মাতৃভাষা বাংলা : হৃদয়ে ও মগজে ধারণ করি
নন্দিনী লুইজা
অঙ্গলা অরণ্য দুই বোন। পিঠাপিঠি বড় হয়ে উঠছে। তাদের মা তাদেরকে একে অপরের পরিপূরক করে বড় করার চেষ্টা করছে। তারা মা-বাবার কাছে, পাঠ্যবই, বিভিন্ন সৃজনশীল বইয়ে এবং প্রতি বছর শহীদ মিনারে গিয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জেনেছে। একটু বড় হয়ে যখন স্কুলে পড়তো তাদের মা নন্দিনী তাদেরকে নিয়ে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে-ভাষার বিষয়ে তাদেরকে অংশগ্রহণ করাতো। সেখানে বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা, ছবি আঁকা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার নিয়ে আসতো। দিনটাকে প্রচন্ডভাবে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে উদযাপন করতো। এমনকি মায়ের সঙ্গে তারা প্রতি বছর শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে বড় হয়েছে।
করোনাকালীন সময়, কিন্তু আগামীকাল শহীদ দিবস। দুই বোন চিন্তা করল এবার যেহেতু শহীদ মিনারে যাওয়া হচ্ছে না তাহলে আমরা আমাদের মহল্লায় একটা শহীদ মিনার তৈরি করব। আঙ্গনা প্রাঙ্গণার বাবা বলছিল তোমরা মেয়ে মানুষ মাটি কাদা কোথায় পাবে এই শহর এলাকায়?? রাতে এলাকায় লোক থাকবে না কি ভাবে কি করবে। সরাসরি নিষেধও করছে না। কিন্তু ওদের মা বলেছিল অবশ্যই পারবে, আমি সহযোগিতা করব।
ঠিক রাতে দুই বোন এলাকার কিছু বস্তি ছেলেদের সাথে নিয়ে মাটি কাদা সংগ্রহ করে ফ্ল্যাটের সামনেই একটা শহীদ মিনার তৈরি করল। মেয়ে দুটোর দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখে মা বেলকনি থেকে তাদেরকে উৎসাহিত করছিল। অঙ্গনা অরণ্যের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। মহল্লার ছেলেগুলোকে নিয়ে এত চমৎকার করে শহীদ মিনার তৈরি হয়ে গেল। ছেলে গুলো কাজে সহযোগিতা করেছে তাই তাদের কে উৎসাহিত করার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারিতে মা নন্দিনী খিচুড়ি রান্না করে সবাইকে নিয়ে খেয়েছে। ওদের মা চেষ্টা করেছে সন্তানদের মধ্যে দেশপ্রেম, মাতৃভাষা, স্বাধীনতাকে বুকে লালন করাতে।
আজকে মনে হয় তারই প্রতিফলন। সকালে দেখা গেল এলাকার অনেক লোকজন তৈরি করা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। দাঁড়িয়ে থেকে অনেক কে বলতে শুনেছে মহল্লার মধ্যে মাটি কাদা দিয়ে কারা এই শহীদ মিনার মাতৃভাষাকে ভালোবেসে তৈরি করল।