‘সমতা’র নামে সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টায়, আমেরিকার শুল্ক দুর্বৃত্তায়নের ‘প্রহসন’ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় এক ‘সুনামি’ সৃষ্টি করতে চলেছে। বিশ্বের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমেরিকা যেন নিজেই নিজেকে ‘খাদের কিনারে’ ঠেলে দিচ্ছে। চায়না মিডিয়া গ্রুপের সিজিটিএন-এর বিশ্বব্যাপী দর্শকদের উপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতারা ‘সমতুল্য শুল্ক’-এর নামে আমেরিকার একতরফা দুর্বৃত্তায়নের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের মতে, এ পদক্ষেপ বিভিন্ন দেশের পাল্টা ব্যবস্থাকে উসকে দিতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত ‘শুল্ক বিশ্বযুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।


আমেরিকা দাবি করছে যে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে এবং এই ‘সমতা’র অজুহাতে সব বাণিজ্য সহযোগীর উপর শুল্ক বাড়াচ্ছে, যার উদ্দেশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। তবে ৮১.০৩% বিশ্বব্যাপী উত্তরদাতা এই দাবির সাথে একমত নন। তাদের মতে, আমেরিকার এই পদক্ষেপ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সিতে প্রধান বাণিজ্য সহযোগীদের উপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'আমেরিকান অ্যাকশন ফোরাম'-এর তথ্য অনুযায়ী, তার প্রথম মেয়াদের সংরক্ষণবাদী নীতির কারণে আমেরিকার ভোক্তাদের বার্ষিক প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছিল। জরিপে ৮১.৯৪% উত্তরদাতা মনে করেন যে ‘সমতুল্য শুল্ক’ আমেরিকার নিজস্ব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, বরং আমেরিকার ভোক্তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করবে।
বিভিন্ন দেশের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা ভিন্ন। 


প্রতিটি দেশ নিজেদের পণ্যের ভিত্তিতে উপযুক্ত শুল্ক নির্ধারণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে ‘পারস্পরিক সুবিধা’ অর্জন করতে পারে। আমেরিকার এই ‘শুল্ক প্রহসন’ বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায় অর্জিত স্বার্থের ভারসাম্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করার শামিল। ৮২.৮% উত্তরদাতা উল্লেখ করেছেন যে, দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শক্তির অসমতার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি সমতুল্য শুল্কের জেদ একেবারে অযৌক্তিক। আমেরিকার এই শুল্কের লক্ষ্যবস্তু বেশিরভাগই উন্নয়নশীল দেশ। এ প্রসঙ্গে ৮২.৯৬% উত্তরদাতা আমেরিকার এই ‘নির্বিচার আক্রমণ’-এর নিন্দা জানিয়েছেন, যা বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের অধিকারকে ক্ষুন্ন করছে। ৮৪.৪৩% উত্তরদাতা মনে করেন যে আমেরিকার ‘সমতুল্য শুল্ক’ আরোপ বাণিজ্য সহযোগী ও ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের সাথে বাণিজ্যিক অসাম্যের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আমেরিকার জাতীয় সুনামকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

 


বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হিসেবে আমেরিকার এই একতরফা ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ‘সমতুল্য শুল্ক’ চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একতরফা দুর্বৃত্তায়নের চূড়ান্ত উদাহরণ। এ বিষয়ে ৭৯.৪৭% উত্তরদাতা আমেরিকাকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। ৭৯.৫৮% উত্তরদাতা মত দিয়েছেন যে ‘সমতুল্য শুল্ক’ আমেরিকার বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের নতুন হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উত্তেজনা ও বিশ্ব অর্থনীতির বিভাজনকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
এই জরিপটি সিজিটিএন-এর ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, আরবি ও রুশ প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোট ৯ হাজার ৬০০ বিদেশী দর্শক জরিপে অংশ নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। 

সূত্র : স্বর্ণা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।