সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। কিন্তু ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রে’র জন্য আজ অব্দি সর্বোচ্চ অনুদান দেয়া হয়েছে মাত্র ৪০ লাখ টাকা! যদিও শুরু হয়েছিল মাত্র ২০ লাখ টাকা দিয়ে। ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ নির্মাণেও মাত্র ২০ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছিল! বৈষম্যটি অযৌক্তিক ও বেদনাদায়ক! উল্লেখ্য, ‘বধ্যভূমিতে একদিন’-ই সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র। আমার মতে, পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে অনুদানের সর্বোচ্চ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য থাকা উচিৎ নয়। আরো দুঃখের বিষয়, বর্তমানে এই পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রের জন্য অনুদান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে শুনেছি! এই অবস্থার নিরসন হওয়া উচিৎ।
কাহিনীচিত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকার অংকটিও কিন্তু যথেষ্ট নয়। কারন অনেক সময়ে দেখা যায়, কাহিনীচিত্রের ক্যানভাস হয় বিশাল আকারের! আকার অনুযায়ী তাদের নির্মাণব্যয়ও বৃদ্ধি পায় আনুপাতিক হারে! বিশেষত ইতিহাসনির্ভর কোন কাহিনীচিত্র নির্মাণে- ‘ঐতিহাসিক পটভূমি’ পূণনির্মাণ করতে গিয়ে প্রাক্কলিত বাজেট ছাড়িয়ে প্রকৃত ব্যয় বৃদ্ধি পায় অনেক গুণ! ফলে একটি মান সম্পন্ন কাহিনীচিত্র নির্মাণে ‘প্রকৃত বাজেট’ সংগ্রহ করতে নির্মাতাদের হিমশিম খেতে হয়। অভীষ্ট অর্থ সংগ্রহের জন্য অনেক সময় মতাদর্শের বাইরে গিয়েও সহ-প্রযোজকের সঙ্গে হাত মেলাতে হয় নির্মাতাদের! এটা সত্যিই বেদনাদায়ক! এই ‘জিম্মিদশা’ থেকে কাহিনীচিত্রের নির্মাতাদের মুক্তিদানের জনং বিনীত অনুরোধ জানাই। সে ক্ষেত্রে পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্রে অনুদানের বর্তমান অংকটা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকায় নির্ধারণ করা গেলে মান সম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ সুগম হবে বলে আশাকরি।
চার.
অত্যাধুনিক প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন অনেক আগেই! সেই অর্থ আজও ‘অনড়’ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যায় (অলস পড়ে আছে সিনেমা হল তহবিলের হাজার কোটি টাকা, সমকাল, ২৯ মার্চ ২০২৩)। কেন আজ অব্দি কোন উদ্যোক্তা এই বরাদ্দ থেকে অর্থ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ বা মিলনায়তন বা সিনেমা কমপ্লেক্স নির্মাণে এগিয়ে আসছেন না; সেটা তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারন, চলচ্চিত্রের সৃষ্টিশীল মানুষ তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে একেকটি মান সম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। আর সেই ডিজিটাল প্রযুক্তির চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে আ্যনালগ পদ্ধতির প্রেক্ষাগৃহে; দর্শক বঞ্চিত হবেন আধুনিক প্রজেকশন সিস্টেমের আনন্দ থেকে- সেটা যুক্তির কথা হতে পারে না!
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্ত ফ্রন্টের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে ‘ঢাকা চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৫৭ সালে। এর পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এ দেশের চলচ্চিত্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে মুক্ত করেছেন পরাধীনতার শৃংখল থেকে। মঞ্চ নাটককে মুক্ত করেছেন উপনিবেশিক ‘অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন’ থেকে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের বর্তমান চলচ্চিত্রকে আরো সুন্দর, নান্দনিক ও মান সম্পন্ন করতে সহৃদয় পৃষ্ঠপোষকতা দেবেন- এটাই প্রত্যাশা।
ছবিগুলোর কয়েকোটি- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ফোটোগ্রাফার ইয়াসিন কবির জয়-এর তোলা। বাকীগুলো বিভিন্নজন তুলেছিলেন। সব ফটোগ্রাফারদের ধন্যবাদ জানাই।
চলচ্চিত্র পুরষ্কার, প্রামাণ্যচিত্র ও অনুদানের অংক....কাওসার চৌধুরী
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৮:১৮ এএম

সারাবাংলা রিলেটেড নিউজ

বৃষ্টি এলেই দেখা হবে --- ফেরদৌসী দিনার

বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন একদলীয় শাসনের ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে

বগুড়ায় শুরু হলো জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট

আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে পুকুর খননের সময় ২টি এস্কেভটর,৫ টি ট্রাক্টর জব্দ
.jpg)
বগুড়ায় একসঙ্গে জন্ম নিল চার নবজাতক, মা নাম রাখলেন মোহাম্মদ, আহম্মেদ, ওমর ও রহমান

শুভ জন্মদিন আপা-- ফকির সেলিম

পহেলা আষাঢ় - জাকিয়া রহমান

প্রেমের টানে মহেশখালীতে এসে বিয়ের পিঁড়িতে থাই তরুণী