আবৃত্তি শিল্পের যাত্রাপথ
মিথুন আহমেদ
আবৃত্তি মূলত--শব্দ থেকে বাক্যের শ্রুতিকে উপস্থাপনের কলাবিদ্যা। চিন্তার বহু বিশ্লেষিত ধ্বনিরূপকে--স্বরের প্রক্ষেপণে ধী-পূর্ণ করে তোলে আবৃত্তি। -- এ হচ্ছে বোধ থেকে বোধনের অভিমুখী এক রূপান্তর ।
সাহিত্য কিংবা শুধু কবিতা, নতুবা অন্য কিছু--হতে পারে এমন সব কিছুরই,--টেক্সটুয়াল ফর্ম। মানুষ থেকে মানুষের কাছে বার্তা সংযোগে--যা ঐক্য গড়তে সমর্থন যোগায়--তা ই হয়ে উঠতে পারে আবৃত্তি।
আমরা এখন আবৃত্তি শিল্পের একটি কাঙ্খিত যাত্রাপথে অগ্রসর হচ্ছি। প্রান্তিক লোকালয়েও জনমুখী উদ্দীপনাকে যোগানী শক্তি দিচ্ছে আবৃত্তি শিল্প। গণআকাঙ্ক্ষা ও সামষ্টিক চেতনা অর্জনে আবৃত্তি আজ এক অপরিহার্য হাতিয়ার। বিরুদ্ধ প্রতিবেশ মোকাবেলা ও বৈরী পরিস্থিতিতে অধিকার আন্দোলনের--সমার্থক এক শিল্পীত রূপ হচ্ছে আবৃত্তি।
শিল্পের শাখায় আবৃত্তি আজ উচ্চারিত সত্য। বেলায়েত হোসেন এক শুদ্ধাচার শিল্পী। ব্যবহারিক জীবনেও তিনি নম্রবাদী ও শিষ্টাচার সম্পন্ন। সমৃদ্ধ রুচিতে বিনয়াবনত। আমাদের আবৃত্তির স্বজন তিনি। তিনি আমাদের সহোদর। একজন বৎসল- শিল্পীজন তিনি। সৃজন পরায়ণ এই মানুষটির প্রতি আমার আবেগবব্ধ দায় সবসময়ই পক্ষপাত প্রবণ। আবৃত্তির শিল্পগত ঋদ্ধতা নিয়ে তার পরিবেশনায় আমরা মুগ্ধতা খুঁজে পাই।
সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চার ঊষাকাল--আশির দশকের সূচনালগ্ন থেকে আমরা ও আমাদের শিল্পের স্বপ্নচারীরা যখন আবৃত্তিকে শিল্পের প্রতিষ্ঠায় নিয়ত সংকল্পবদ্ধ এবং পরবর্তীতে স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, সেনাতন্ত্রের অবসান ও সামরিক সরকার উৎখাতে একাগ্র এবং একতালিপ্ত--সেই সন্ধিক্ষণের অব্যবহিত দশকের অন্তভাগে--বেলায়েত হোসেন আবৃত্তি শিল্পের ময়দানে--আমাদের সাথে যুক্ত হোন।
পঁচাত্তর পরবর্তী বি-রাজনীতিকতার শাসনসভা--রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বাধীনতা বিরোধীদের অবস্থান--ধর্মাশ্রয়ীতা মৌলবাদীতা জঙ্গিবাদ,--আর আমরা হেঁটে গেছি সময় থেকে দুঃসময়ে--দুঃসময় থেকে আরেক দুঃসময়ে।
আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সময়ের তারুণ্য-প্রেম-কবিতা-রাজনীতিকতা আর আন্দোলিত আশি থেকে নব্বই দশক আজও আমাদের জীবনের তৃপ্তিতে ঐশ্বর্য বিছিয়ে রাখে।
