মরিয়ম চম্পা : হঠাৎ করেই অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সোনায় মোড়ানো জিলাপির। পাঁচ তারকা হোটেলটিতে অন্য বছরের মতো এবারো ইফতারে বিশেষ আয়োজন ছিল সোনায় মোড়ানো জিলাপি। প্রতি কেজি জিলাপির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। নতুন করে বিক্রির আদেশ তারা আর নিচ্ছে না। গত সোমবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের নিজস্ব ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এমনই ঘোষণা দেয়া হয়। গত সপ্তাহে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সোনায় মোড়ানো জিলাপি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল হোটেল কর্তৃপক্ষ। গত ৪ঠা এপ্রিল মঙ্গলবার দেয়া ওই পোস্টে বলা হয়, বিশেষ এই জিলাপির প্রতি কেজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এর মাত্র সাত দিনের মাথায় আরেকটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে হোটেলটির কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা আর জিলাপির অর্ডার নিচ্ছে না। গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ‘গোল্ড জিলাপি সোল্ড আউট’। সোনার ফয়েলে আবৃত (লিফ) জিলাপি বিক্রি শেষ হয়েছে। প্রতি কেজি জিলাপিতে ২৪ ক্যারেটের খাওয়ার উপযোগী সোনার ২০ থেকে ২২টি লিফ বা অংশ থাকবে, এমন কথা জানিয়েছিলেন হোটেলের কর্মকর্তারা। একজন গ্রাহকের জন্য ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম জিলাপি কেনার সুযোগ ছিল। তারকা হোটেলে প্রথমবারের মতো বিক্রি করা সোনায় আবৃত জিলাপির বিক্রি হঠাৎ করে কেন বন্ধ করা হলো।
কারা এই বিশেষ জিলাপি ক্রয় করতেন এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে সমালোচনা। চিকিৎসকরা বলছেন সোনায় মোড়ানো এ ধরনের খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এ বিষয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালে গেলেও কেউ সরাসরি কথা বলতে রাজি হয়নি। তারকা হোটেলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আধুনিকায়নের এই যুগে মানুষ দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি তাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তন বিশেষ করে নতুন খাবারের প্রতি বেশ আগ্রহী। বিশেষ করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে যাদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে তারাই এই সোনায় মোড়ানো বিশেষ এই জিলাপির ক্রেতা। বিশেষ এই জিলাপি তারকা হোটেল কর্তৃপক্ষ তৈরি করলে এর ওপরে মোড়ানো সোনার ফয়েল পেপার বা পাতলা সোনার প্রলেপ মূলত বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। সোনার প্রলেপ শেষ হওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নতুন করে সোনার ফয়েল আমদানি না করা পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ থাকবে। রমজানে নতুন করে এই বিশেষ জিলাপি আবার বিক্রি হবে কিনা জানতে চাইলে হোটেল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে শুধু রমজানেই নয় সবকিছু ঠিক থাকলে বছরের অন্য সময় এই ধরনের জিলাপি বিক্রি করা হতে পারে। এখন পর্যন্ত কি পরিমাণে জিলাপি বিক্রি হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেল বিপণন বিভাগ সূত্র জানায়, খাবার উপযোগী সোনা নিয়ে আসা হয় বিদেশ থেকে। আর আগে থেকে কেউ অর্ডার করলে এই সোনায় মোড়ানো জিলাপি তৈরি করে সরবরাহ করা হতো। ইতিমধ্যে এই জিলাপি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিনই এই জিলাপির স্বাদ নিতে অনেকেই অর্ডার করতেন। মূলত ঘিয়ে ভাজা জিলাপির ওপর সোনার প্রলেপ দিয়ে দেয়া হয়। এত মানুষ এই জিলাপি কিনতে আসবেন, যা ছিল বিস্ময়কর। গত রোববার অর্ডার করা জিলাপি পরদিন সোমবার ডেলিভারির মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে সোনায় মোড়ানো জিলাপি বিক্রি। ঢাকার একটি হোটেলে সোনায় মোড়ানো জিলাপি বিক্রি হচ্ছে এমন সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করে কেউ কেউ সমালোচনাও করেছেন। এ বিষয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাবলিক রিলেশন অফিসার (মিডিয়া) সেইতা মানবজমিনকে বলেন, এই বিশেষ ধরনের জিলাপি ক্রয় করতে আগে থেকে যারা অর্ডার করেছিলেন তাদেরকে দেয়ার পর এটি সোল্ড আউট হয়ে যায়। জিলাপি বানানোর জন্য যে পরিমাণ উপকরণ (খাওয়ারযোগ্য সোনা) বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছিল তা শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আর অর্ডার নেয়া হচ্ছে না। রমজানের মধ্যেই নতুন করে আবার বিশেষ এই জিলাপি বিক্রি করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ক্রেতা এবং বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এখন পর্যন্ত কি পরিমাণ জিলাপি বিক্রি হয়েছে সেটা বলার সুযোগ নেই। এখানে বিভিন্ন ধরনের ক্রেতারা আসতেন। তবে তাদের পেশা বা পরিচয় জানাটা হোটেল কর্তৃপক্ষের কাজ নয় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, এটা নিঃসন্দেহে সামাজিকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই ধরনের জিলাপির গ্রাহক বা ক্রেতা কারা ছিলেন সেটা চিহ্নিত করা হোক। আমি মনে করি সমাজে যাদের হাতে প্রচুর অবৈধ অর্থ এবং কালো টাকা রয়েছে তারাই মূলত এ ধরনের বিলাসী খাবারের ক্রেতা ছিলেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক উপায়ে নানান ধরনের ধাতব পদার্থ রয়েছে যেটা শরীরের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু কোনো খাবারের সঙ্গে এভাবে সরাসরি সোনার পাত যতই খাবার উপযোগ বলা হোক না কেন এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। জিলাপির সঙ্গে এ ধরনের সোনার ধাতব পদার্থ খেলে সেটা লিভার, ব্রেইন, কিডনি থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।