এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে : সন্দেশ সাধারণত গোলাকৃতি ও চ‍্যাপটা হয়ে থাকে। তবে নঁওগায় বিশেষ ধরনের সন্দেশ পাওয়া যায়। যেটি লম্বাকৃতির দেখতে কিছুটা রোলের মত। এটি প‍্যারা সন্দেশ নামে পরিচিত। নঁওগায় গেছেন আর এই সন্দেশের স্বাদ নেননি, এমন লোক খুব কম আছে। প‍্যারা সন্দেশ নঁওগার  মানুষের কাছে প্রিয়। শুধু জেলায় নয়, জেলার বাইরে ও সুনাম রয়েছে এই সন্দেশের।

নঁওগার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের মালিক  ও কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের কালীতলা এলাকায় বুড়া কালীমাতা মন্দিরের পাশে বহু বছর আগে একটি মিষ্টির দোকান ছিল। সেই দোকানে ভোগের ( দেবতার জন্য উৎসগ‍্য করা খাবার ) মিষ্টি বিক্রি করা হতো। সেই দোকানের মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন মহেন্দ্র দাস নামের এক ব‍্যাক্তি।

ভারতের বিহার রাজ‍্য এলাকার কোন এক ব‍্যাক্তি নবাবের মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি। নবাবের মৃত্যুর পর তিনি নঁওগা শহরের কালীতলা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। মিষ্টি তৈরি করে নঁওগার বিভিন্ন মন্দিরে বিক্রি করতেন।তিনিই প্রথম প‍্যারা সন্দেশ প্রচলন করেন। মহেন্দ্র দাসের মৃত্যুর পর তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস কালীতলা মন্দিরের পাশে একটি মিষ্টি তৈরির কারিগর বিমল মোহন্তের হাতে স্পর্শে প‍্যারা সন্দেশের সুখ‍্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সেই প‍্যারা সন্দেশ উদযাপন ছাড়া অতিথি আপ‍্যায়ন কিংবা মুখবর উদযাপনের কথা ভাবতেই পারেন না এখনকার মানুষ, আত্মীয় -স্বজনের বাড়িতে ও নিয়ে যান এই মিষ্টি।স্বাদে- মানে প্রিয় " আদি গোপালের রসগোল্লা। স্হানীয় কয়েকজন মিষ্টির কারিগর বলেন, ধীরেন্দ্র নাথ দাস প্রায় ৩০ বছর ব‍্যবসা করার পর দোকান টি সুরেস চন্দ্র দাস নামের একজনের কাছে বিক্রি করে চলে যান, কিন্তু ততদিন অনেকেই প‍্যারা সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে নেন। সুরেশ তার দোকানের নাম দেন " মা নঁওগা প‍্যারা সন্দেশ"।এটাই নঁওগার সবচেয়ে পুরোনা মিষ্টির দোকান হিসাবে পরিচিত। বংশ পরস্পরায়  ব‍র্তমানে ওই দোকানের মালিক বৈদ‍্য রতন দাস (৫৫),  বৈদ‍্য রতন দাসের ছেলে সৈকত দাস বলেন, বংশ পরষ্পরায় প‍্যারা সন্দেশ তৈরি করে সরবরাহ করছি। বতর্মানে নঁওগার বেশ কয়েকজন প‍্যারা সন্দেশ তৈরি করলেও আমাদের দোকানের তৈরি প‍্যারা সন্দেশের খ‍্যাত বেশি। বতর্মানে আমাদের কারখানায় অনুমান ১০০ কেজি পযর্ন্ত প‍্যারা সন্দেশ তৈরি হয়ে  থাকে। আশ পাশের জেলা বগুড়া, জয়পুরহাট, রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি দোকানদার দের কাছে পাইকারি প‍্যারা সন্দেশ বিক্রি করে থাকি আমরা। ক্ষীর - চিনিতে বানানো সরিষাবাড়ির প‍্যারা একটু বেশিই মিষ্টি।

প‍্যারা সন্দেশ তৈরির কৌশল ও উপকরণ সম্পর্কে সৈকত দাস জানান, প‍্যারা তৈরির পদ্ধতি খুবই সহজ। এক কেজি  প‍্যারা সন্দেশ তৈরির করতে দরকার হয় প্রায় ৬ লিটার তরল দুধ। এর সঙ্গে ১ কেজি চিনি তৈরি যোগ করতে হয়। প্রথম ধাপে তরল দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে  জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ক্ষীর। দুধ ও চিনির মিশ্রনে তৈরি ক্ষীর দুই হাতের তালু দিয়ে রোল করে সামান্য চাপ দিলেই তৈরি হয়ে যায় প‍্যারা সন্দেশ। প্রতিটি প‍্যারা সন্দেশ প্রায় আধা ইঞ্চি চওড়া ও দুই ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

নঁওগার প‍্যারা সন্দেশ কেজি বতর্মানে ৪০০-৫০০ টাকা। বদলগাছির " দাদুর সন্দেশ  মন ভোলায় সবার"। নঁওগা শহরের ব্রীজের মোড় এলাকায় অবস্হিত নঁওগা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হক বলেন, সাধারণত অন‍্যান‍্য মিষ্টির তুলনায় প‍্যারা সন্দেশের দাম বেশি। তার পর এই মিষ্টি প্রচুর বিক্রি হয়। কারন এর সঙ্গে সুখ‍্যাতি ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে।