যখন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়তাম (১৯৬৫- ’৬৬), তখোন স্বপ্ন দেখতাম- বড়ো হয়ে সিনেমার নায়ক হবো। সেই স্বপ্ন অনেকদিন লালনও করেছি! কিন্তু আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে যখন আমাদের ‘ঢাকাই-সিনেমা’ ভিন্ন পথে যাত্রা শুরু করলো- তখোন সে স্বপ্ন ছেড়ে, শুধুমাত্র টেলিভিশন অভিনয়ে মনযোগী হলাম। পাশাপাশি- জড়িয়ে পড়লাম টিভি-সাংবাদিকতা আর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে। সে সব গল্প ফেসবুকের পাতায় কয়েকবার লিখেছিও বটে।
ক্লাস সেভেন এইটে (১৯৬৭- ’৬৮) পড়ার সময়ে নায়ক ‘রাজ্জাকের চুলের মতো চুল’ আমার কবে হবে তা নিয়ে বন্ধুদের সাথে ‘মিনি সেমিনার’ করতাম। নায়ক রহমান আর জাফর ইকবালের ‘হেয়ার স্ট্যাইল’ও আমাদের প্রভাবিত করতো বেশ। তবে সেটা ‘ওই পর্যন্ত’ই সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু জীবনের অপরাহ্নে এসে জড়িয়ে গেলাম চলচিত্রাভিনয়ে। গত নভেম্বরের ২৭, ২৮ তারিখে ধুমিয়ে অভিনয় করেছি এফডিসি’র নয় নম্বর ফ্লোরে।
পরিচালক সারওয়ার তমিজ উদ্দিন আগে বেশ’ক'টা প্রামাণ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন বলেই জানি। এক সময়ে উনি তানভীর ভাইকে (তানভীর মোকাম্মেল) সহযোগিতা করতেন। এবারে ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের’ অনুদান নিয়ে নির্মাণ করছেন ‘মূল ধারা’য় প্রথম চলচ্চিত্র- ‘ভাষার জন্য মমতাজ’। ওঁর আমন্ত্রণ আর জোরাজুরির আব্দারেই ‘জলে নামতে’ হলো!
আমি এই চলচ্চিত্রে- সেই সময়ের (১৯৫৩ সালে) একজন মহকুমা প্রশাসক-এর (যিনি একইসঙ্গে মহকুমা মেজিস্ট্রেট) ভূমিকায় অভিনয় করছি। এই গল্পটি নারায়ণগঞ্জের একজন ভাষা সংগ্রামীর জীবনের সত্য কাহিনী অবলম্বনে রচিত। গল্পটি রচনা করেছেন পরিচালক সারওয়ার নিজেই। গল্পের গাঁথুনিটি বেশ আটসাঁট, মেদহীন। আশা করছি চলচ্চিত্রটি দর্শকদের ভালো লাগবে।
‘ভাষার জন্য মমতাজ’ চলচ্চিত্রে ‘মমতাজের’ ভূমিকায় অভিনয় করছেন নায়িকা নিপুন। নায়কের নামটি জানা হয় নি! আমি পার্শ্ব চরিত্রে আছি। চরিত্রটি খুব বিশাল নয়, তবে বেশ সিগনিফিকেন্ট। কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে দেয় এই চরিত্রটি (মহকুমা প্রশাসক)!
সেদিনের চিত্রধারণকালে পরিচিতদের মাঝে শুধু সুব্রত’দাকেই (সুব্রত চট্টোপাধ্যায়) পেয়েছি মাত্র। বাকীদের সাথে আগে কখনো কোথাও কাজ করেছি বলে মনে পড়ে না! সুব্রত’দা কোর্ট-দারোগার ভূমিকায় অভিনয় করছেন। উনি এমনিতেই শক্তিধর অভিনেতা (এক সময়ে নায়ক ছিলেন); তবে এই চরিত্রে দারুণ অভিনয় করছেন।
নায়িকা নিপুনের সাথে দু’খানা সিকোয়েন্স ছিলো। ক্যামেরার সামনে ‘বাক্য’ বিনিময় হয়েছে বার তিনেক; বাকীটা শুধুই ‘এক্সপ্রেশন’! তবে এমনিতে নিপুন বেশ স্মার্ট এবং সজ্জন মানুষ। সিনিয়রদের যথেষ্ট সমীহ করেন। অনুরোধ জানালেন উনাদের শিল্পী সমিতির ‘সদস্য’ পদ গ্রহন করতে। আমি সাগ্রহে রাজী হয়েছি।
