কেন্দ্রের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে রাবি ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জায়গা হলো মাত্র একটি পদে! তাও আবার ১৮ জন সহ-সম্পাদকের মধ্যে সবার শেষে! যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছে ২২৬ জন নেতা। এ যেন অবজ্ঞা আর অবহেলার বড় নজির স্থাপন করলো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। না কি যোগ্যতার মাপকাঠিতে গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটের সকল নেতাই 'তাল পাতার সেপাই'? বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পাওয়াতে রাবি ছাত্রলীগের অনেক নেতা-নেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ফুলপরীকে নির্যাতন: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রী বহিষ্কারফুলপরীকে নির্যাতন: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রী বহিষ্কার রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এ মূল্যায়নে বেশ অসন্তোষ। তাদেরকে অপমানিত ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। অনেক ভালো মূল্যায়ন পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন তারা। তারা বলছেন, শিবিরের চোখ রাঙানো উপেক্ষা ও লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় এই ইউনিটে। এখানকার নেতাকর্মীরা ত্যাগের রাজনীতি করে থাকে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে মাত্র একজন নেতাকে পদ দেওয়া মানে এই ইউনিটকে অবজ্ঞা করার সামিল।
তবে কেউ কেউ মনে করেন কেন্দ্রে পদ পাওয়ার মতো কোনো নেতাই নেই। তারা বলছেন, দীর্ঘ দিন নতুন কমিটি না হওয়ায় রাবি শাখার কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে। নেতা-কর্মী সংকটে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না এই শাখা। রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকের প্রতি আস্থা নাই তাদের। অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত। কেন্দ্রে পদ না পাওয়া প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে মনে করছেন তারা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যা তেমন একটা ছিল না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাবি শাখা ছাত্রলীগের হল কমিটির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী পদ প্রত্যাশা করেছিলেন; কিন্তু এদের কাউকেই পদায়ন করা হয়নি। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মূলত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের যোগাযোগের অভাবের কারণেই শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত মূল্যায়ন করা হয় না। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে, রাবি শাখা ছাত্রলীগ থেকে ত্যাগী ও দক্ষ নেতাকর্মীও তৈরি হচ্ছে না। রাবিতে ভর্তিচ্ছুদের বড় অনুপ্রেরণা নীল-সাদা বাসরাবিতে ভর্তিচ্ছুদের বড় অনুপ্রেরণা নীল-সাদা বাস রাবি ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, 'যে ইউনিটে ৮ বছরে নতুন কমিটি হয় সে ইউনিট থেকে কীভাবে কেন্দ্রীয় ভাইটাল পোস্ট পাওয়ার মতো নেতৃত্ব তৈরি হবে। মেরুদণ্ড ও কর্মীহীন অবহেলিত ইউনিট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রে যারা পদ পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি ও রাজনীতি করছে তাদের মধ্যে শুধু রুবেল ভাই সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পাওয়ার যোগ্য, আর বাকি সব হলের নেতা। তাহলে কাকে কেন্দ্রে পদ দেবে? কিবরিয়া (সভাপতি), রুনুকে (সম্পাদক)? তারাতো ৮ বছর থেকে খাচ্ছেই, পৃথিবীর সব কি দেবে ওদের? দুনিয়া কি এতটাই সহজ?' এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক এবি হোসেন লিখেছেন, 'বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত দূরত্ব ২৪৬.৩ কিমি। কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত আলো পৌঁছাতে পারেনি। তাই আমাদের প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি পড়েনি। রাবির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও একইসাথে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সাংগঠনিক ইউনিটে জীবন-যৌবন সবটুকু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিশ্রম করে ছাত্রলীগ করা নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন ও অপমান করায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল আপনাদের।'
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শিবিরের সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছে। এখানে যে ত্যাগের রাজনীতি হয়ে থাকে, সেই হিসেবে আরও মূল্যায়ন পাওয়া উচিত ছিল। আমাদের এখানের অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশী ছিলেন; কিন্তু আমরা দেখলাম মাত্র একজনকে সেখানে স্থান দেওয়া হয়েছে।' একাত্তরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়একাত্তরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান গণমাধ্যমকে বলেন, 'এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি নিজেও ঢাকার না, ঝালকাঠির; কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতিও রাজধানীর নয়, তিনি পঞ্চগড় থেকে এসেছেন। কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে আমরা চেয়েছি যেন দেশের সকল প্রান্তের প্রতিনিধিত্ব থাকে। এখানে কে কোন ক্যাম্পাসের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।'