এম আব্দুর রাজ্জাক,বগুড়া থেকে :
বগুড়ায় সিঁদুররাঙা হাসিমুখে দেবীকে বিদায়
উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাক-ঢোলের বিদায় সুরে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। পুরাণমতে, বিজয়া দশমীর অন্যতম আয়োজন দেবীবরণ। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান, পরে একে অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে দেবীকে বিদায় জানানো হয়। মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। এরপর নেচে গেয়ে দেবীদুর্গাকে বিদায় জানান সনাতন ধর্মালম্বীরা। রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়া শহরের মগলিশপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।সকাল থেকেই এ মন্দিরে সিঁদুররাঙা পুণ্যার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সকালে বিজয়া দশমীর পূজা শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাক-ঢোলের বাজনায় ছিল দেবীদুর্গার বিদায়ের সুর।
মন্দিরে আসা প্রিয়াঙ্কা রানি বলেন, পাঁচদিন ধরে নানা আয়োজনে পূজা উদযাপন করা হয়েছে। সিঁদুর খেলা, নেচে গেয়ে উদযাপন করা হয়েছে। মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে হচ্ছে এতে কিছুটা খারাপ লাগছে। আগামী বছর আবারও ফিরে আসবে।
সনাতন ধর্ম মতে, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী দুর্গা, বিসর্জনের মধ্যদিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত হাসি-আনন্দ আর পূজা-অর্চনার মধ্যদিয়ে পাঁচদিন চলে দুর্গোৎসব। দোলায় বা পালকিতে আগমনের পর এবার দেবী দুর্গার গমন হয় ঘোটক বা ঘোড়ায় চড়ে।
রোববার বিজয়া দশমী, সকালে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্যদিয়ে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। আর বিকালে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়েই শেষ হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচ দিনব্যাপী এ দুর্গোৎসব।
বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলার ১২টি উপজেলায় ৬২৮টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে পৌর শহরে পূজার সংখ্যা ছিল ৭৩টি। এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়।
বগুড়ায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসববিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে বগুড়ায় শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে বিহিতপূজা ও দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। এরপর বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। চলে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এর আগে সকাল থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয় সিঁদুর খেলা, আরতি, শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা।
সনাতন ধর্ম মতে, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী দুর্গা, বিসর্জনের মধ্যদিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। দোলায় বা পালকিতে আগমনের পর এবার দেবী দুর্গার গমন হয় ঘোটক বা ঘোড়ায় চড়ে।
ভক্তদের বিশ্বাস, বিসর্জনের মধ্যদিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে যা তার বাবার গৃহ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।এদিকে বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়িয়ে যেতেই ভক্তরা বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার পূজামন্ডপ থেকে ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়া বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে শহরের করতোয়া নদীর এসপি ব্রিজ, দত্তবাড়ী, ফুলবাড়ী, চেলোপাড়াসহ বিভিন্ন ঘাটগুলোতে আসেন হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এরপর নেচে গেয়ে বিসর্জনের মাধ্যমে দেবীদুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা। এসময় রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে আনন্দময়ীর আগমনে গত ৯ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী পাঁচদিন বগুড়ার বিভিন্ন পূজামন্ডপ গুলোতে পূজা-অর্চণার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়।
বগুড়া পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন দিতে পেরেছি। বগুড়া শহরসহ পুরো জেলায় কোন রকম অসুবিধা হয়নি। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ বছর বগুড়ার ১২টি উপজেলায় ৬২৮টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে পৌর শহরে পূজার সংখ্যা ছিল ৭৩টি। সারাদেশে এবার ৩২হাজার ৬৬৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে লাগানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয় মণ্ডপ পাহারার জন্য।