সম্প্রতি বাংলাদেশে আমার শিল্পকর্মের দুটি প্রদর্শনী হয়ে গেল।  গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে সাতদিন ব্যাপী একক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ‘শিকড়ে প্রোথিত, ভালবাসায় প্রসারিত(Drifting to The Root, Drifting to Love) আয়োজন করে স্টুডিও ভার্টিকেল। এই প্রদর্শনীতে সাধারণ শিল্পপ্রেমী ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।   আমার দ্বিতীয় প্রদর্শনী ‘আপন ঠিকানায়’ আয়োজন করে নীলফামারী জেলার সাধারণ গ্রন্থাগার। ১৭ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীটি ছিল শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে। দুটো প্রদর্শনীতে বিপুল মানুষের আগ্রহ এবং সমাগম আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে।   ৫৩টি শিল্পকর্ম উপস্থাপন করেছিলাম এই প্রদর্শনীগুলোতে। এর মধ্যে অনেকগুলি শিল্পকর্মের বিষয় ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।‘যশোর রোড’ শিরোনামে আমার একটি কাজ প্রদর্শনীতে ছিল যা নিয়ে কথা তুলেছে একটি বিশেষ গোষ্ঠী। তাদের মতে এই কাজটি ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কাজের কপি।  আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যেশোর রোড (September on Jessore Road) আমার এই শিল্পকর্মটি করার পেছনে অনুপ্রেরণা।   কবি এ্যালেন গিন্সবার্গের একটি ভাস্কর্যও আমি বানিয়েছি যা প্রদর্শনীতে পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। সেখানে দেয়ালে দুটি পোস্টার ছিল। একটি গিন্সবার্গের এবং অপরটি সেপ্টেম্বর অন যেশোর রোড কবিতা। শরণার্থীর ওপর আমি বিভিন্ন সময়ে অনেক কাজ করেছি এবং একটির সাথে অপরটির কোন মিল নেই। বস্তুত ফাউন্ড অবজেক্ট কাজটি এমনই যা নকল করা যায় না। আমাকে নির্ভর করতে হয় সমুদ্র থেকে খুঁজে পাওয়া কাঠের গঠন এবং আকৃতির ওপর।এছাড়াও একই বিষয় নিয়ে (রিফিউজি) আমি বিভিন্ন সময় ‘রোহিঙ্গা’ এবং ‘আইলান কুর্দি’ নামে আরোও দুটি কাজ করেছি।  একটি নির্দিষ্ট মহল আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে সেটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।  বলা হয়েছে আমাকে নাকি মৌখিকভাবে বহুবার অনুরোধ করা হয়েছে এই কাজ থেকে নিবৃত্ত হবার। অথচ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টো যার যথাযথ প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।  পাখি নিয়ে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী কাজ করেছেন। তার মানে এই নয় যে পাখি নিয়ে আমি কাজ করতে পারবো না। পাখি নিয়ে আমি প্রচুর কাজ করেছি যার একটির সাথে অপরটির কোন মিল নেই।   অভিযোগ এসেছে আমি ফুলেশ্বরীর জানালার কাজ অনুকরণ করেছি। জানালার কাজ আমি অনেক আগে থেকেই করি এবং ২০১৫ সালে আমার প্রদর্শনীতে সেই কাজগুলো স্থান পেয়েছিল। এ পর্যন্ত আমার নয়টি একক প্রদর্শনী হয়েছে । প্রতিটি প্রদর্শনীতেই শিল্প বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি ছিল যারা তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। আমার কাজ সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ শিল্প বোদ্ধাদের কাছ থেকে কখনও আসেনি।   মুক্তিযুদ্ধের বা সমসাময়িক অনেক ঘটনা নিয়ে যে কারো শিল্প সাহিত্য করার সুযোগ আছে, থাকবে। কারো কাজ দেখে অন্য কারো মনে হতে পারে, মিল বা সাদৃশ্য আছে। তার মানে নকল বা চুরি করার অভিযোগ অতিকথন ছাড়া কিছুই নয়। প্রকৃতি সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রকৃতি নিয়ে কাজ করার অধিকার যে কোন শিল্পীর আছে। শিল্পের বিষয়বস্তু কখনও কপি রাইট হয় না। আমি সবসময় বলে এসেছি ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কাজ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি তবে আমার কোন কাজই নকল নয়। ফাউন্ড অবজেক্টের কাজ নকল সম্ভব নয়।