আমি ইউরোপের যে দেশ থেকে ব্রিটেনে এসেছি--রিপন উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:১৭ এএম

আমি ইউরোপের যে দেশ থেকে ব্রিটেনে এসেছি সে দেশে ব্যবহার করা ঘরের আসবাবপত্র বাদে জীবনঘনিষ্ট প্রায় সব কিছুই কার্টনে ভড়ে তার উপরে লন্ডনে যে বাসাটি ইতোমধ্যেই ভাড়া করে রেখেছিলাম সে বাসার ঠিকানা লিখে কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা যখন লন্ডনে আসি তার দু'একদিন পরেই জিনিসগুলি লন্ডনের বাসার ঠিকানায় চলে আসে। টেলিভিশন, মাইক্রো ওভেন, ইস্ত্রি, প্রিন্টার মেশিন ও লেপটপের কার্টন থেকে ব্যবহারিক জিনিসগুলি বের করে খালি কার্টনগুলি বাসার খানিকটা দূরে একটা পিলারের সাথে দাড়া করিয়ে রেখে দিয়েছিলাম যাতে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের চোখে পরে এবং তারা যেন যথাস্থানে স্থানান্তরিত করে রিসাইক্লিং করে দেয়।
সত্যি কথা বলতে আমি যেখানে খালি কার্টনগুলি রেখেছিলাম সেটা প্রকৃতপক্ষে ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত জায়গা বা ডাস্টবিন ছিলনা। দুঃখ জনক হলেও সত্যি, টেলিভিশনের কার্টনের গায়ে লন্ডনের বাসার ঠিকানাটা তখনো লিখা ছিল যা মুছে কিংবা ছিড়ে ফেলতে একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। সপ্তাহ না ঘুরতেই ওয়েস্ট রিসাইক্লিং এনফোর্সমেন্ট কর্তৃক সেই টেলিভিশনের কার্টন সহ অন্যান্য কার্টন ও কার্টনের গায়ে ঠিকানা সম্বলিত ফটো সহ মোটা অংকের একটি জরিমানা আমার নামে বাসার ঠিকানায় প্রেরণ করা হয়। যেহেতু টেলিভিশনের কার্টনের গায়ে আমার বাসার ঠিকানা লিখা ছিল সেহেতু কার্টনগুলি আমার নয় মর্মে অস্বীকার করার কোনো উপায় ছিল না। ঘটনা যা হবার তাই হলো। জরিমানা পরিশোধ করতেই হয়েছিল।
এর তিন চারদিন পরের ঘটনা। তখন আমার লন্ডনের বয়স মাত্র দশ দিন। বন্ধুর ছোটভাই বললেন, "ভাই বসে না থেকে কাগজ পত্র ঠিক হওয়া পর্যন্ত আমার ফাস্টফুডে কাজ শিখতে থাকেন"। ছোট ভাইটি তখন "সাবওয়ে" নামে একটি ফাস্টফুডের ম্যানেজার। ওর কথায় ওদের স্টোরে কাজ শিখতে লেগে গেলাম। প্রথম দিন রাত বারোটা পর্যন্ত কাজ করে লন্ডনের প্রাণ কেন্দ্র লিভারপুল স্ট্রিটে বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। যথা সময়ে বাস এসে পৌঁছেছে। আমি পকেট থেকে দশ পাউন্ডের একটি নোট বের করে ড্রাইভারকে একটি টিকেট দিতে বললাম। সম্ভবত তখন টিকেটের মূল্য ছিল এক পাউন্ড। ড্রাইভার কাচঘেরা আসন থেকে তার সামনের গ্লাসে সাঁটানো একটি নোটিস দেখিয়ে আমাকে বলছে, "আমার কাছে ভাংতি নেই, বাস থেকে নেমে যাও এবং পরবর্তীতে ভাংতি টাকা নিয়ে বাসে উঠো"।
আমি তাকে বুঝাতে লাগলাম আমি এ শহরে নতুন এসেছি, তাই এখনো টিকেট ক্রয় করার নিয়মটা রপ্ত করতে পারিনি, দয়া করে আমাকে এবারের মত একটি টিকেট দাও। ড্রাইভার আমাকে সোজা বলে দিলেন এ ব্যাপারে তিনি আমাকে কোন সাহায্য করতে পারবেন না। পরের যে বাসটি আসছে সেটির জন্য অপেক্ষা করতে বললেন। আমি সুবোধ বালকের মতো বাস থেকে নেমে গিয়ে পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সকল যাত্রীর সামনে বাস থেকে নামতে বেশ লজ্জাই লেগেছিল।
পনেরো মিনিট পরে আরেকটি বাস এসে থামলে আমি সেটিতে উঠে ড্রাইভারকে দশ পাউন্ডের নোটটি দিতে যাওয়া মাত্রই তিনি আমাকে পূর্বের ড্রাইভারের ন্যায় তার সামনের নোটিশটি পড়তে বললেন। আমি নোটিশটি পড়তে লাগলাম। তাতে লেখা রয়েছে "ড্রাইভার ভাংতি দিতে বাধ্য নয়, অতএব টিকেট কিনতে হলে ভাংতি টাকা নিয়ে যেন যাত্রীরা বাসে উঠে"। আমি এবারো লজ্জামিশ্রিত অভিমান নিয়ে বাস থেকে নেমে গেলাম। তৃতীয়বার বাসে উঠার পূর্বে বাসস্টপে বাসে উঠার জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের কাছ থেকে দশ পাউন্ড ভাঙিয়ে বাসে উঠে টিকেট ক্রয় করে বসে চড়ে বসলাম।
