একটা ঘোরের মধ্য, একটা তীব্র উপেক্ষা , আমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে এক ডানা ভাঙা পাখীর আর্তনাদ বুকের ভেতরে হাহাকার করছে। আমি কি বীভৎস, বিকৃত, বদ্ব উন্মাদকে দেখতে পাচ্ছি এক মানুষ নামে জন্তুর মধ্য। ঝোপের পাশে মিষ্টি পাখির ডাক, সুর মিলিয়ে দোয়েল, বুলবুলি আর চাতক পাখি ডেকে যাচ্ছে মিষ্টি অথচ করুণ ভঙ্গিতে। ভয় পেয়ে উড়ে যায় এক ঝাঁক পায়রা। এমন গল্প হতে পারে মানুষ,জন্তু আর পাখীদের নিয়ে।
এক নারীর গল্প আছে যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের অনেক বিচিত্র ঘটনা। আমি সেখানে গল্পের ঝুলি খুলে দেখাবো কত শত রং বেরংয়ের বুক ভরা নি:শ্বাসের শব্দের করুন ঝংকার! অসংবদ্ধ গলায় চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করে সব কিন্তু আমার বাকশক্তি সীমিত। এই সব কথা ঝুমার মনের গহীনে ঘুরে বেড়ায়। ঝুমা কোনদিন ভাবেনি রোহান এভাবে ওকে ঠকাবে। ঝুমার বাবা ওকে কতবার বাঁধা দিয়েছিলো ওর বিয়েতে। রোহানকে ভালোবেসে অনেক আগেই সবকিছু ত্যাগ করছে ঝুমা! এখন তো সব বাবার কথাই সত্যি হলো।
জমাট বাঁধা অন্ধকার। দমকা হাওয়া একা একা ঘুরপাক খায় , নিশ:শব্দে হাওয়া যেনো কাঁদছে বাতাসে ঘুরে ঘুরে। ঝুমাকে বিয়ের পরে রোহান এখানে নিয়ে এসেছে। এটা ওর শ্বশুড় বাড়ী। বাবার বাড়ীর মুখও দেখতে পারেনি ঝুরা বিয়ের পরে। তাওতো প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো। ঝুমা বাইরে এসে একটা গাছের নীচে বসেছে এমনি সময় একটা শরীরি ছায়া হাওয়ার মধ্য খেলে গেলো । একবার নয় পর পর কয়েকবার। আরে কি আশ্চর্য।
শরীর ওর চমকে গেলো। ঝুমা নড়চড়ে বসলো, সিমেন্টের উঠোনের ঘসা লেগে একটা অদ্ভূত ধরনের শব্দ তৈরী হলো ওর তাইই মনে হলো। এই বাড়ীজুড়ে বেশ গাছ। এতো গাছ যে , দিনের বেলাতেও বাড়ির মধ্য অন্ধকার খেলা করে। ঝুমা বিয়ের পর থেকেই দেখেছে রাতে ঘরের ভেতরে কে যেনো দরজার এ-পাশ থেকে ও-পাশে হাঁটে। আবার রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়,অদ্ভুত শব্দ করে, ও বুঝতে পারেনা কি ঘটে রাতে। চোখ দিয়ে দেখেও কিছু বলে না কাউকে। শ্বশুড় - শ্বাশুড়ী ঝুমাকে কখনো ভালো চোখে দেখে না। ওর সরলতা নিয়ে ব্যঙ্গ করে,হাসে , অপবাদ দেয়। আসলেই ওতো ভীষণ সরলই। নিজেকে এই বাড়ীতে আশ্রিতা মনে হয়। রোহান গভীর রাতে নেশা তরে এসে ওর শারীরিক নির্যাতন করে।
ঝুমার বাবা-মা মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে হার্ট এ্যটাক করে মারা যায়। এর পরে ঐ ভাড়া বাড়ীতে আর কোনদিন যায়নি। কেউতো নেই ওর আর। লেখাপড়া করেনি , এর জন্য রোহান,শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সব অত্যাচার সহ্যকরে থাকতে হয়। ওর কষ্টগুলো ওর সাথে দুপুর রাতে ঘুম ভেঙে বাধ্যতামূলক হৃদয় ভেঙে দেয়। ব্যঙ্গরা খিল খিলিয়ে হাসে। এ কেমন জীবন ঝুমার!
সেদিন রোহান খুব বেশী নেশা করে গভীর রাতে ঘরে ফিরে আবার হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে নেশার ঘোরে ঘুমন্ত ঝুমার ঠোঁট চুষে নেবার জন্য হাত দুটো এগিয়ে দেয় বুকের দিকে, ঝাপিয়ে পড়ে ওর দেহের উপরে। ঝুমার ঠোঁট , হাত , চোখ , বুক এসবের ভেতরে হারিয়ে যায় যেনো এক নীল সমুদ্রে । সঙ্গে সঙ্গে ঝুমার দেহ শিথিল হয়ে পড়ে নির্দয় বিছানায়। পৌরুষের ভারমুক্তো করে কখন যে বিছানায় ঝাপিয়ে পড়া দেহটা এলিয়ে ঘুমিয়ে যায় তা তার অনুভূতিতে নেই। এভাবে দিনের পর দিন চলছিলো অত্যাচার, অবিচারের পালা।
এর পরে আরো এক বছরের শেষের দিকে একদিন বাড়ীর পিছনের পুকুরে একটি লাশ ভেসে ওঠে। ভোরের নরম আলোয় ঝুমার দেহ দেখা যায়। খবর পৌঁছাতেই কৌতুহলী মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। বিস্ময় উপচে পড়ে। আপনা থেকেই যেনো ঝুমার নগ্ন শরীর ভীবৎস রুপে দেখা যায়। শরীরে প্রতিটি স্হানে কাটা রক্তের দাগ। আকাশে ঝাকে ঝাকে চিল উড়ে বেড়াচ্ছে। কখন ওর দেহটা কামড়ে ছিড়ে ছিড়ে খাবে। আকাশ কালো করে ঝড় আসছে। বাতাস বইছে ,ঝটিকা বৃষ্টি শেষে মেঘ ফুঁড়ে চাঁদ। জ্যোৎস্নার জলছবি বেরিয়ে আসে ঝুমার তীক্ষ্ম আর্তনাদ আকাশে বাতাসে ! গোধূলি বেলায় ঝুমা যেনো রঙে রঙে মিশে আছে গোধূলির রঙে!!
তসলিমা হাসান
৬ই আগস্ট,২০২৩, টরেন্টো, কানাডা।