এই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক মঞ্জু ভাই বেশ মজার মানুষ। সারাক্ষণ ‘আনন্দ’ নিয়েই কাজ করেন! তবে সহকর্মীদের বেশ ‘দৌড়ের উপরে’ রাখেন মনে হলো। ক্যামেরায় ভীষণ দক্ষ। আলোক প্রক্ষেপন এবং ডিজাইনে ‘ওস্তাদি’ আছে; সেটা উনার লাইট দেখেই বোঝা যায়। আমাকে খুবই ‘সহযোগিতা’ করেছেন উনি।
শুধু মঞ্জু ভাই-ই নয়, ‘সুঁই থেকে কামান’- সেদিন যারা ওই স্টুডিওতে উপস্থিত ছিলেন- তারা সবাই আমাকে ভীষণ সহযোগিতা করেছেন। সহ-পরিচালক মনির ভাই এবং বিপ্লব ভাইয়ের আন্তরিকতা কিছুতেই ভুলবার নয়। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
তবে এফডিসি’র খাবারে সেই ‘ঐতিহাসিক স্বাদটুকু’ আর পাই নি! ‘দিলে’ বড়ো চোট পেলাম তাতে
! আমরা টিভি নাটক কিংবা প্রামাণ্যচিত্রের শুটিং করার সময়েও এফডিসি থেকে খাবার আনিয়ে থাকি। সেগুলো যে পরিমান সুস্বাদু ছিল- সেই দুই দিনে তা পাওয়া গেলো না! একজন বললেন- ‘করোনা পরবর্তীকালে’ খাবারের মান নাকি একটু নেমে গিয়েছে!
প্রতিদিন (২দিন) সকাল ৯টায় call ছিল লোকেশনে। একটা সিএনজি নিয়ে এফডিসি’র অস্থায়ী নতুন গেট দিয়ে নয় নম্বর ফ্লোরে গিয়েছি। এই ফ্লোরের পশ্চিম পাশে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ একটি চমৎকার ম্যুরাল। এই ম্যুরালটি সম্পর্কে আমার জানা ছিল আগেই। তাই কস্টিউমের ব্যাগের ভেতরে অল্পকিছু গোলাপের পাঁপড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম জাতির পিতার ম্যুরালে দেবার জন্য। পাঁপড়িগুলো ম্যুরালের পাদদেশে বিছিয়ে দিয়েই ভেতরে ঢুকে গিয়েছি ওই দু’দিন।
যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভায় বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী থাকাকালে তাঁর প্রস্তাবনা আর একান্ত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা এফডিসি’- ঢাকা চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন। সেটা ১৯৫৭ সালের কথা। নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো বিষয়টি জানেন না! সে জন্যই তথ্যটি উল্লেখ করতে মন চাইলো।
ভালো থাকুন সবাই।
সৎ চলচ্চিত্রের জয় হোক।
------------------------------
আমি যে সব ছবিতে আছি সেগুলো ওই চলচ্চিত্রের প্রোডাকশন ম্যানেজার ইকবাল আকাশের তোলা। বাকী ছবিগুলো আমি ‘আসনে’ বসেই তুলেছি!
।। অবশেষে চলচ্চিত্রে............।। কাওসার চৌধুরী
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:২২ এএম

সারাবাংলা রিলেটেড নিউজ

জীবন্ত দুই কিংবদন্তী বাংলাদেশের, খেলোয়াড় জাকারিয়া পিন্টু ও সাংবাদিক মুহম্মদ কামরুজ্জামান-- সৈকত রুশদী

ঠাকুরগাঁওয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মিনা দিবস পালন

ছাতিয়ানগ্রামে ভি ডব্লিউ বি এর চাল বিতরণ করলেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক আবু

সারিয়াকান্দিতে আব্দুল মান্নান এমপি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

বিজয় দিবস ------ আইভি রহমান

একসঙ্গে ৪ সন্তানের মা হলেন এক গৃহবধূ!

প্রেমের টানে মালদ্বীপের তরুণী এসেছেন কুমিল্লায়

'অন্বয় প্রকাশ সাহিত্য পুরষ্কার ২০২২' ২১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট অডিটরিয়ামে