শুরুটা হলো ছন্নছাড়া, নেইমার-ভিনিসিউসদের নিজেদের খুঁজে পেতে কেটে গেল বেশ খানিকটা সময়। এরপর আক্রমণের ঢেউ তুলল তারা। তাতে ভেসে গেল সার্বিয়ার সব বাধা। রিশার্লিসনের জোড়া গোলে বিশ্বকাপ মিশনে শুভসূচনা করল তিতের দল।লুসাইল স্টেডিয়ামে ৮৮ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে বৃহস্পতিবার রাতে ‘জি’ গ্রুপের ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর সুযোগ সন্ধানী গোলে ডেডলক ভাঙেন রিশার্লিসন। অসাধারণ নৈপুণ্যে করেন পরেরটি।রিশার্লিসনের জোড়া গোলে ব্রাজিলের দারুণ শুরু

স্কোরলাইন দেখে বোঝার উপায় নেই, মাঠের ফুটবল কতটা একপেশে ছিল। ব্রাজিলিয়ানদের প্রবল আক্রমণের মুখে সার্বিয়া তাদের সীমানা থেকে সেভাবে বের হতেই পারেনি।পরিসংখ্যানেও ফুটে উঠছে তাই। প্রায় ৬০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে ২২টি শট নেয় ব্রাজিল, যার আটটি ছিল লক্ষ্যে। জবাবে সার্বিয়া গোলের প্রচেষ্টা নেয় পাঁচবার, যদিও কোনোটিই তেমন ভাবাতে পারেনি ব্রাজিলের রক্ষণকে।

ম্যাচের শুরুর চিত্র যদিও ছিল একেবারেই ভিন্ন। আগের সাত ম্যাচের সবকটি জয়ের পথে প্রতিপক্ষের জালে ২৬ বার বল পাঠানো ব্রাজিল প্রথম দিকে ছিল একেবারেই এলোমেলো।রক্ষণাত্মক সার্বিয়ার ওপর চাপ ধরে রাখলেও তাদের প্রথম ২৫ মিনিটের খেলায় উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে ছিল কেবল ভিনিসিউস জুনিয়রের দুই দফায় গতির ঝলক।রিশার্লিসনের জোড়া গোলে ব্রাজিলের দারুণ শুরু

২৭তম মিনিটে প্রথম নিশ্চিত সুযোগ পায় ব্রাজিল। ভিনিসিউসের উদ্দেশ্যে ডি-বক্সে দারুণ থ্রু বল বাড়ান চিয়াগো সিলভা, কিন্তু যথেষ্ট ক্ষিপ্র হতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। এগিয়ে এসে বল নিয়ন্ত্রণে নেন গোলরক্ষক ভানিয়া মিলিনকোভিচ-সাভিচ।সাত মিনিট পর আরেকটি ভালো সুযোগ পায় ব্রাজিল। এবার লুকাস পাকেতার পাস বক্সে পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর দুর্বল শট নেন রাফিনিয়া।

৪০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের একটি ব্যর্থ আক্রমণ রুখে পাল্টা আক্রমণ শাণায় ব্রাজিল। বল পায়ে বক্সে ঢুকে শেষ মুহূর্তে ডিফেন্ডার নিকোলা মিলেনকোভিচের চ্যালেঞ্জে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি ভিনিসিউস।বিরতির পর খেলা শুরু হতেই নিজেদের ভুলে গোল খেতে বসেছিল সার্বিয়া। বক্সের মুখে রক্ষণের দুর্বলতায় বল ধরে ভেতরে ঢুকে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন রাফিনিয়া।রিশার্লিসনের জোড়া গোলে ব্রাজিলের দারুণ শুরু

৫৫তম মিনিটে নেইমারের লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে ব্রাজিলের হতাশার পাল্লা ভারি হয়। বাঁ দিক থেকে ভিনিসিউস ক্রস বাড়ান পেনাল্টি স্পটের কাছে। তবে পিএসজি তারকা আগেই শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, শেষ পর্যন্ত শট নিতে পারলেও লক্ষ্যের ধারেকাছে ছিল না।একটু পর দূর থেকে চেষ্টা করেন আলেক্স সান্দ্রো, কিন্তু ইউভেন্তুস ডিফেন্ডারের বুলেট গতির শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও পোস্ট এড়াতে পারেনি।

অবশেষে ৬২তম মিনিটে মেলে সাফল্যের দেখা। বল পায়ে দারুণ কারিকুরিতে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে বক্সে ঢোকেন নেইমার। কাছেই ছিলেন ভিনিসিউস, বল নিয়ন্ত্রণে পেয়েই শট নেন তিনি। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে ফেরালেও রাখতে পারেননি নিয়ন্ত্রণে, ছয় গজ বক্সের মুখে বল পেয়েই ডান পায়ের শটে বাকি কাজ সারেন রিশার্লিসন।চার মিনিট পর আবারও আক্রমণে নেইমার। প্রতিপক্ষের ট্যাকলে তিনি পড়ে গেলে আলগা বল ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিউস। বিনা বাধায় নিতে পারতেন শট; কিন্তু তা করতে গিয়েই পিছলে পড়ে যান তিনি।রিশার্লিসনের জোড়া গোলে ব্রাজিলের দারুণ শুরু

৭৩তম মিনিটে অসাধারণ নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রিশার্লিসন। বাঁ দিক থেকে সাইড ফুট ক্রস বাড়ান ভিনিসিউস, আর বাঁ পায়ের টোকায় বল উপরে তুলে শরীরটাকে শূন্যে ভাসিয়ে দুর্দান্ত অ্যাক্রোবেটিক শটে ঠিকানা খুঁজে নেন টটেনহ্যাম হটস্পার ফরোয়ার্ড।জাতীয় দলের হয়ে এটি তার ১৯তম গোল, বিশ্বকাপে দুটি।আট মিনিট পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু, কাসেমিরোর শটও ভাগ্যের ফেরে বাধা পায় পোস্টে। পরের দুই মিনিটে রদ্রিগো ও ফ্রেদের শট প্রতিহত হয়।

ভিনিসিউসের বদলি নামা রদ্রিগো তিন মিনিট পর আবারও চেষ্টা করেন জোরাল শটে। এবার পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল।

‘হেক্সা’ জয়ের মিশনে দারুণ শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই এখন তিতে-বাহিনীর বড় চ্যালেঞ্জ।