আমাদের অনেক কাছের মানুষ, অতি আপনজন, লেখক- গবেষক ও ভাষা বিশেষজ্ঞ ফরহাদ খানের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিক। গতবছর এই দিনে ( শুক্রবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ ) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ৭৭ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। এর আগে বেশ কিছুদিন থেকে তিনি ব্লাড - ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিলতায় ভুগছিলেন এবং শেষদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এছাড়া তাঁর হার্টের সমস্যাও ছিল। যতদূর শুনেছি, তাঁর হৃৎপিণ্ডটি ছিল বুকের ডানপাশে, যা সাধারণত বামপাশে থেকে থাকে। ব্যতিক্রমী এই অসুখটি Dextrocardia নামে পরিচিত।

জনাব খানকে সেই দিনই মিরপুর জান্নাতুল মাওয়া মসজিদে জানাজার পর মিরপুর গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে পুত্র নিয়ামুল আহসান খান ও কন্যা তানিয়া নাসরিন দুজনেই বিবাহিত এবং ঢাকায় বিদেশি সংস্থায় কর্মরত। ফরহাদ খানের পত্নী আয়েশা বেগম ওরফে রুনি চার বছর আগে জান্নাতবাসী হয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি স্মৃতিভ্রংশ ( ডিমেনশিয়া ? )রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

ফরহাদ খানের পরিচিতি : ফরহাদ খান ( Forhad Khan ) যাঁর পিতৃদত্ত নাম আবদুর রব খান, জন্ম কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামে। জন্মতারিখ ২৩শে ডিসেম্বর, ১৯৪৪। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি গ্রহণের পর ১৯৭০ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বপালনের পর ভাষা- সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগের পরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ( ২০০২ )। মাঝখানে তিনি কিছুকাল ডয়েসেভেলে জার্মান বেতারের (DW) বাংলা বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বিটিভি'র "মাতৃভাষা " শীর্ষক অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন। এছাড়াও তিনি একসময় বিটিভিতে ' মোদের গরব মোদের আশা ও আবহমান বাংলা নামে দুটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এবং এককালে সংবাদপাঠক ছিলেন। তিনি মাঝে মাঝে পত্র- পত্রিকায় লিখতেন তবে চোখের সমস্যার কারণে শেষদিকে আর নিয়মিত লেখা হতো না। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : শব্দের চালচিত্র, নীল বিদ্রোহ : বাংলায় নীল অন্দোলন, প্রতীচ্য পুরাণ, হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী, গল্প শুধু গল্প নয়, বাঙালির বিবিধ বিলাস, বাংলা শব্দের উৎস- অভিধান, চিত্র ও বিচিত্র, ব্যারন মুনশাউজেনের রোমাঞ্চকর অভিযান ইত্যাদি। প্রবন্ধ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি ২০১৯ সালে তাঁকে সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ পুরস্কারে সম্মানিত করে।

ফরহাদ খান অবসর জীবনে বসবাসের জন্য রাজশাহী শহরের পদ্মা আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির নাম "হরফ"। পত্নীবিয়োগের পর তিনি কখনো রাজশাহীর বাড়িতে আবার কখনো ঢাকায় পুত্র- কন্যাদের সঙ্গে বাস করতেন। বাড়িটি এখন তালাবদ্ধ পড়ে আছে বলে শুনেছি।

মহান আল্লাহ ফরহাদ খান ও তাঁর সহধর্মিণীর প্রতি সদয় হোন এবং তাঁদের আত্মাকে শান্তিতে রাখুন। আমিন।।