নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় নিউইয়র্কে সনাতন
ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত
হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর, শুμবার থেকে তিথি অনুযায়ী নিউইয়র্ক সহ
যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। শুক্রবার ছিল মহাষষ্ঠী, শনিবার
মহাসপ্তমী, রোববার মহাঅষ্টমী এরপর মহানবমী এবং বিজয়া দশমী। মূলত:
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
দূর্গোৎসব উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবছরো নিউইয়র্ক
সিটিতে একধিক পূজা মন্ডপ স্থাপিত হয়। প্রতিটি মন্ডপেই পূজা
অর্চনার পাশাপাশি ছিলো আরতী, উলু ও শঙ্খধ্বনি প্রতিযোগিতা,
সিঁদুর দান উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণ প্রভৃতি।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস ছাড়াও ষ্টেট
অ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার, সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর
কৃষ্ণান ছাড়াও সিটি প্রশাসনের অফিসিয়ালগণ বিভিন্ন পূজা
মন্ডপে গিয়ে সনাতন ধর্মাবম্বীদের শুভেচ্ছা জানান এবং কুশল বিনিময়
করেন। এদিকে দূর্গোৎসব উপলক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে
উৎসবমুখ পরিবেশ বিরাজ করে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিভাবকগণ
পূজা মন্ডপে গিয়ে অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেন। এছাড়াও আয়োজন হয় শাদ
মেলা’র। 
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বেদান্ত সোসাইটি,
সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, ইউএসএ, ওম শক্তি মন্দিও, আমেরিকান
বাঙালী হিন্দু ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সংগঠনগুলোর বাইরেও আরো বেশ
কয়েকটি সংগঠন ও মন্দির দুর্গোৎসবের আয়োজন করছে। সংশ্লিস্টদের
মতে নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দুই ডজনাধিক
পূজা মন্ডপে দূর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছরের মতো সনতান ধর্মালম্বীদের সাথে সৌহার্দ-সম্প্রতির
লক্ষ্যে অন্যান্য ধর্মের নারী-পুরুষকেও বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন এবং

শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। এদিকে বাংলাদেশ পূজা সমিতি অব
নিউইয়র্ক আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর সিটির ফ্রেশ মেডোর গুজরাটি
সমাজ হলে দুর্গা পূজার আয়োজন করবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ: সিটির উডসাইডের গুলশান ট্যারেসে
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শারদীয় দুর্গোৎসনের আয়োজন করে। গত
২০ অক্টোবর, শুμবার থেকে শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর সোমবার পর্যন্ত ছিলো
পূজার অনুষ্ঠানমালা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র এরিক
অ্যাডামস। মেয়র অ্যাডাম গত ২২ অক্টোবর রোববার পূজা মন্ডপ পরিদর্শন
করেন। মেয়র পূজা মন্ডপে পৌছলে তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং
তার কপালে টিপ আর হাতে রাখি বেধে দেয়া হয়। এসময় মেয়রের সাথে
ছিলেন ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার, মেয়রের উপদেষ্টা
দিলীপ চৌহান, ফাহাদ সোলায়মান, ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা ড. দিলীপ
নাথ প্রমুখ।
শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত সংঘঃ নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার ৮৭-৩৫ ১৬২
ষ্ট্রিটের নিজস্ব মন্দির শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে
শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত সংঘ’র আয়োজনে এবারের দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
এখানে গত ২০ অক্টোবর, শুμবার থেকে শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর সোমবার
পর্যন্ত ছিলো পূজার অনুষ্ঠানমালা। সোমবার বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে
দুর্গোৎসব শেষ হয়।
বাংলাদেশ বেদান্ত সোসাইটিঃ জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি হলে ২১ ও
২২ অক্টোবর যথাμমে শনি ও রোববার বেদান্ত সোসাইটি আয়োজনে
দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি
পূর্ণ চন্দ্র মুখার্জি ও সাধারণ সম্পাদক রীনা সাহা। এই
দুর্গোৎসবের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো প্রতিদিনই আরতী, সিদঁর
খেলা, প্রসাদ বিতরণ প্রভৃতি। পূজায় পৌরহিত্য করেন টিটন
আচার্য। এতে শিল্পী অলোক রায় চৌধরী, বিপ্লব মুখার্জি, চন্দ্রা রায়,
রোকসানা মির্জা, মরিয়ম মারিয়া, শামিম সিদ্দিকী, রুনা রায়,
দেবশ্রী প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বিভিন্ন পর্ব পরিচালনায়
ছিলেন অসিম সাহা, মৌ মধুবন্তী ও শারমিন রেজা ইভা।
সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, ইউএসএঃ উডসাইডের দিব্যধাম
সেবাশ্রম মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করে সার্বজনীন
পূজা উদযাপন পরিষদ, ইউএসএ। শুμবার থেকে শুরু হওয়া পূজা চলে মঙ্গলবার
পর্যন্ত। বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হয় দুর্গোৎসব। দিব্যধাম
সেবাশ্রম মন্দিরের দুতলায় প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত ১১টা

পর্যন্ত ছিলো পূজার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা। উল্লেখযোগ্য
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো প্রসাদ বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আমেরিকান বাঙালী হিন্দু ফাউন্ডেশনঃ আমেরিকান বাঙালী হিন্দু
ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জ্যামাইকার মহামায়া মন্দিরে দুর্গোৎসব
অনুষ্ঠিত হয়। ২০ অক্টোবর শুμবার থেকে শুরু করে ২৩ অক্টোবর সোমবার
পর্যন্ত চলে পূজার কর্মকান্ড। বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হয়
দুর্গোৎসব।
বেঙ্গলি ক্লাব ইউএসএঃ জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায়
দূর্গা পূজার আয়োজন করে বেঙ্গলি ক্লাব ইউএসএ। গত ২০ অক্টোবর
থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজন চলে ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত।
ওম শক্তি মন্দির: জ্যাকসন হাইটসের ওম শক্তি মন্দিরে আয়োজিত
দূর্গোৎসবের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো পুষ্পাঞ্জলী, আরতী, প্রসাদ
বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। এখানে পূজা পরিচালনা করেন
প্রভাস চক্রবর্তী ও রনজিত ভাদুরী। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে
আগত বাউল কালা মিয়া, মেহরুন আহমেদ, বিন্দু কনা, অমিত পাল,
ঐন্দ্রিলা দাস, কৃষ্ণা তিথি, ত্রিনিয়া হাসান, শাহ মাহবুব, বিপ্লব
মুখার্জী, ঋত্বিকা ব্যানাজী, শোভিত রায় চৌধুরী প্রমুখ। নৃত্য
পরিবেশন করেন মৌমিতা সহ অনুপ দাস ড্যান্স একাডেমীর শিল্পীরা।
আমেরিকান বাঙালী হিন্দু ফাউন্ডেশন: জ্যামাইকার মহামায়া মন্দিরে
দূর্গাপুজার আয়োজন করে আমেরিকান বাঙালী হিন্দু ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানমাল মধ্যে ছিলো পূষ্পাঞ্জলী, আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,
প্রাসাদ বিতরণ প্রভৃতি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে
অনুষ্ঠানমালা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পী কুন্ডু, জলি দাস, তমা
চক্রবর্তী প্রমুখ সঙ্গীত পরিবশেন করেন।