জ্যামাইকা হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন মাইন উদ্দীন আহমেদ ভাই। উন্নত দেশে এসে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া হল না তাঁর। কিডনি সমস্যা ছিল ওনার। কিন্তু জ্যামাইকা হাসপাতালে কোন কিডনি ডিপার্টমেন্ট ছিল না। ছিল না কোন টিমওয়ার্ক। ডাক্তারদের ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ারের ছুটির বলী হলেন আমাদের সবার প্রিয় মাইন ভাই!
শুক্রবার যখন স্মরণসভায় সদ্য প্রয়াত মাইন ভাইয়ের ছেলে ও তাঁর কাছের মানুষরা এই কথাগুলি বলছিলেন চোখের পানি আটকাতে পারছিলাম না! জ্যামাইকা আর এলমহার্স্ট হাসপাতালে কোন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তি না হবার আহবান এল এই সভায়। সবার কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, মাইন ভাইয়ের কি এভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিল! সারাজীবন কষ্ট করে এসে, বিনা চিকিৎসায় প্রচন্ড কষ্ট পেয়ে মৃত্যু হল ওনার!
দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও দি অবজারভার নামে যে দুটি ইংরেজী পত্রিকায় মাইন ভাই কাজ করতেন, কোথাও নিয়মিত বেতন হত না। মাসের মাস অর্থকষ্টে থাকতে হয়েছে ওনাকে। ওনার ছেলে রিয়াজ বলছিল, সংসার চালাতে ওর বাবার দিনে ও রাতে দুটি চাকরী করতে হয়েছে জীবনের বেশীরভাগ সময়! তখন আমার মনে হল, আমিও জনকণ্ঠে টানা নয় মাস কোন বেতন পাইনি!
ইংরেজী ও বাংলা দুই ভাষায় যারা সাংবাদিকতা করেছেন, মাইন ভাই ছিলেন সেই বিরল মানুষদের একজন। কবিতা লিখতেন। অনুবাদ করতেন। সদাহাস্য, পরোপকারী, আড্ডাবাজ, বন্ধুবৎসল একজন সহজ মানুষ। আর পৃথিবীতে সহজ হওয়াই কিন্তু কঠিনতম কাজ।
নিউইয়র্কের বাঙালি জনসমাজে মাইন ভাইয়ের আগমন বেশীদিনের নয়। প্রিয়ভাজন সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরন ভাইয়ের মাধ্যমে পরিচয় ওনার সঙ্গে। কিরন ভাই ওনাকে ডাকতেন, মেইন ভাই।
সেই মেইন ভাই এলেন যেন ধুমকেতুর মতো। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। তারপর চলে গেলেন। কাউকে একটুও অসুবিধায় ফেললেন না। জীবনেও ছিলেন নায়ক। বিদায়ও নিলেন নায়কের মতো!