গত ২৮ জুলাই জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে 'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র নিয়মিত মাসিক সাহিত্য সাহিত্য আসর। কণ্ঠশিল্পী তাহমিনা শহীদের সংগীত দিয়ে শুরু হয় আসরের নিয়মিত কার্যক্রম। গোটা আসরটি পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, যিনি কবি তাঁর পক্ষে না লিখে থাকা সম্ভব নয়। ভালো হোক, মন্দ হোক, তাঁকে লিখতেই হবে। আমার বেদনার কথা, একাকীত্বের কথা, আনন্দের কথা, এককথায় কবিতা হচ্ছে আমিকে প্রকাশ করার অস্ত্র। সাহিত্য একাডেমিতে সবার কবিতা শুনে মনে হচ্ছে ক্রমশ সকলে নিজস্ব কন্ঠস্বর তৈরি করছে। কাঠিন্য কবিতার দরজা নয়, সহজগামিতা কবিতার অন্যতম প্রধান প্রক্রিয়া। কবিতা পড়ে যদি কিছু ধরতেই না পারলাম, না বুঝলাম, সে কবিতা পড়ার দরকার নেই। বাংলাদেশ থেকে আগত লেখক সিরাজুল ইসলামের পঠিত 'রক্তমাংস' গল্পটি সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি আধুনিক জীবনের গল্প। এই গল্পে আধুনিক জীবনের যে যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে, অপ্রিয় হলেও সত্য এই যন্ত্রণা যেন আমাদের সকলের। আপনার চাওয়া আমার চাওয়া, আপনার সুখ আমার সুখ, আপনার বেদনা আমার বেদনা, যখন অভিন্ন হয়ে যায় তখনই তা স্বার্থক সাহিত্য হয়ে উঠে। দেশ থেকে আগত কবি জাফর আহমদ রাশেদের পঠিত কবিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাঁরা লিখছেন বোধের আরো গভীরে প্রবেশ করেন, অন্তরের চোখ দিয়ে দেখেন।
লেখক ফেরদৌস সাজেদীন বলেন, এই হচ্ছে আমাদের সাহিত্য একাডেমি। দিনদিন সাহিত্য একাডেমির গুণগত সাহিত্য মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটি আমাদের জন্য বড় পাওয়া। তিনঘণ্টা ধরে চুপচাপ একে অপরের গল্প-কবিতা-ছড়া, আলোচনা শুনছে নিবিষ্ট মনে, সাহিত্য একাডেমির এরচেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে! পিনপতন নীরবতায় সত্যিকারের সাহিত্য আসরের চিত্র খুঁজে পাই এখানে এসে। আমাদের এই শহরে সাহিত্য একাডেমি একদল সাহিত্য কর্মী বরাবর উপহার দিয়ে আসছে। বিশ্বাস করি আগামী সময় সহানুভূতির চোখে একদিন বর্তমান সাহিত্য একাডেমির দিকে তাকাবে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।
কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, আমরা যখন লিখতাম অবলম্বন ছিল, খাতা, কলম ইত্যাদি। আমাদের সঙ্গে পাঠকের সেরকম যোগাযোগ হতো না। এখন যাঁরা লিখছেন প্রযুক্তির কল্যাণে পাঠকের সরাসরি মন্তব্য পাচ্ছেন। লেখক-পাঠক কাছাকাছি আসতে পারছেন। এটি ভালো দিক। আমরা যতই বলি রাজনীতি বহির্ভূত সাহিত্যের কথা, আদতে রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়ড, ওডিসি কোনটাই রাজনীতি বহির্ভূত নয়। আমরা প্রায় সকলে মিলে একটাই যেন কবিতা লিখে যাচ্ছি দশকের পর দশক ধরে, খুব আলাদা কিছু সৃষ্টি হচ্ছে না। সবকিছু ফিরে ফিরে আসছে। আশা রাখছি, আগামী প্রজন্ম নতুন করে ভাববে, লিখবে।
ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, সাহিত্য একাডেমির অগ্রগতি দেখে ভালো লাগছে। আমাদের প্রত্যাশা বেড়ে যাচ্ছে। আশা করি সকলের প্রত্যাশানুযায়ী উদ্যোগ তাঁরা নিবেন।
নীরা কাদরী কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে লেখক হুমায়ুন আহমেদের ২০১১ সালে সাক্ষাতের পর কবিকে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের লেখা 'ব্লাক ফ্রাইডে' পাঠ করেন। পাঠের আগে তিনি তাঁদেরকে ঘিরে স্মতিচারণ করেন।
আবৃত্তিকার জি.এইচ.আরজু বলেন, আপনারা যাঁরা কবিতা লেখেন আমাকে দিবেন, আমি আপনাদের কবিতাগুলো পড়তে চাই। কথা বলার পর তিনি আবৃত্তি করেন।
সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে এসে সকলের পাঠ, আলোচনা শুনে ভীষণভাবে বিমোহিত হই।
নাট্যকর্মী এবং নির্দেশক খাইরুল ইসলাম পাখি বলেন, আমার গলা আড়ষ্ট, এবং আমি কিছুটা শংকিত এখানে কথা বলার জন্য। এতসময় ধরে সকলের কথা শুনে এমনটাই অনুভূত হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে, আগামীতেও যেন আসতে পারি এখানকার বন্ধুদের মাঝে এই আশা রাখছি।
শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মনিকা রায় বলেন, এখানে যাঁরা আসেন প্রায় সকলেই লেখেন, পড়েন, আমি আসি শিখতে। সাহিত্য একাডেমির শুরু থেকে ছিলাম, আছি, এবং থাকব।
আসরে আবৃত্তি করেন, মুমু আনসারী, পারভীন সুলতানা, তাহরীনা পারভীন প্রিতী, ও মুনমুন সাহা।
এবারের আসরে যাঁরা স্বরচিত কবিতা, ছড়া পাঠ করেন তাঁরা হলেন, কাজী আতীক, শামস আল মমীন, হোসাইন কবীর, হুমায়ুন কবীর ঢালী, আনোয়ারুল হক লাভলু, রাণু ফেরদৌস, বেনজীর শিকদার, রিমি রুম্মান, রওশন হাসান, ফারহানা হোসেন, লুৎফা শাহানা, সুমন শামসুদ্দিন, সুরীত বড়ুয়া, রওশন হক, শামস চৌধুরী রুশো, আনোয়ার সেলিম, জান্নাতুল আরা জলি, সুলতানা ফেরদৌসী, আলম সিদ্দিকী, রওশন সরকার নীপা, মিয়া এম আসকির, ইমাম চৌধুরী, বিমল সরকার, সবিতা দাস, তাহমিনা খান, পলি শাহীনা প্রমুখ।
আসরে উপস্থিত ছিলেন, আবেদীন কাদের, হুসনে আরা বেগম, শুক্লা রায়, নাসির শিকদার, মিশুক সেলিম, আকবর হায়দার কিরণ, এনামুল হক দিপু, জুয়েদ আহমেদ, নাসিমা আক্তার, মাহবুব রহমান, শিব্বীর আহমেদ, শেলী জামান খান, পারভীন পিয়া, শাহনেয়াজ রাহীম, সিসিলিয়া মোরাল, রাহাত কাজী শিউলি, সাবিনা উর্বি, সেলিম আফসারি, বিধান পাল, বাবু, আশিক মাহমুদ, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।
সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং আগামী আসরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন।