নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বুধবার (২৮ জুন)
নিউইয়র্ক সহ উত্তর আমেরিকার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন হয়েছে।
ঈদুল আযহা মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আযহা
উদযাপনের অন্যতম প্রধান কর্মকান্ড হ”েছ ঈদের নামাজ আদায় করার পর
সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী। চমৎকার আবহাওয়ায় জ্যামাইকা
মুসলিম সেন্টার-জেএমসি’র আয়োজনে নিঊইয়র্কে সবচেয়ে বড়
ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিস্টদের ধারণা জেএমসি’র ঈদের
জামাতে সর্বস্তরের ১২/১৫ হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কের
মসজিদগুলো ছাড়াও কোথাও কোথাও খোলা মাঠে ঈদের জামাত হয়েছে।
মসজিদ আল আলাফা (আরাফা ইসলামিক সেন্টার) ও আমেরিকান
মুসলিম সেন্টার (এমসি) এর উদ্যোগে জ্যামাইকায় আলো দুটো
মাঠে ঈদের জামাত হয়েছে। এই দুই জামাতেও শত শত নারনারী ঈদের
নামাজ আদায় করেছেন। 
নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত অন্যতম
শীর্ষ  স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার 
(জেএমসি)-এর উদ্যোগে ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়
স্থানীয় টমাস এডিসন হাইস্কুল মাঠে সকাল সোয়া টটার দিকে। এই
জামাতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত
সর্বস্তরের শত শত পুরুষ-মহিলা নামাজে অংশ নেন। এটিই ছিলো
নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত। সংশ্লিস্টদের
ধারণা জেএমসি’র ঈদের জামাতে সর্বস্তরের ১২/১৫ হাজার লোক
অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেণ ড.
মনিরুল ইসলাম এখানে ঈদের নামাজ আদায় ও মসুল্লিদের সাথে শুভেচছা 
বিনিময় করেন। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে প্রবাসী
ও দেশবাসীর সহ জাতির কল্যাণ এবং করোনামুক্ত বিশ্ব কামনা করা হয়।

জেএমসি আয়োজিত ঈদের জামাতে ইমামতি এবং বিশেষ মুনাজাত
পরিচালনা করেন জেএমসি’র খতিব ও ইমাম মওলানা মির্জা আবু জাফর
বেগ আর খুৎবা পাঠ করেন শেখ জুনায়েদ। নামাজের আগে উপস্থিত
মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে শুভেচছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক ষ্টেট 
অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রীন। এছাড়াও শুভেচছা বক্তব্য রাখেন
জেএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান এবং  
ট্রাষ্টিবোর্ডেও ভাইস চেয়ারম্যান ডা. নাজমুল খান। এই পর্ব
পরিচালনা করেন জেএমসি’র সেক্রেটারী আফতাব মান্নান
আমেরিকান মুসলিম সেন্টার (এএমসি)-এর উদ্যোগে ঈদুল আযহার
৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি জামাত হয় অনুষ্ঠিত হয়
মসজিদ ভবনে যথাক্রমে সকাল ৬টা, ৭টা, ৮ট ও ৯টায়। এরপর চতুর্থ ও পঞ্চম
জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকার রুফস কিং পার্কে যথাক্রমে সকাল
৯টা এবং সকাল ১০টার দিকে। তবে এখানকার চতুর্থ জামাত আদায়ের
সময় ইমামের অসাবধানতাবশত ভুলের কারণে দু’বার নামাজ আদায় করতে
হয়। এনিয়ে কয়েকজন মুসল্লি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
জ্যামাইকার মসজিদ আল আলাফা (আরাফা ইসলামিক সেন্টার)-এর
উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে
৮টায় স্থানীয়  সুসান বি এš’নী স্কুলের খোলা মাঠে। এতে ইমামতি
করেন ইমাম মোহাম্মদ শোয়েব। এখানে সর্বস্তরের শত শত পুরুষ ও মহিলা
জামাতে অংশ নেন।
জ্যামাইকার ‘হাজী ক্যাম্প মসজিদ’ নামে পরিচিত মসজিদ মিশনে
ঈদুল আযহার ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৬টায়,
সকাল সাড়ে ৭টা, সকাল সাড়ে ৮টা ও সকাল সাড়ে ৯টায়।
জামাতগুলোতে ইমামতি করেন যথাক্রমে হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হাফেজ
তানভিরুল ইসলাম, মওলানা মঞ্জুরুল করীম ও হাফজ মারওয়ান।
ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদের উদ্যোগে মসজিদ ভবনে ঈদের দুটি
জামাত হয় যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৮টায় ও সাড়ে ৯টায়।
ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টার জামে ঈদুল আজহার দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়
মসজিদ ভবনে যথাক্রমে সকাল ৮ ও সকাল ৯টায়। এত ইমমিতি করেন
যথাক্রমে মসজিদের ইমাম জুবাইর রশিদ ও মোয়াজ্জিন মওলানা নূরুল
ইসলাম।
এস্টোরিয়ার আল আমীন জামে মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার-এ ঈদুল
আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয় ৩৬ ও ৩৭ এভিনিউর মাঝে খোলা রাস্তায়
সকাল ৮টায়। ইমামতি হাফেজ মওলানা লুৎফর রহমান চৌধুরী। এতে কয়েক

হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন বলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির
সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান।
এছাড়াও নিউইয়র্কের জ্যামাইকার ইকনা মসজিদ, দারুস সালাম
মসজিদ, ফুলতলি সিলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক
সেন্টার, সানিসাইড মসজিদ, এস্টোরিয়ার গাউসিয়া মসজিদ,
ব্রæকলীনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, বায়তুল জান্নাহ ইসলামিক
সেন্টার, ওজনপার্কের আল আমান মসজিদ, আল ফুরকান জামে মসজিদ ও
ফুলতলী জামে মসজিদ সহ অন্যান্য মসজিদের উদ্যোগে ঈদের জামাত
অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী,
কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও,
ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া,
মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে যথাযোগ্য
মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার
খবর পাওয়া গেছে। নিউজার্সী রাজ্যের পেটারসনে অবস্থিত ইসলামিক
ফাউন্ডেশন অব নিউজার্সীর জালালাবাদ মসজিদের উদ্যোগে স্থানীয় 
হিলচাল ফি স্টেডিয়ামে ঈদের জামাত হয় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে।
প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীন, ছোট-বড়, সকলকে ঈদের
শুভে”ছা বিনিময় আবার অনেকে কোলাকুলি করেও ঈদের শুভে”ছা বিনিময়
করেন। আবার অনেকে স্বপরিবারে বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের
বাসা-বাড়ীতে গিয়ে ঈদের শুভে”ছা বিনিময় করেন। এছাড়া প্রবাসীরা
ফোনে বাংলাদেশে ফোন করে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভে”ছা বিনিময়
করেন। শুভে”ছা বিনিময় হয় ফেসবুক আর টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা
কমিটির উদ্যোগে সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যব¯’া। ঈদের
নামাজ আদায়ের ¯’ানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং এর
ব্যব¯’া থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা সপরিবারে
ঈদের নামাজে শরীক হন। রং বেরং এর বাহারী পোশাক গায়ে নামাজিদের
একত্রে ঈদের নামাজ আদায় ভীন দেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেই
সাথে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিনটি উইক ডে হলেও
বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীকেও ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা
যায়।
অপরদিকে গ্রোসারীর মাধ্যমে অনেকেই মহান আল্লাহতায়ালার সš‘ষ্টির
জন্য খাসী ও গরু কোরবানী দেন। কোরবানীর মাংস হাতে পাওয়ার পর

সেই মাংস আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বাসায় গিয়ে
বিতরণ করা হয়।