ব্রিটেনে এসে দুই সপ্তাহের মধ্যে উপরের ঘটনা দুটি থেকে আমি যে শিক্ষা দু'টি নিয়েছিলাম তার প্রথমটি হচ্ছে, এই দেশে বসবাস করতে হলে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে টিকেট না নিয়ে বা টিকেট কাটার জন্য ভাংতি টাকা না নিয়ে বাসে উঠা যাবে না। যদিও পৃথিবীর কোথাও যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যায়না আর টিকেট না নিয়ে বাসে বা ট্রেনে উঠা যায় না। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির আইন প্রায় সবই এক ও অভিন্ন। তারপরেও অনেক দেশেই আইনের প্রয়োগ ইস্পাত কঠিন। তার মধ্যে ব্রিটেন উল্লেখযোগ্য। এর পরে যতদিন যাবৎ ব্রিটেনে আছি ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া আর কখনো ময়লা ফেলিনি এবং বাসে টিকেট না কেটে বা টিকেট কাটার জন্য পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা না নিয়ে কখনো বাসে উঠিনি।
অথচ আমি যখন বাংলাদেশে যাই বা যত বড় শিক্ষিত আর জ্ঞানীগুণী বাঙালি পৃথিবীর যে কোনো উন্নত দেশে থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে যাক না কেন আমার পক্ষে বা তাদের পক্ষে উপরের অন্যায় বা বেআইনি কাজগুলি সাচ্ছন্দের সাথে করতে মোটেও সংকোচ করি না বা করেনা। এর কারণ বাংলাদেশে আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। আবার বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বড় টেরোরিস্ট বা খুনিটি উন্নত দেশে এসে সে দেশের এয়ারপোর্টে নেমেই তখন থেকে সে দেশের আইনটি অক্ষরে অক্ষরে শ্রদ্ধা করতে থাকে। অথচ সে নিজের দেশের কোনো আইনকেই কখনো শ্রদ্ধা করেনি এমনকি একদিন আগেও যে এয়ারপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে সে এয়ারপোর্টের অনেক আইনকেই সে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসেছে।
কিছুদিন আগে পদ্মা সেতুতে এক লোক প্রসাব করেছেন। অনেকেই তার সমালোচনা করেছিল। আমি তার সমালোচনা করতে রাজি না। মানুষ সকলেই সভ্য হবে ব্যপারটা এমন হওয়ার কথা নয়। পৃথিবীর কোন দেশেই শতভাগ সভ্য মানুষ পাওয়া যাবে না। লন্ডনের ওয়েম্বলিতে স্টেডিয়াম ভেঙ্গে কিছুদিন আগেও ইউরো ফাইনালে হাজার হাজার দর্শক ঢুকে গিয়েছিল। আমেরিকার পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটাল হিলে হাজার হাজার বন্দুকধারী কিছুদিন আগে দখল নিয়েছিল। কোনো দেশের সরকারই তার জনগনের উপর তাদের নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল আচার ব্যবহারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন না। তাদের বিবেচনা বোধের উপর ছেড়ে দিলে পৃথিবীতে পুলিশ, প্রশাসন, সরকার, কর্তৃপক্ষ, সিস্টেমের কোন দরকার ছিল না। আইনের প্রয়োগ দিয়ে জনগনকে আইন মান্য করানো প্রথম দিকে কঠিন হলেও একসময়ে তা মানুষকে মহৎ ও মহান জাতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
প্রবাস রিলেটেড নিউজ

ঈদুল আদহাঃ কি করব ত্যাগ --জাকিয়া রহমান

বর্ণাঢ্য আয়োজনে জেবিএ’র কর্মকর্তারা অভিষিক্ত মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত কমিউনিটি গড়ার অঙ্গীকার

প্রথমবারের মতো সার্বজনীন উৎসব নিউইয়র্কে অনন্য আয়োজনে বাঙালির বড়দিন উদযাপন

ওয়াশিংটন ডিসিতে জমজমাট ডিসি বইমেলা'২০২২ সম্পন্ন

GOVERNOR HOCHUL ANNOUNCES NEW COVID-19 TREATMENT PUBLIC AWARENESS CAMPAIGN TO EDUCATE NEW YORKERS WHO TEST POSITIVE FOR COVID-19

নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বনভোজন ২৮ জুলাই

GOVERNOR HOCHUL DRIVES FORWARD NEW YORK'S TRANSITION TO CLEAN TRANSPORTATION

ইউএসএ ৯৭-৯৯ এর থ্যাংক্সগিভিং নৈশভোজ পার্টি