এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে : উত্তরের সীমান্তবর্তী বৃহত্তর কৃষি প্রধান জেলা নওগাঁ। এই জেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি আর কৃষিজাত পূণ্য থেকে। ধান-চাল, আম এবং শাকসবজিতে উদ্বৃত্ত এই জেলা। ধান-চাল এবং আমের পাশাপাশি এ জেলাই দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলার চাষের আবাদ। অন্যান্য ফসলের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কলা চাষ। অল্প খরচে ভালো ফলন আবার দামও বেশি, তাই কলা চাষে মনোযোগী হচ্ছেন অনেকেই। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব কলা ঢাকা, চট্টগ্রাম শহর'সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে এসব কলা সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কলা চাষ হয়েছে এক হাজর ২২০ হেক্টর। যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরে চাইতে ৮০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। গত মৌসুমী জেলায় কলার আবাদ ছিল এক হাজার১৪০ হেক্টর। আর বিগত মৌসুম গুলোতে ২০২০-২১ অর্থবছরে এক হাজার ৫৯ হেক্টর এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার৩৩ হেক্টর জমিতে কলাচাষ হয়েছিল। উপজেলা ওয়ারী কলার চাষ হয়েছে, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৭০ হেক্টর, রানীনগর ১২ হেক্টর, আত্রাই ৪০ হেক্টর, মান্দা ২৫৫ হেক্টর, মহাদেবপুর ১১০ হেক্টর, ধামইরহার ৩০০ হেক্টর, বদলগাছী ২৭৫ হেক্টর, পত্নীতলায় ৯৮ হেক্টর, সাপাহার ১৫ হেক্টর, পোরশা ৫ হেক্টর সহ নিয়ামতপুর ৪০ হেক্টর জমিতে সাগর, মানিক ও চিনি চম্পা জাতের কলার আবাদ হয়েছে।

বদলগাছী উপজেলার কলা চাষী জুয়েল হোসেন বলেন, আমার ৫ বিঘা জমিতে সাগর, মানিক ও চিনি চম্পা জাতে কাল চাষ করেছি। গত তিন বছর আগে আমি এক বিঘা জমিতে প্রাথমিকভাবে কলা চাষ শুরু করি। বছর শেষে ওই জমি থেকে খরচ বাদ দিয়ে আমি প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার আয় করছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে খরচের পরিমান ও পরিশ্রম কম এবং লাভ বেশি হওয়ার কারণে কলা চাষ করছি।

সাহাপার উপজেলার কলা চাষী আব্দুল আলিম বলেন, আমার এক বিঘা জমি পুকুর আছে আর সেখানে মাছের পাশাপাশি পুকুরপাড়ের পাড় দিয়ে মানিক জাতে কলা চাষ করেছি। মাছে লাভের পরিমাণ কম হলেও কলায় প্রচুর পরিমাণে লাভ হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর আগে পুকুরের পাড় দিয়ে কলার গাছ লাগিয়েছিলাম। এখন ওখান থেকেই বছরে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মত লাভ আসে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কলা একটি সম্ভাবনাময় ফসল। দেশে বছর জুড়েই এর চাহিদা ভালো থাকে। চলতি মৌসুমে এই জেলায় ১২২০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৮০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়।কলার আবাদে লাভ ভালো হওয়ার কারণে এই ফসলের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কলা চাষে কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করা গেলে দেশের কৃষিক্ষেত্রে কলাও অন্যতম ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।