পৃথিবীর সব দেশেই সরকারি কর্মচারীদের একটা চাকুরিবিধি মেনে চলতে হয়। তারা রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন না, রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দিতে পারেন না, সরকারের সমালোচনা করতে পারেন না। এই বিধির লংঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কখনও ছিল না, এখনও নয়। তবে খালেদা জিয়ার শাসনামলে এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছিলেন মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন এক দল সরকারি কর্মকর্তা। তারা নিজেদের প্রজাতন্ত্রের সেবক ঘোষণা দিয়ে যোগ দিয়েছিলেন জনতার মন্চে। এর জন্য শেখ হাসিনার শাসনামলে তারা পুরস্কৃতও হয়েছিলেন।হাসিনার শাসনামলে কোন সরকারি কর্মচারী সরকারের সমালোচনা করতে পারেনি। দুজন কর্মকর্তা কি যেন কবিতা লিখেছিলেন, তাতে সরকার বিরোধিতার ইঙ্গিত আবিস্কার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল, একজনকে বোধহয় কারাগারেও নেয়া হয়েছিল।

তবে সরকারের সমালোচনার অধিকার না থাকলেও সরকারি কর্মকর্তাদের সরকারের পক্ষে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে প্রচারণার অবাধ সুযোগ দেয়া হয়েছিল। শুধু তাদের পক্ষে প্রচারণা চালানোই নয় তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছিল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার। যে বক্তব্য একজন মন্ত্রীর দেয়ার কথা, সেই বক্তব্য দিতেন তার সচিব। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের ব্রিফিং-এ তো সর্বদা রাজনীতিই প্রাধান্য পেত। সত্যিকার অর্থে দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে যা নিয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। কিন্তু এই পরিসরে সে আলোচনা নয়।যা বলার জন্য এই লেখা তা হলো একজন সরকারি কর্মচারীর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। লালমনিরহাটের এই সরকারি কর্মকর্তা হঠাৎ বিস্ময়করভাবে সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের শহীদ আবু সাইদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সমালোচনা করে এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন। এটি তো নিশ্চিতভাবেই সরকারি চাকুরিবিধির স্পষ্ট লংঘন। এর জন্য তার বিরুদ্ধে সরকারকে তো ব্যবস্থা নিতেই হবে। সরকার তা নিয়েছে।

কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে মহল বিশেষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তারা রীতিমত আহাজারি করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। কিন্তু কেন? কোন যুক্তিতে তাদের এই ক্ষোভ প্রকাশ?