এম আব্দুর রাজ্জাক বগুড়া থেকে :


কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। তবে বর্তমানে গড়ে ওঠা উন্নত মানের পরিকাঠামো ধীরে ধীরে দেশের শিল্পকে এক অন্য মাত্রায় পৌচ্ছে দিচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের শিল্পখ্যাতিকে আরো একধাপ এগিয়ে দিতে, বাংলাদেশের দুটি পণ্য শীতলপাটি ও বগুড়ার দই জিআই স্বীকৃতি পেতে চলেছে। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে কোনো পণ্যের গুণগতমান নিয়ে খ্যাতি তৈরি হলে তাকে এই সম্মান জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত দেশের ১১টি পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি। এরপর ধীরে ধীরে এই সম্মান পায় ইলিশ মাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, কালি জিরা, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি। বর্তমানে এই জিআই স্বীকৃতি পাওয়া এই পণ্যগুলোর একক স্বত্ব শুধু বাংলাদেশের।

আরও পড়ুন স্বাদে অতুলনীয় মুখে দিলে যেন অমৃত, বগুড়া শহর আজও একইভাবে প্রসিদ্ধ দইয়ের সমাহারে!

শীতলপাটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর এক অন্যতম স্তম্ভ। একসময় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের এই শীতলপাটি জায়গা করে নিয়েছিল মোগল রাজদরবার ও ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার রাজসভায়। এই পাটির বিশেষত্ব হলো- এটি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি, যা ব্যবহারে এক ধরনের আরামদায়ক শীতল অনুভূতি পাওয়া যায়। একটি পাটি তৈরিতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। দাম শুরু হয় ৫০০ টাকা থেকে, যা নকশাভেদে ৬ হাজার টাকার বেশিও হয়। এ ছাড়া শীতলপাটি দিয়ে ফুলদানি, শোপিস, খেলনা, ফাইল ফোল্ডার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ছবি ও আয়নার ফ্রেম সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বানানো হয়। শীতলপাটিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে ২০২১ সালে ডিপিডিটির কাছে জিআই সনদের জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন।

পাশাপাশি বগুড়ার বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর বগুড়ার দইকে জিআই পণ্য করতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিপিডিটির কাছে আবেদন করে। তাদের মতে, “প্রায় ১৫০ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নীলকণ্ঠ ঘোষের হাত ধরে বগুড়ার এই দইয়ের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বগুড়ার দুই শতাধিক দোকানে দই বানানো হয়। এসব কারখানায় সরাসরি কাজ করেন প্রায় সাত হাজার মানুষ। এ ছাড়া দুধ উৎপাদন, দইয়ের মাটির পাত্র, মোড়ক ও বাঁশের কাঠামো তৈরিতেও আরও ১০ হাজার মানুষ জড়িত।” শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদফতরের উপ-নিবন্ধক আলেয়া খাতুন জানান, ” বগুড়ার দই ও শীতলপাটির জন্য যে আবেদন করা হয়েছিল, তা যাচাই চলছে। প্রক্রিয়াটি এই মূহুর্তে শেষ পর্যায়ে আছে। কয়েকদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেই গেজেট প্রকাশ করা হবে।” মনে করা হচ্ছে, জিআই অর্থাৎ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্নের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই দুটি পণ্য বিশ্বের দরবারে নতুন ভাবে জায়গা করে নেবে।