আমাদের যৌবন তখন--স্বপ্নের রঙিন দোলনায় দোল দিয়ে দিয়ে পৌঁছে গেছে,--সম্মুখ-বাস্তবতায়। দ্রোহনের উত্তাপ টেনে নিয়ে গেছে মিছিলের মিলিত স্লোগানে। কবিতা আর দ্রোহ এসে মিশেছে--প্রানের স্পর্ধাপূর্ণ মোহনায়। তাই কবিতার সাথে--বিপ্লবের ভাগাভাগি করা একান্ত যাপনেও--একাকার হয়ে যাওয়ার এই সংসার বিরাগী জীবন--আজও এক অবিচ্ছেদ্য ও অমীমাংসিত সত্যের নাম।
আবৃত্তি শিল্প আজ স্বাস্থ্যবতী হয়েছে অনেক। আঙ্গিক ও পরিবেশনের কৌশলের দিক থেকে হয়েছে আরো বেশি সুঠাম ও সুশৃংখল। --বিপুল ও বহুলে সমৃদ্ধ হচ্ছে তার কর্ম প্রবণতা।
বোধের সমৃদ্ধি ও চিন্তার উৎকর্ষ অর্জনে--যদি কিছু প্রাপ্তি থেকে থাকে,-- তার অনেকটাই আবৃত্তি শিল্পের কাছ থেকে কর্য করে পাওয়া। আর এই ঋণের কিঞ্চিৎ কে পরিশোধ করবার মতো--যোগ্য বিনিময় আমাদের কাছে যে নেই, --তা তো নিশ্চিত।
যা কিছু সামান্য অভিজ্ঞান, আর যা কিছু ক্ষুদ্র উপলব্ধি--তার অনেকাংশেরই প্রাপ্তি ঘটেছে--আবৃত্তির চর্চা থেকে। আমাদেরকে আজো সমৃদ্ধ করে তোলে, আবৃত্তি শিল্পের অনুশীলন-স্মৃতি-স্বপ্ন-দ্রোহন। আর আমাদের জীবনের তারাই শ্রেষ্ঠ-সোদর--যারা আমাদের সেই শিল্পবন্ধু--যারা এখনো আমাদের বিরাজমান উপলব্ধিতে অন্তর্গত। আর তারাই তো রয়ে যায় অভিন্ন অন্তরে,--যারা অন্তভাগে অবিচ্ছেদ্য।
আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেন তাদেরই একজন-- শিল্পের প্রতি নিবিড় ও নিরলস তিনি। আবৃত্তির চলমান আন্দোলনের এক নির্ভীক অভিযাত্রী। কলাচর্চার আনন্দযজ্ঞে সাফল্য পিয়াসী ও অঙ্গীকারবদ্ধ নির্মোহ সওয়ারীর নাম বেলায়েত হোসেন। আজ নিউইয়র্কে তার একক আবৃত্তি সন্ধ্যা।
--শিল্পী কে আলিঙ্গন। --জানাই শুভকামনা !
অগ্রিম অভিনন্দন !
২৮ আগস্ট ২০২২ রবিবার
নিউইয়র্ক
আবৃত্তি শিল্পের যাত্রাপথ-- মিথুন আহমেদ
প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:২৬ এএম

সারাবাংলা রিলেটেড নিউজ

ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ স্কাউট কলাকোপা কোকিলপ্যারী উচ্চ বিদ্যালয়ের জান্নাতুল জেরিন

টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ পুলিশের যেকোনো উদ্যোগে অবদান রাখতে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশের জনগণ যে সহিংসতার শিকার হয়েছে তাতে আমরা হতবাক: কানাডা

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল -এ শেখ রাসেল দিবস উদযাপন

জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অংশীদার:সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ভারতে রপ্তানি হলো পাঙ্গাস মাছের পোনা।

দামুড়হুদায় এক প্রসূতির পাঁচ সন্তানের জন্ম

আদমদীঘিতে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পালিত